সম্পত্তি তুমি কার, কে তোমার

.
.

সম্পত্তির ধারণার মধ্যে অনেক কিছুই এঁটে যায়। এর মধ্যে যেমন বস্তু আছে, তেমনি আছে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদও (পেটেন্ট বা লিখিত লিপি) আছে। ঐতিহাসিকভাবে বস্তুগত সম্পদের তিন ধরনের মালিকানা দেখা গেছে: প্রথমত, আদিবাসীদের সমাজে সবকিছুই ছিল সাধারণ সম্পদ। পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সবাই সবকিছু ব্যবহার করতে পারত। আমাজনের হুয়াওরানি গোত্রের মানুষেরা এখনো এই প্রথা মেনে চলে। দ্বিতীয়ত, কমিউনিজমের তত্ত্ব অনুসারে সম্পত্তির মালিকানা সামষ্টিক এবং তা সামষ্টিকভাবেই রক্ষিত ও ব্যবহৃত হয়। তৃতীয়ত, প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা, যেখানে সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানা বিদ্যমান এবং প্রত্যেক ব্যক্তি পছন্দমতো সবকিছুই করতে পারেন।

প্রাচীনকালের মনীষীদের মধ্যে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল মনে করতেন, সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা উচিত। তিনি মনে করতেন, সম্পদ সাধারণের মালিকানায় থাকলে কেউই তার যত্নআত্তি বা উন্নয়ন করবে না। এ ছাড়া মানুষের যদি কিছু না-ই থাকে, তাহলে তারা অন্যকে কিছু দেওয়ার মানসিকতা কোত্থেকে পাবে।

সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডে সব জমি ও বাড়িঘর রাজার মালিকানায় ছিল। এতে কিন্তু উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ ঘটেনি। রাজার কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার পর যখন বণিকদের হাতে ক্ষমতা আসতে শুরু করল, তখন থেকেই আজকের এই আধুনিক যুগের সূত্রপাত। ওই সময়ের ইংরেজ দার্শনিক জন লক (১৬৩২-১৭০৪) ব্যক্তিগত অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলতেন, ঈশ্বর আমাদের নিজ শরীরের ওপর অধিকার দিয়েছেন, ফলে আমরা যা বানাই, তার ওপরও আমাদের অধিকার আছে। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) পরবর্তীকালে বলেন, ব্যক্তিগত সম্পত্তি মানুষের আত্মপরিচয়ের বৈধ বহিঃপ্রকাশ।

সোভিয়েত ইউনিয়নে কার্ল মার্ক্স প্রণীত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসানের পর এখন সবখানেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জয়জয়কার। এখনকার অর্থনীতিবিদেরা সম্পত্তির ব্যক্তিগত মালিকানার পক্ষে কথা বলেন। মূলত প্রায়োগিক কিছু কারণে তাঁরা এটা বলেন। তাঁদের যুক্তি হলো, বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে সম্পদের কিছু বিভাজন থাকা দরকার। তা না হলে কারও কাজ করার প্রণোদনা থাকবে না এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চাঙা হবে না। অর্থাৎ পরিণামে বাজারই থাকবে না।

অর্থনীতির তত্ত্বের কথা বাদ দিলে বলা যায়, সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিরোধ-বিবাদের অবসান ঘটানো গেলে সমাজে শান্তি থাকবে। তাই এর গ্রহণযোগ্য সমাধানই সবার কাম্য। ডিকে প্রকাশনীর দা ইকোনমিকস বুক অবলম্বনে

সম্পত্তিবিষয়ক ধারণার ঘটনাক্রম

গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক অ্যারিস্টটল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২)

তাঁর আগে দ্য রিপাবলিক–এ প্লেটো বলেন, সাধারণের মঙ্গলের জন্য শাসকদের হাতে সম্পত্তির সামষ্টিক মালিকানা থাকা উচিত।

খ্রিষ্টাব্দ ১-২৫০: ধ্রুপদি রোমান আইনে একটি বস্তুর ওপর মানুষের অধিকার ও ক্ষমতার সমষ্টি হচ্ছে ডমিনিয়াম।

১২৬৫-৭৪: টমাস অ্যাকুইনাস বলেন, সম্পত্তির মালিকানা প্রাকৃতিক ও ভালো ব্যাপার। কিন্তু সাধারণ সম্পত্তি ব্যক্তিগত সম্পত্তির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

১৬৮৯: জন লক বলেন, শ্রম দিয়ে মানুষ যা তৈরি করে, তা অধিকারবলে সেই মানুষের।

১৮৪৮: কার্ল মার্ক্স কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোতে ব্যক্তিগত সম্পত্তি পুরোপুরি উচ্ছেদের কথা বলেন।