চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস: ২০৩ কনটেইনার পণ্য মাটিচাপা

আমদানিকারকেরা দীর্ঘদিনেও খালাস না নেওয়ায় ২০৩ কনটেইনার পণ্য এখন মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব পণ্যের ওজন ৪৪ লাখ কেজি। আর আমদানি মূল্য আনুমানিক ২৩ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশের প্রায় ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের টোল রোডের পাশে আবদুর রহমান ডিপো এলাকায় এসব পণ্য মাটিচাপা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, আপেল, কমলা ও মাল্টা, প্রাণিখাদ্য, এনার্জি ড্রিংক, সূর্যমুখী তেল, ফলের জুস, প্রসাধনী, স্যানিটারি ন্যাপকিন ইত্যাদি।

জানা গেছে, আমদানিকারকেরা এসব পণ্য দেশে আনার পর নানা কারণে বন্দর থেকে খালাস করেননি। সে জন্য অধিকাংশ পণ্যই পচে-গলে নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রথম দিনে গতকাল পাঁচ কনটেইনার মুরগির খাবার ও সয়াবিনের খৈল ধ্বংস করা হয়। কাস্টমসের নিলাম শাখার উপকমিশনার মাজেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পণ্য মাটিচাপা দেওয়া শুরু হয়েছে।

চট্টগ্রামের ফলমন্ডির ডিএম করপোরেশন কমলা এবং ঢাকার শাহ আলম এন্টারপ্রাইজ মাল্টার চালান খালাস করেনি। এই দুই আমদানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

লক্ষ্মীপুরের নাসরিন অ্যাগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিজ আমদানি করা ২৫ কনটেইনার মুরগির খাবার খালাস করেনি। আবার ১২ বছর আগে আমদানি হওয়া দুই কনটেইনার স্যানিটারি ন্যাপকিনও খালাস হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম গতকাল বলেন, যাঁরা ফল আমদানি করে খালাস নেননি, তাঁদের মধ্যে মৌসুমি ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি। তিনি বলেন, অনেক সময় বাজারে দাম পড়ে যায়। তখন শুল্ক-কর ও মাশুল পরিশোধ করে খালাস নিতে গেলে আরও লোকসানের আশঙ্কা থাকে। তাই মৌসুমি আমদানিকারকেরা পণ্য খালাস করেন না।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০৩টি কনটেইনার মোট ৩৭ হাজার দিন বন্দরে পড়ে ছিল। তাতে বন্দরের ১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পায়নি এবং পাওয়ার আশাও ক্ষীণ। বন্দরের সচিব ওমর ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্বস্তির কথা হলো, নতুন করে ২০৩টি কনটেইনার রাখার জায়গা হলো।

পণ্যগুলো খালাস হলে সরকার প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব পেত।

বিদেশি জাহাজ কোম্পানিগুলোর হিসাবে কনটেইনার রাখার ভাড়া বাবদ তারাও প্রায় ১৪ কোটি টাকা পায়নি। মেডিটারিয়ান শিপিং কোম্পানির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ভাড়া তো পাওয়া যায়ইনি, আবার কনটেইনারগুলোও নতুন করে ভাড়া দেওয়া যায়নি এত দিন।

বলা হয়, শুল্ক-কর পরিশোধ করে পণ্য খালাস নিলে লোকসান বাড়বে, এমন আশঙ্কায় আমদানিকারকেরা কেটে পড়েছেন।