ওরা ১১

>সিমেন্ট খাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা ভালো করছে। দেশীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ১১টি বড় সিমেন্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই আয়োজন।
শাহ সিমেন্ট
শাহ সিমেন্ট

বাজার হিস্যায় বড় শাহ সিমেন্ট
দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান শাহ সিমেন্ট বাজারের হিস্যার দিক দিয়ে বেশ অনেক সময় ধরে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। অবশ্য মাঝে দু-একবার কিছু সময়ের জন্য বসুন্ধরা এগিয়ে গিয়েছিল।

শাহ সিমেন্ট যাত্রা শুরু করে ২০০২ সালের মার্চ মাসে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, তখন তারা বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কারখানা শুরু করে। এখন তাদের উৎপাদনক্ষমতা বছরে ১ কোটি টন। শাহ সিমেন্টের কারখানা মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে। তাদের সিমেন্ট কারখানাটি অত্যাধুনিক ভার্টিক্যাল রোলার মিল (ভিআরএম) প্রযুক্তির।

কারখানার পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানি ও সিমেন্ট সরবরাহে শাহ সিমেন্টের নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা রয়েছে। তাদের সমুদ্রগামী জাহাজ রয়েছে। নৌযান রয়েছে। বাল্ক ক্যারিয়ার দিয়ে তারা সিমেন্ট সরবরাহ করে।

শাহ সিমেন্টের নিজস্ব সিমেন্ট মোড়কজাতকরণ কারখানাটি এ অঞ্চলে বড় কারখানার একটি বলে দাবি করে তারা। যেটি দৈনিক ৩ লাখ ব্যাগ তৈরি করতে পারে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে শাহ সিমেন্টের ১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। ২০১৮ সালে এটি সুপার ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

বসুন্ধরার সিমেন্ট
বসুন্ধরার সিমেন্ট

বসুন্ধরা এগিয়ে বড় প্রকল্পে
শাহ সিমেন্ট বাজার হিস্যায় সবার চেয়ে এগিয়ে থাকলেও তার বড় প্রতিযোগী বসুন্ধরা। বসুন্ধরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বড় বড় প্রকল্পে সিমেন্ট সরবরাহে এগিয়ে রয়েছে। মোট সক্ষমতার ৪০ শতাংশ সিমেন্ট এখন বড় প্রকল্পে যাচ্ছে, বাকিটা সাধারণ বাজারে।

বসুন্ধরার সিমেন্টের ব্র্যান্ড দুটি। একটি বসুন্ধরা, অন্যটি কিং ব্র্যান্ডের সিমেন্ট। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশীয় মালিকানায় দেশের প্রথম বেসরকারি খাতের মিল মেঘনা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে কিং ব্র্যান্ডের সিমেন্ট উৎপাদিত হয়। এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। পরে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের অধীনে বসুন্ধরা সিমেন্ট বাজারে আসে। এখন দিনে তাদের উৎপাদনক্ষমতা ১৪ হাজার মেট্রিক টন। বসুন্ধরার দাবি, এটি দেশের মোট উৎপাদনক্ষমতার ১৫ শতাংশ। বসুন্ধরার দুটি কারখানার একটি বাগেরহাটের মোংলায়, অন্যটি নারায়ণগঞ্জে। জার্মানি থেকে আনা ভার্টিক্যাল রোলার মিল (ভিআরএম) প্রযুক্তিতে তারা সিমেন্ট উৎপাদন করে।

কাঁচামাল আমদানিতে বসুন্ধরার নিজস্ব জাহাজ (মাদার ভেসেল) আছে। পরিবহনের জন্য আমাদের বাল্ক ক্যারিয়ার আছে ১৯০টি, ট্রাক আছে ৪০০টি।

বসুন্ধরা সিমেন্টের বসুন্ধরা সিমেন্টের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা (সিএমও) খন্দকার কিংশুক হোসেইন বলেন, আগামী জানুয়ারিতে তাদের উৎপাদন-সক্ষমতা দৈনিক আরও ১০ হাজার টন বাড়বে।

ফ্রেশ সিমেন্ট
ফ্রেশ সিমেন্ট

ফ্রেশ সিমেন্ট বাড়াচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা
মেঘনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০০২ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এখন তাদের উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক ১২ হাজার মেট্রিক টন। তারা দেশের সিমেন্টের চাহিদার বিবেচনা করে আরও দৈনিক ১৩ হাজার টন উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছে, যা ২০২০ সাল নাগাদ উৎপাদনে যাবে। এ ক্ষেত্রে সর্বমোট উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়াবে দৈনিক ২৩ হাজার টন।

ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের কাঁচামাল পরিবহনের জন্য রয়েছে নিজস্ব সমুদ্রগামী জাহাজ ও লাইটার ভেসেল। উৎপাদিত পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রয়েছে কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও বাল্ক ক্যারিয়ার।

ইউনিক সিমেন্ট জানিয়েছে, তারা সব সময় নির্দিষ্ট উৎস থেকে মানসম্মত কাঁচামাল সংগ্রহ করে। তা দিয়ে সিমেন্ট তৈরি হয় বলেই ইউনিক সিমেন্ট পণ্যের ধারাবাহিক গুণগতমান ধরে রাখতে সক্ষম। আর এই কারণে ফ্রেশ সিমেন্ট সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফ্রেশ সিমেন্টের দাবি, বাজারে এখন তাদের হিস্যা ৯ শতাংশের মতো। বিক্রি বাড়ানো ও বাজার হিস্যা বাড়াতে তারা উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে।

ক্রাউন সিমেন্ট
ক্রাউন সিমেন্ট

রপ্তানিতে সেরা ক্রাউন সিমেন্ট
দেশের বাজারে ভালো অবস্থানের পাশাপাশি সিমেন্ট রপ্তানিতে সেরা এমআই সিমেন্টের ক্রাউন ব্র্যান্ডের সিমেন্ট। তারা ২০০৩ সাল থেকে সিমেন্ট রপ্তানি করছে। এখন যা রপ্তানি হয়, তার প্রায় অর্ধেক করে এমআই সিমেন্ট।

২০০১ সালে ক্রাউন সিমেন্ট দৈনিক ৬০০ মেট্রিক টন উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে থাকে ক্রাউন। বর্তমানে ক্রাউন সিমেন্ট উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক প্রায় ১১ হাজার উন্নীত হয়েছে। এরই মধ্যে ক্রাউন সিমেন্ট উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি, সময়মতো কাঁচামাল আমদানির জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাঁচামাল দ্রুত পরিবহনের জন্য ক্রাউন সিমেন্টের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২০টিরও অধিক লাইটার জাহাজ। উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন করার জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে ক্রাউন। ব্যাগ সরবরাহ ও বিতরণব্যবস্থাও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয় তারা।

ক্রাউন সিমেন্ট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন সিমেন্ট কংক্রিট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রোডাক্টসের মাধ্যমে বিভিন্ন বড় বড় স্থাপনায় মানসম্মত কংক্রিটও সরবরাহ করা হয়।

২০১৮ সালে ক্রাউন সিমেন্টের বাজার হিস্যা ছিল প্রায় ৮ শতাংশ। এ হিসাবে তারা বাজারের চতুর্থ বড় প্রতিষ্ঠান। মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে ক্রাউন সিমেন্টের কারখানা। ভিআরএম প্রযুক্তির।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট
প্রিমিয়ার সিমেন্ট

ভালো ব্যবসা করছে প্রিমিয়ার সিমেন্ট
প্রিমিয়ার সিমেন্ট টিকে গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। এটি যাত্রা শুরু করে ২০০১ সালে। শুরুতে তাদের উৎপাদনক্ষমতা ছিল বছরে ৬ লাখ টন। যদিও নিয়মিত তারা উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়েছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে তারা কারখানার দ্বিতীয় ইউনিট চালু করে, যার উৎপাদনক্ষমতা ছিল বছরে ৬ লাখ টন। এরপর ২০১৩ সালে তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিট যাত্রা শুরু করলে উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে ২৪ লাখ টনে উন্নীত হয়।

২০১০ সালে প্রিমিয়ার সিমেন্ট পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার উদ্যোগ নেয়। অনুমোদিত মূলধন ধরা হয় ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নিবন্ধিত হয়।

পণ্য সরবরাহের জন্য প্রিমিয়ার সিমেন্টের জাহাজ, বাল্ক ক্যারিয়ার, ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন রয়েছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। আলোচ্য বছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ৬১ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

