বাণিজ্যযুদ্ধে জিতল কারা...

চীন থেকে আমদানি করা রসুনের ওপর শুল্ক আরোপ করায় লাভবান মার্কিন চাষিরা। ছবি: রয়টার্স
চীন থেকে আমদানি করা রসুনের ওপর শুল্ক আরোপ করায় লাভবান মার্কিন চাষিরা। ছবি: রয়টার্স

বাণিজ্য যুদ্ধে সব গেল গেল বলে রব তোলেন যারা, তাদের জন্য এবার ভিন্ন খবর। যুক্তরাষ্ট্রের রসুন চাষিরা দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে তারা চীনের রসুন আমদানিকারকদের সঙ্গে চলা ২৫ বছরের পুরোনো যুদ্ধে জিতে গেছেন।

বিষয় হলো, গত বছর চীন থেকে আমদানি করা রসুনের ওপর শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এ বছর আবার দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরোপ করা হয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় রসুনের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে রসুন চাষিরাও জানেন, বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জিততে পারে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম রসুন খামার ক্রিস্টোফার রাঞ্চের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট কেন ক্রিস্টোফার বিবিসিকে বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প রসুন আমদানিতে শুল্ক আরোপের পর মার্কিন রসুন প্রকৃত অর্থেই বাজারে প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেছে।’

নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই মার্কিন রসুন চাষিরা বলে আসছেন, চীনের কড়া ঝাঁজযুক্ত রসুন তাদের বাজার ছেয়ে ফেলেছে। বাজার ধরতে চীনের ব্যবসায়ীরা উৎপাদন মূল্যের চেয়েও কম দামে রসুন বিক্রি করছে। বাণিজ্যের এই প্রক্রিয়া ‘ডাম্পিং’ নামে পরিচিত।

পরে মার্কিন সরকার ১৯৯৪ সালে এই অভিযোগ তদন্ত করে। তদন্তেও দেখা যায়, চীনা খামারগুলো যৌক্তিক দামের চেয়ে কম দামে বাজারে রসুন বিক্রি করছে। এরপর যেসব চীনা খামারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাদের কাছ থেকে রসুন আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র ৩৭৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। কিন্তু এই শুল্ক নির্দিষ্ট কিছু খামারের ওপর আরোপ করায় তা সবার বেলায় প্রযোজ্য হয় না। ফলে চীনারা এই শুল্ক এড়ানোর পথ বের করে ফেলে।

বিবিসিকে ক্রিস্টোফার বলেন, চীন এসব করতে সিদ্ধহস্ত। ফলে চীনাদের সস্তা রসুনে বাজার ছেয়ে যেতে থাকে। নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে ১২টি বাণিজ্যিক রসুন খামার ছিল। চীনা ব্যবসায়ীদের কারণে এখন এর মধ্যে মাত্র তিনটি খামার এখন টিকে আছে।

১৯৯০-এর দশকের শুল্কে কাজ না হলেও এবার ট্রাম্পের শুল্কে কাজ হচ্ছে বলে মনে করেন মার্কিন রসুন চাষিরা। কারণ, এবার ধরে ধরে শুল্ক আরোপ করা হয়নি, সামগ্রিকভাবে আরোপ করা হয়েছে। সে কারণে আমদানিকারকেরা এখন আর শুল্ক ফাঁকি দিতে পারছেন না।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি করা রসুনে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এরপর চলতি বছরের মে মাসে তা বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেন। ক্রিস্টোফার আরও বলেন, চীনের রসুনে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর বাৎসরিক হিসাবে প্রতি সপ্তাহে তাদের তাজা রসুন বিক্রি ৬ থেকে ২৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির এই হার খুব বেশি না হলেও যখন বিক্রির প্রকৃত পরিমাপ করা হয়, তখন এটি অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় বলেই তিনি মনে করেন।

ক্রিস্টোফারের মতো রসুন চাষিরা ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সমর্থক। পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন তিনি। তিনি মনে করেন, গণমাধ্যম বিষয়টিকে সরল করে ফেলছে এবং বলছে, শুল্কের কারণে মার্কিন চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক এর উল্টো।