সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৬৫%

সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ তিন ভাগের এক ভাগ হয়ে গেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ বছর সঞ্চয়পত্রের বিক্রি আগের বছরের চেয়ে ৬৫ শতাংশ কমে গেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, তিন মাসেই সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছে ৮ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। গত ১০ বছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে এই নিম্ন প্রবণতা এবারই প্রথম।

তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই কমে যাওয়াকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এতে সরকারের সুদ ব্যয় কমবে। অবশ্য বাড়বে ব্যাংকঋণ।

ব্যাংকঋণ বৃদ্ধির আশঙ্কার সঙ্গে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার সম্পর্ক জানতে চাইলে আহসান মনসুর বলেন, সম্পর্ক তো রয়েছেই। তবে মূলত ব্যাংকঋণ বাড়বে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো না হওয়ার কারণে।

আগের অর্থবছরগুলোতে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ ও আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকেই বলা হয় নিট বিক্রি। এই অর্থই সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে থাকে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মোট বিক্রি হয় ১৭ হাজার ৪২১ কোটি টাকা, যা থেকে মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মচারীরা বলছেন, চার কারণে গত ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমছে। কারণগুলো হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা, ব্যাংক হিসাব খোলা, অনলাইনে আবেদন করা এবং অর্থের উৎস সম্পর্কে বিবরণ দেওয়া।

>

চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কেনার ক্ষেত্রে অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়েছে। একই দিন থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে টিআইএন ও ব্যাংক হিসাব।

এ ছাড়া একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ৬০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে না পারা এবং ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ হলেই উৎসে কর ১০ শতাংশ কেটে রাখার নিয়ম করার কারণেও নিট বিক্রি কমেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

অর্থ বিভাগের কর্মচারীরা আরও বলেছেন, গত ১ জুলাই থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনা ও নগদায়নের জন্য অর্থ বিভাগ যে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে, তারই ইতিবাচক ফল হচ্ছে এই বিক্রি কমে যাওয়া এবং এটাই তাঁরা চেয়েছিলেন।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের আর্থিক পণ্য বিক্রি কমে যাওয়ার প্রবণতায় তাঁরা খুব একটা খুশি নন। তবে তাঁরা চান, প্রকৃত গ্রাহকেরাই সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদ ভোগ করুক।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের আর্থিক পণ্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় দেশের ৭৫টি সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এর শাখা অফিস এবং ডাকঘরের মাধ্যমে। বিক্রি কমার বিষয়ে জানতে চাইলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

অর্থ বিভাগের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিডিএমসি) বহুবার বলেছে, সঞ্চয়পত্রের কারণে আর্থিক খাত বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছে এবং নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এমনকি সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত গ্রাহক কারা, তা-ও এত দিন সরকার জানত না। কর্মসূচিটির কারণে সরকার গ্রাহকদের সম্পর্কে এখন জানতে পারবে। সরকারের কাছে পরিপূর্ণ হিসাব আসতে যদিও ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় লাগবে।

চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে এখনো গড় সুদের হার ১১ শতাংশের মতো। সরকার অবশ্য সুদের হার কমানোয় কোনো হাত দেয়নি। অর্থ বিভাগের একটি হিসাবে দেখা যায়, ১০ বছরে সরকার ১ লাখ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ করেছে।