আকিজ সিমেন্ট
আকিজ সিমেন্ট

জার্মান ভিআরএমে ‘প্রথম’ আকিজ
আকিজ গ্রুপ দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর একটি। প্রতিষ্ঠানটি ২০০২ সালে সিমেন্ট ব্যবসায় নামে। বাংলাদেশে আরও কিছু সিমেন্ট কারখানার মতো তারাও ভার্টিকেল রোলার মিল (ভিআরএম) প্রযুক্তিতে সিমেন্ট উৎপাদন করে। আকিজের দাবি, জার্মান প্রযুক্তির ভিআরএম যন্ত্রের সিমেন্ট কারখানা দেশে তারাই প্রথম প্রতিষ্ঠা করে।

আকিজ সিমেন্টের উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক ৭ হাজার ২০০ টন। তাদের নিজস্ব সিমেন্ট ব্যাগ তৈরির কারখানা আছে। পণ্য পরিবহনের জন্য আকিজ সিমেন্টের ১১টি বড় জাহাজ বা মাদার ভেসেল, ৩৫টি ছোট জাহাজ বা লাইটারেজ ভেসেল ও ১৫টি বার্জ রয়েছে। দেশজুড়ে তারা নৌ ও সড়কপথে পণ্য পরিবহন করে। তাদের নিজস্ব ট্রাক আছে ২২৫টি। আকিজের দাবি, তাদের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা সর্বাধুনিক।

আকিজ গ্রুপের সিমেন্ট কারখানা নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকায়। আকিজ বলছে, তারা ফ্লাই অ্যাশের বদলে ব্লাস্ট ফার্নেস আয়রন স্ল্যাগনির্ভর সিমেন্ট উৎপাদন করে। এ কারণে তাদের সিমেন্টে তৈরি স্থাপনার স্থায়িত্ব বেশি হয়।

আমান সিমেন্ট
আমান সিমেন্ট

আমান সিমেন্টের দুই কারখানা
দীর্ঘদিন ধরে সিমেন্টের ব্যবসা করছে আমান গ্রুপ। ২০০৩ সাল থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ছোট একটি কারখানা দিয়ে সিমেন্ট ব্যবসায় নামে তারা। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তাদের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয়। দুটি কারখানায় বর্তমানে তাদের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। উভয় কারখানাতেই জার্মানির ভিআরএম প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে আমান গ্রুপ। কাঁচামাল সংরক্ষণের জন্য দেশের অন্যতম বড় ফ্ল্যাগ শেড রয়েছে তাদের নারায়ণগঞ্জের কারখানায়। একই সঙ্গে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কাঁচামাল রাখা যায় সেখানে। আমান গ্রুপের সিমেন্টের ব্র্যান্ডের নাম আমান সিম। অ্যাডভান্স, বেসিক, গ্রিন ও ক্ল্যাসিক নামে তাদের চারটি সিমেন্ট পণ্য আছে। সারা দেশের প্রায় ৪০০ ডিলারের মাধ্যমে সিমেন্ট সরবরাহ করে আমান সিম। সিমেন্ট ছাড়া টেক্সটাইল, ট্রেডিং, হিমাগার, কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ আছে আমান গ্রুপের।

মেট্রোসেম সিমেন্ট
মেট্রোসেম সিমেন্ট

ভারতে রপ্তানি করে মেট্রোসেমও
মেট্রোসেম সিমেন্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০০ সালে। ২০ একরের ওপর স্থাপিত ফ্যাক্টরিতে বর্তমানে উৎপাদনসক্ষমতা দৈনিক ২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। মেট্রোসেমের কারখানাটি ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত।

জার্মান প্রযুক্তিতে উৎপাদিত হয় মেট্রোসেম সিমেন্ট। মেট্রোসেম সিমেন্টের বাজারের আওতা দেশের প্রায় ৪৭টি জেলায় বিস্তৃত। দেশব্যাপী প্রায় আড়াই শ পরিবেশক মেট্রোসেমের সিমেন্ট বিপণন করে। দেশের বাইরেও ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে নিয়মিতভাবে মেট্রোসেম সিমেন্ট রপ্তানি হয়।

সময়মতো পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে মেট্রোসেমের নিজস্ব ট্রাক, বাল্ক ক্যারিয়ার ও জাহাজ রয়েছে। মেট্রোসেম জানিয়েছে, সিমেন্ট তৈরির জন্য তারা ক্লিনকার, স্ল্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ, লাইমস্টোন, জিপসাম ইত্যাদি জাপান, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে সংগ্রহ করে। বর্তমানে এখন চার ধরনের সিমেন্ট বিক্রি করে মেট্রোসেম।

