বন্দরে-ঘাটে আটকা পড়েছে ৩১ লাখ টন পণ্য

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ও দেশের নানা ঘাটে কোনো পণ্য খালাস হচ্ছে না।  ছবিটি কর্ণফুলী নদীর আনু মাঝির ঘাট থেকে আজ তোলা। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে ও দেশের নানা ঘাটে কোনো পণ্য খালাস হচ্ছে না। ছবিটি কর্ণফুলী নদীর আনু মাঝির ঘাট থেকে আজ তোলা। ছবি: সৌরভ দাশ

নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ও দেশের নানা ঘাটে কোনো পণ্য খালাস হচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, আটকে থাকা পণ্যের পরিমাণ প্রায় ৩১ লাখ টন। এর মধ্যে ৫৭টি বিদেশি সমুদ্রগামী বড় জাহাজে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন এবং ছোট আকারের ১ হাজার ২৮৬ জাহাজে ১৮ লাখ টন পণ্য আটকা পড়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে কর্মবিরতি শুরুর পরই সাগর থেকে নদীপথে ও ঘাটে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ সাগরে রেখে লাইটার জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়। এরপর এসব পণ্য ধারাবাহিকভাবে দেশের ৩৭টি ঘাট ও শিল্পমালিকদের কারখানার ঘাটে নিয়ে খালাস করা হয়। এসব পণ্যের বড় অংশই সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল, ইস্পাতের কাঁচামাল, কয়লা, সার, ভোগ্যপণ্য প্রভৃতি। কর্মবিরতির কারণে বন্দরে বড় জাহাজ থেকে যেমন পণ্য স্থানান্তর বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনি লাইটার জাহাজ থেকে ঘাটে বা কারখানায় পণ্য খালাসও বন্ধ হয়ে পড়েছে।

বন্দরে বড় জাহাজ থেকে নদীপথে সবচেয়ে বেশি পণ্য পরিবহন হয় ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল নামের লাইটার জাহাজ বরাদ্দকারী সংস্থার মাধ্যমে। সংস্থাটির হিসাবে, এখন দেশের ৩৭টি ঘাটে ৯৮৬টি লাইটার জাহাজে আটকে আছে ১২ লাখ ৮৯ হাজার টন পণ্য। বন্দরের বহির্নোঙরে ২৫টি বড় জাহাজ থেকে এসব পণ্য খালাস করে সারা দেশে নদীপথে পণ্য খালাসের ঘাটে এসব পণ্য নেওয়া হয়েছিল। কর্মবিরতির কারণে ঘাটে নোঙর করে আছে এসব লাইটার জাহাজ। এ ছাড়া ১১ টি শিল্পগ্রুপের ৩০০ জাহাজে পণ্য আটকে আছে সাড়ে ৫ লাখ টন। অর্থাৎ শুধু লাইটার জাহাজে আটকে আছে ১৮ লাখ টন পণ্য।
সিমেন্টের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্যে পরিবহনের জন্য ১১টি শিল্পগ্রুপের নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে। নিজস্ব লাইটার জাহাজ থাকা প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, শুধু প্রিমিয়ার সিমেন্টর নয়, শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে আসা সব কটি সমুদ্রগামী বড় জাহাজ থেকে কোনো পণ্য খালাস হচ্ছে না। লাইটার জাহাজে কাঁচামাল যেমন পরিবহন করা যাচ্ছে না, তেমনি প্রস্তুত পণ্যও কারখানা থেকে নেওয়া যাচ্ছে না। পুরো সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।

লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য নিয়ে আসা বড় জাহাজ থেকেও পণ্য খালাস হচ্ছে না। বন্দরের হিসাবে বহির্নোঙরে আজ শনিবার খালাসের অপেক্ষায় আছে ৫৭টি পণ্যবাহী বড় জাহাজ। এসব জাহাজে সিমেন্ট ক্লিংকার, জিপসাম, স্ল্যাগ, ইস্পাতের কাঁচামাল, সার, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের ১৩ লাখ ৬৩ হাজার টন পণ্য রয়েছে।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতির কারণে বন্দরের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য স্থানান্তর বন্ধ রয়েছে। নদীপথে সমস্যা হলেও জেটিতে পণ্য খালাসে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১১ দফা দাবিতে এ কর্মবিরতি শুরু করে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধ, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের কেরানি, কেবিন বয় ও ইলেকট্রিশিয়ানসহ নৌশ্রমিকদের বেতন, খাদ্যভাতা, সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করা।

সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী আলম শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, কর্মবিরতি নিয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বৈঠক রয়েছে। বৈঠক শেষে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তাঁরা অবহিত করবেন।