কর মেলার শেষ দিন আজ

রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে এনবিআর আয়োজিত কর মেলার ষষ্ঠ দিনে ফরম পূরণ করছেন করদাতারা।  ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ
রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে এনবিআর আয়োজিত কর মেলার ষষ্ঠ দিনে ফরম পূরণ করছেন করদাতারা। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ

বেলা দুইটা। মগবাজার মোড় থেকে বেইলি রোড পর্যন্ত তীব্র যানজট। রাজধানীবাসীর কাছে এই ধরনের যানজটের চিত্র অপরিচিত নয়। কিন্তু এ যানজটের কারণ ভিন্ন। পথচারীদের অনুসরণ করতেই দেখা গেল, প্রায় সবার গন্তব্য বেইলি রোডের দিকে। আবার মগবাজার উড়ালসড়কের পাশাপাশি এর নিচের ফুটপাত ধরেও অসংখ্য মানুষ হাঁটছেন। তাঁদেরও অধিকাংশেরই গন্তব্য বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবের কর মেলা।

ডিএমপি প্রধান কার্যালয়ের কাছাকাছি গিয়ে ভিড়ের কারণে ফুটপাত ধরেও হাঁটা যাচ্ছে না। ফুটপাতের পাশে সড়ক ধরে বহু নারী-পুরুষ অফিসার্স ক্লাবমুখী। সবাই কর দিতে যাচ্ছেন। এই চিত্র শুধু এই একটি সড়কেই নয়, শান্তিনগর থেকে বেইলি রোড; কাকরাইল থেকে অফিসার্স ক্লাব এবং ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে অফিসার্স ক্লাব—সব পথেই ভিড়। ফলে সব রাস্তায় যানজট। এই ছিল গতকাল কর মেলার আশপাশের দৃশ্য।

কর মেলার প্রধান ফটক পেরিয়ে অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে ঢুকতেই দেখা গেল উপচে পড়া ভিড়। সবাইকে লাইন ধরেই মেলায় প্রবেশ করতে হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ সত্যিকার অর্থেই করদাতাদের পদচারণে সরগরম হয়ে উঠেছে।

এবার একটু ঢুঁ মারলাম অফিসার্স ক্লাবের সবুজ প্রাঙ্গণের বিশাল তাঁবুতে। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল চারপাশে শুধু করদাতার সমাগম। শত শত করদাতা মেঝেতে বসে ফরম পূরণ করছেন, কেউ কেউ সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে ফরম পূরণ করছেন। এরপর গেলাম অফিসার্স ক্লাবের মূল মিলনায়তনে। সেখানে রিটার্ন জমা নেওয়া হয়। কর অঞ্চলভিত্তিক বুথের সামনে বড় লাইন, করদাতাদের ফরম পূরণ করার পর এখন রিটার্ন জমা দেওয়ার পালা। অবশ্য এর আগে অনেকে কর মেলায় গিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে কর পরিশোধের জন্য পে অর্ডার করেছেন।

গতকাল ছিল কর মেলার ষষ্ঠ দিন। সাত দিনব্যাপী মেলার শেষ বেলায় করদাতাদের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ মুখর। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গতকাল করদাতাদের এমন ভিড় ছিল। রাজধানীর কর মেলায় এবার বিশেষ করে তরুণ ও নারী করদাতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব করদাতার জন্য স্থাপিত আলাদা বুথে সারা দিনই কমবেশি লাইন ছিল। তবে সব মিলিয়ে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ শেষ করা সম্ভব।

আজ মেলা শেষ হয়ে যাবে। শেষ দিনে যতক্ষণ কর মেলায় করদাতারা উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মিরপুর থেকে আসা মতিউন নূরের সঙ্গে। তরুণ এই করদাতা ছোটখাটো ব্যবসা করেন। মেলায় রিটার্ন দাখিল করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তরুণ করদাতারা কর দিতে চান। এ জন্য তাঁদের হয়রানিমুক্ত সহায়ক পরিবেশ দিতে হবে। মেলায় সেই পরিবেশ আছে। তাঁর মতে, যানজট পেরিয়ে মিরপুর থেকে বেইলি রোডে আসতে হয়েছে। রাজধানীতে দুটি কর মেলা হলে ভালো হয়।

এ বছর রাজধানী ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি ৫৬টি জেলা, ৫৬টি উপজেলাসহ মোট ১২০টি স্থানে কর মেলার আয়োজন করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই কর মেলার আয়োজন করেছে।

আদায় দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে
সারা দেশের বিভিন্ন কর মেলায় গতকাল রিটার্ন দাখিল করেছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ১৪৫ জন। আর সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮১৫ জন বিভিন্ন ধরনের সেবা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই–টিআইএন) নিয়েছেন ৫ হাজার ৩২৫ জন।

গত ছয় দিনে দেশের বিভিন্ন কর মেলা থেকে মোট ২ হাজার ১৬ কোটি টাকার কর আদায় হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯১০ জন করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত মোট ১৫ লাখ ১২ হাজার ৫৯২ জন কর মেলায় বিভিন্ন সেবা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ই–টিআইএন নিয়েছেন ২৬ হাজার ৮৩১ জন। তাঁরা নতুন করদাতা। গতকাল মঙ্গলবার এনবিআরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব
তথ্য জানা গেছে। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আজ মেলার শেষ দিনে বিভিন্ন ব্যাংকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আয়কর দেবে।

এনবিআরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মানুষ এখন কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই স্বাচ্ছন্দ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। এবারের মেলায় নারীদের উপস্থিতি বেশ উৎসাহব্যঞ্জক।

মেলায় করদাতারা আয়কর বিবরণীর ফরম থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক বুথও পাচ্ছেন। করদাতাদের সহায়তা করার জন্য আছে সহায়তা কেন্দ্র। একই ছাদের নিচে ই-টিআইএন, পুনর্নিবন্ধন, রিটার্ন জমা—সব সেবাই মিলছে। করদাতা চাইলে মুঠোফোনে কর দিতে পারবেন। এই ধরনের মোবাইল সেবার মাধ্যমে কর পরিশোধ করলে কোনো সার্ভিস চার্জ বা সেবা মাশুল দিতে হচ্ছে না।