আনোয়ার সিমেন্ট
আনোয়ার সিমেন্ট

পুরোনো আনোয়ার সিমেন্টেও পুরোনো
দেশের সবচেয়ে পুরোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি আনোয়ার গ্রুপ। ইস্পাত, বস্ত্রকল, পোলট্রি, অটোমোবাইলসহ নানা ধরনের ব্যবসা আছে তাদের। ২০০২ সালে সিমেন্ট ব্যবসা শুরু করে আনোয়ার গ্রুপ। মুন্সিগঞ্জে আনোয়ার সিমেন্টের কারখানায় ব্যবহার করা হয়েছে ইউরোপিয়ান প্রযুক্তি। তাদের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা ১০ লাখ টন। পোর্টল্যান্ড ও পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট উৎপাদন করে আনোয়ার সিমেন্ট। কোম্পানিটি সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ক্লিনকার, থাইল্যান্ডের জিপসাম, জাপানের বিএফ স্ল্যাগ, ভারতের ফ্লাই অ্যাশ এবং ভিয়েতনাম ও ভারতের লাইমস্টোন ব্যবহার করে। রাজধানীর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী সড়কে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, সুউচ্চ ভবন সিটি সেন্টার, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু প্রকল্প, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইত্যাদি বড় বড় প্রকল্পে আনোয়ার সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়েছে।

মীর সিমেন্ট
মীর সিমেন্ট

ভিআরএম আনছে মীর সিমেন্ট
২০০৩ সালে শুরু হওয়া মীর সিমেন্টের কারখানা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মুরাপাড়া এলাকায়। বল মিল প্রযুক্তিতে করা কারখানাটির দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা ২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। তবে শিগগিরই ভিআরএম প্রযুক্তিতে আরেকটি কারখানা করতে যাচ্ছে মীর। তারা জানিয়েছে, বুয়েট ও এলজিইডি কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ টেস্টে মীর সিমেন্টের মান ৫ হাজার ৫০০ পিএসআইয়ের ওপরে থাকে। সারা দেশে পণ্য সরবরাহে মীর সিমেন্টের রয়েছে ২০০ ডিলার। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি করে মীর গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠান। তারা তিন ধরনের সিমেন্ট তৈরি করে। সেগুলো হচ্ছে, মীল ওপিসি (ক্লিংকার ৯৫-১০০%), মীর পিসিসি (ক্লিংকার ৬৫-৭৯%) ও মীর অ্যাডভান্সড (ক্লিংকার ৮০-৯৪%)।

ব্র্যান্ড বেঙ্গল
ব্র্যান্ড বেঙ্গল

বাজারে নতুন ব্র্যান্ড বেঙ্গল
প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসায় সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠী বেঙ্গল গ্রুপ চলতি বছর সিমেন্টের বাজারে নেমেছে। জার্মান প্রযুক্তিতে শুরু হওয়া বেঙ্গল সিমেন্টের বর্তমান উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক ৪ হাজার মেট্রিক টন। তাতে বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা দাঁড়ায় ১৪ লাখ টন। শিগগিরই তাদের দৈনিক উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে হবে ৮ হাজার মেট্রিক টন। ১৯৬৯ সালে প্লাস্টিক পণ্য দিয়ে বেঙ্গল গ্রুপ ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে প্লাস্টিকসহ ৩২ খাতের ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে এই শিল্পগোষ্ঠী। সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের বারদীতে নিজস্ব কারখানা করেছে তারা। বেঙ্গল সিমেন্টের কারখানায় জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য উন্নত মানের ক্লিংকার, ফ্লাই অ্যাশ, লাইমস্টোন, জিপসাম ইত্যাদি আমদানি করছে বেঙ্গল। গত বছর যাত্রা শুরু করা বেঙ্গল সিমেন্টের আনুষ্ঠানিক বাজারজাত শুরু হয় গত মার্চে। তাদের স্লোগান, ‘এসেছি গড়তে, এসেছি জয় করতে’।

অন্যান্য কারখানা

সিমেন্ট খাতে আরও কিছু কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে এআর সিমেন্ট, আরামিট, কনফিডেন্স, দেশবন্ধু, ডায়মন্ড, ইস্টার্ন, মোংলা, মদিনা, এনজিএস, নওয়াপাড়া, অলিম্পিক, রয়াল, এস আলম ও যশোর সিমেন্ট মিলস বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য।