গুজবে পাবনার পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে গতকাল শুক্রবার পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। আজ শনিবার সাঁথিয়ার করমজা হাটে প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে (পাইকারি) বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা বলছেন, গুজব ও হুজুগের কারণে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার এ উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে আগাম জাতের বা মূলকাটা পেঁয়াজ। আজ পর্যন্ত ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আগাম জাতের পেঁয়াজ কৃষকেরা জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে বাকি আগাম জাতের পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠবে বলে উপজেলা কৃষি কার্যালয় ধারণা করছে।

এদিকে পেঁয়াজের আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ৮ থেকে ১০ দিন ধরে বাজারে যে পেঁয়াজ উঠছে, তার অধিকাংশই আগাম জাতের। এই পেঁয়াজ উঠতে শুরু করার পর থেকেই দাম কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার নতুন পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকায় নেমে আসে। গতকাল শুক্রবার থেকে আবারও দাম বাড়তে থাকে। পাইকারি বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়। আজ এই দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১১০ থেকে ১৩০ টাকায়।

আজ উপজেলার করমজা হাটে ছয় থেকে সাত ট্রাক নতুন পেঁয়াজের আমদানি দেখা যায়। এতে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা হিসাব করে জানান, ওই হাটে ৭৮ থেকে ৯১ টন পেঁয়াজের আমদানি হয়েছিল (প্রতি ট্রাকে ১৩ টন)।

এদিকে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানান, গুজব ও হুজুগের কারণে পেঁয়াজের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। গত দুদিন নতুন পেঁয়াজের আমদানি কিছুটা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা স্থানীয় হাটগুলোয় বেড়ে যায়। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়ছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে হুজুগে পড়ে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বেশি বেশি পেঁয়াজ কেনা শুরু করে দেন। এতেই বাজার এমন অস্থির হয়ে ওঠে।

করমজা হাটের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বজলুল হক বলেন, ‘আজ সকালে সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ী হাটে পেঁয়াজ কিনতে আসেন। তাঁরা কিছু পেঁয়াজ কেনার পরই পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।’

হাটের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়তের মালিক মুন্নাফ প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাজারে পেঁয়াজের দাম এত বাড়েনি। অথচ আমাদের হাটে সকাল থেকে কিছু ফড়িয়া বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে শুরু করেন। তাঁদের দেখাদেখি হুজুগে পড়ে আরও অনেকে পেঁয়াজ কেনা শুরু করেন। তবে আমাদের এলাকার নতুন পেঁয়াজ এখন খুব দ্রুত বাজারে আসবে। ফলে এমন অবস্থায় দাম তো দ্রুত কমারই কথা।’

এদিকে গত ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম কৃষকেরা নতুন পেঁয়াজে এত বেশি দাম পেলেন। এমন দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে কৃষকেরা হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন। উপজেলার গোপালপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত কয়েক বছর পেঁয়াজ আবাদ কইর‌্যা লস দিছি। কিন্তু এবার লাভ ভালোভাবেই ধরা দিল।’

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘এ উপজেলায় আগাম জাতের (মূলকাটা) নতুন পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠতে শুরু করেছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই সব পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে যাবে। এই সময়ে পেঁয়াজের আমদানি প্রচুর বাড়বে বলে আশা করছি।’