রেডি ফ্ল্যাটের আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের

অ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্টসের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়।  ছবি: প্রথম আলো
অ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্টসের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: প্রথম আলো

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহাব) আয়োজিত পাঁচ দিনের শীতকালীন আবাসন মেলা শেষ হয়েছে। মেলার শেষ দিনে গতকাল শনিবারও ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী ক্রেতাদের বেশ ভিড় ছিল। বিশেষ করে দুপুরের পর ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেলে তো মেলাস্থল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশে রীতিমতো যানজট সৃষ্টি হয়। মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীর বেশির ভাগেরই আগ্রহ দেখা গেছে রেডি মানে তৈরি ফ্ল্যাটে। নিম্নমধ্য ও মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত-নির্বিশেষে এমন ফ্ল্যাটের খোঁজ নিয়েছেন বেশি। কারণ, রেডি ফ্ল্যাটে গৃহঋণ পাওয়া সহজ এবং এতে ঝুঁকিও কম বলে মনে করেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সরেজমিনে গতকাল মেলা ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। এবারের আবাসন মেলায় মোট ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল। এর মধ্যে ১১৬টি আবাসন, ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক এবং ৩০টি নির্মাণসামগ্রীর প্রতিষ্ঠান।

মেলায় আসা ব্যাংকার আসলাম আল ফেরদৌস প্রথম আলোকে জানান, এখানে একসঙ্গে সব প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাট সম্পর্কে জানা যায়। তাই খোঁজ নিতে এসেছেন। এরপর সাধ ও সাধ্যের মিল হলেই পরবর্তী চিন্তা করবেন তিনি।

এবিসি রিয়েল এস্টেটের স্টলে ক্রেতারা।
এবিসি রিয়েল এস্টেটের স্টলে ক্রেতারা।

অ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্টসের স্টলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে বেশ ভিড়। সবাই ফ্ল্যাটের খোঁজ করছেন। বর্তমানে অ্যাসুরেন্সের ১৮টি আবাসন প্রকল্প আছে। মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত—দুই শ্রেণির জন্যই তাদের ফ্ল্যাট। ঢাকার গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের ফ্ল্যাট প্রকল্প রয়েছে। এলাকাভেদে তাদের ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপক মো. সোহেল বলেন, ‘মেলায় খুব একটা বেচাকেনা হয় না। এখানে বেশির ভাগ দর্শনার্থী আসেন ফ্ল্যাটের খোঁজখবর নিতে। মেলার পর আমরা এসব আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করব। আশা করি, এবার মেলায় আসা আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে ১০-১২টি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারব।’

রিহ্যাব মেলায় বিল্ডিং ফর ফিউচারের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়।
রিহ্যাব মেলায় বিল্ডিং ফর ফিউচারের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়।

এবিসি রিয়েল এস্টেট মেলা উপলক্ষে তাদের ফ্ল্যাটের দামে ৫ থেকে ১০ শতাংশ দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান এখন নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের আবাসন চাহিদা মেটানোর দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এ জন্য রাজধানীর মগবাজারে ওয়েসিস কনডোমিনিয়াম তৈরি করছে এই প্রতিষ্ঠান। সেখানে জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় ৪০ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হবে। এটি নিয়ে মেলায় আসা ব্যক্তিদের বেশ আগ্রহ ছিল।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন উপব্যবস্থাপক ফয়সাল রহমান বলেন, ‘এবারের মেলা বেশ ভালো গেছে। প্রতিদিনই বহু আগ্রহী ক্রেতা এসে ফ্ল্যাটের খোঁজ নিয়েছেন। আমরা তাঁদের ঠিকানা ও ফোন নম্বর রেখে দিয়েছি। মেলার পর যোগাযোগ করব। প্রয়োজনে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিয়ে সরেজমিন প্রকল্প দেখাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্তের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মানসম্পন্ন ফ্ল্যাট দিতে চাই।’

চট্টগ্রামভিত্তিক সানমারের স্টলে তথ্যের খোঁজে দুই ক্রেতা।
চট্টগ্রামভিত্তিক সানমারের স্টলে তথ্যের খোঁজে দুই ক্রেতা।

চট্টগ্রামভিত্তিক আবাসন প্রতিষ্ঠান সানমার এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে। তাদের শতাধিক চলমান প্রকল্প আছে। এর মধ্যে নয়টি শুধু রাজধানী ঢাকায়। বাকিগুলো চট্টগ্রামে। এই প্রতিষ্ঠান মেলায় কোনো ছাড় দেয়নি। তবে মেলায় এসে যাঁরা খোঁজখবর নিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে তাঁরা ফ্ল্যাট কেনায় আগ্রহী হলে কর্তৃপক্ষ ছাড় দেবে বলে আশ্বাস দেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মেজবাহ আহমেদ। তিনি জানান, তাঁদের প্রকল্পগুলো আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

মেলায় বিল্ডিং ফর ফিউচার নামের প্রতিষ্ঠানটির স্টলের সামনেও বেশ ভিড় দেখা গেছে। তাদের স্টলে অনেকেই ফ্ল্যাটের খোঁজ নেন। কোন এলাকায়, দাম কত, কবে শেষ হবে—এসব প্রশ্নই ছিল বেশি। প্রতিষ্ঠানটির ১৭টি প্রকল্প চলমান। এর মধ্যে একটি যশোরে, বাকিগুলো ঢাকায়। জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানের ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটপ্রতি গ্রিন রোড ও কলাবাগানে সাড়ে নয় হাজার টাকা, মিরপুর ও মালিবাগে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা, উত্তরায় ৯ হাজার টাকা। মেলায় কেউ ফ্ল্যাটের বুকিং দিলে প্রতিষ্ঠানটি ১০ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে।
বিল্ডিং ফর ফিউচারের কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, ব্যাংকার ও সরকারি কর্মকর্তারা ফ্ল্যাটের খোঁজ নিয়েছেন বেশি। তাঁরা তুলনামূলক কম সুদে গৃহঋণ পান।