বাংলা বন্ড: তিন খাতে যাবে বন্ডের টাকা

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ। ছবি: রয়টার্স  মেটা:
লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ। ছবি: রয়টার্স মেটা:

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে (এলএসই) প্রথমবারের মতো তালিকাভুক্ত ‘বাংলা বন্ডের’ মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের বেসরকারি খাতসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৬ টাকার হিসাবে বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৬৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পুরো অর্থ পাবে দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপ। ব্যবসা সম্প্রসারণে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইউনিটের জন্য এ অর্থ পাবে গ্রুপটি।

প্রথমবারের মতো সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় এ বন্ডটি ইস্যু করেছে আইএফসি। প্রথম দফায় বন্ডটি বিক্রি করে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১৯ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। বন্ডটি ইস্যুর সঙ্গে জড়িত আইএফসির কর্মকর্তারা বলছেন, ধাপে ধাপে এ বন্ডের মাধ্যমে আরও অর্থ সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত এসব অর্থ বিনিয়োগ হবে দেশের তিনটি খাতে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী, যথাযথভাবে যাচাই–বাছাইয়ের পর আইএফসি বন্ডের অর্থ বিনিয়োগ করবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। ব্যক্তি পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রথম দফায় বন্ডের মাধ্যমে ১৯ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহের পর দ্বিতীয় দফায় আরও ৩০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহে কাজ শুরু করেছে আইএফসি। এ বন্ড ইস্যুর সঙ্গে জড়িত আইএফসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে দ্বিতীয় দফায় বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

প্রথম দফায় বাংলা বন্ডে যারা বিনিয়োগ করেছে, তাদের জন্য সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর সংগ্রহ করা অর্থ ৯ দশমিক ৭ শতাংশ সুদে প্রাণ গ্রুপকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক অব আমেরিকা ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। 

জানতে চাইলে আইএফসির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মাশরুর রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দফায় ‘বাংলা বন্ডে’ যারা বিনিয়োগ করেছে, তাদের বেশির ভাগই ইউরোপের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। এ বন্ডে সরাসরি ব্যক্তি বিনিয়োগকারী বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারী বা প্রবাসী বাংলাদেশিরা চাইলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন।

মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, বন্ডের সুদ পরিশোধ হবে টাকায়। বিনিয়োগকারীরা তা তাদের সুবিধামতো মুদ্রায় রূপান্তর করবে। ফলে মুদ্রার বিনিময়জনিত ঝুঁকি বিনিয়োগকারীরা নিজেরাই বহন করবে। 

আইএফসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলা বন্ডের মাধ্যমে বিদেশ থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হবে, তা বিনিয়োগ করা হবে মূলত তিনটি খাতে। খাত তিনটি হচ্ছে আবাসন, ক্ষুদ্রঋণ ও এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প)। সুদের হার নির্ধারিত হবে বাজারভিত্তিক। প্রথম দফায় তিন বছরের জন্য এ বন্ড ইস্যু করা হলেও ধীরে ধীরে এটির মেয়াদ বাড়ানো হবে। 

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ডটি তালিকাভুক্ত হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা চাইলে যেকোনো সময় তাদের হাতে থাকা ইউনিট বাজারে বিক্রি করতে পারবে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ডের কেনাবেচা খুব ভালো হয়। তাই যেকোনো সময় বিনিয়োগকারীরা এ বন্ড বিক্রি করার সুযোগ পাবে। 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চালু হওয়া এ বন্ডে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়নি। তবে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায় আইএফসি এ বন্ড ইস্যু করেছে।