যখন সস্তায় বিকোয় শেয়ার

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য পুরো বছরটাই ছিল হতাশার। ছবি: প্রথম আলো
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য পুরো বছরটাই ছিল হতাশার। ছবি: প্রথম আলো

ধরা যাক, আপনি একজন ক্রেতা। ১০০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন কিছু কিনবেন বলে। ভাবুন তো, এ টাকায় আপনি কী কী কিনতে পারবেন? শহরের যেকোনো দোকানে ২ টাকার কমে এখন একটি ক্যান্ডি মেলে না। রাস্তার পাশের দোকানে এক কাপ চা বিক্রি হয় ৫ থেকে ৬ টাকায়। আবার ঢাকা নগরে বাসে ওঠানামার ভাড়াও ৫ টাকার কম নয়। সাধারণ মানের একটি রেস্টুরেন্টে এক থালা ভাত ১০ টাকার কমে পাওয়া যায় না। 

ঘর থেকে বের হয়ে কিছু কিনতে দোকানে যাবেন? রিকশায় উঠে ২০ টাকার কম ভাড়া দিলে মুখ কালো হয় রিকশাচালকের। ১০ টাকায় কোনো সবজি মেলে না বাজারে। দরদামের এই যখন অবস্থা, তখন তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার। সেই সস্তা দামের শেয়ার কিনতে হলে বাজারের পরিবর্তে আপনাকে যেতে হবে কোনো ব্রোকারেজ হাউসে। অর্থাৎ পণ্যবাজারের বদলে ভুলে শেয়ারবাজারে চলে গেলে অনেক পণ্যের চেয়ে সস্তায় বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনতে পারবেন। তবে যাওয়ার আগে সাবধান। পকেটে টাকা থাকলেই আপনি শেয়ার কিনতে পারবেন না। শেয়ার কেনার আগে আপনাকে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলতে হবে। থাকতে হবে ব্যাংক হিসাব। সেই সঙ্গে বাজার সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণাও থাকা চাই। বুঝতে হবে কোম্পানির ভালো-মন্দ। নইলে যতই সস্তা দামে শেয়ার কেনেন না কেন, সেই অর্থ হারানোর ঝুঁকিও প্রবল। কারণ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সব সময়ই ঝুঁকিপূর্ণ। তার চেয়ে বড় কথা, না জেনে, না বুঝে এ বাজারে অর্থ লগ্নি করলে লাভের বদলে লোকসানের শঙ্কাই বেশি। 

বাজার থেকে কোনো ভোগ্যপণ্য কিনলে তা ভোগে চলে যাবে। থাকবে না কিছুই। কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনলে তার বিপরীতে বছর বছর আপনার লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

আসুন, মিলিয়ে দেখি কতটা সস্তায় শেয়ার মিলছে শেয়ারবাজারে। ২ টাকার ক্যান্ডির চেয়ে কম দামে পাবেন তিন কোম্পানির শেয়ার। এগুলো হলো ফ্যামিলিটেক্স, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ইউনাইটেড এয়ার। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের আগে কোম্পানির ভালো-মন্দ জানার বা বোঝার যে দক্ষতার কথা বলা হয়েছে, তা এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ, দামে সস্তা এসব কোম্পানি মানে মোটেই ভালো নয়। কথায় আছে না, সস্তার চার অবস্থা। এসব কোম্পানির ক্ষেত্রেও তাই। তিনটি কোম্পানিরই কার্যক্রম বন্ধ।

সম্প্রতি দেশজুড়ে দাম নিয়ে তোলপাড় ফেলে দেওয়া পেঁয়াজ–কাণ্ডের কথা ভোলেননি নিশ্চয়। ৪০ টাকার পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ২৫০ টাকায়। অথচ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫৭ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৩২টি বা ৯৩ শতাংশের দাম প্রতি কেজি পেঁয়াজের ওই দামের চেয়ে কম। 

এবার আসুন, দেখা যাক এক শ টাকায় আপনি কত কোম্পানির কত শেয়ার কিনতে পারবেন। এখানে বলে রাখা ভালো, শেয়ারবাজারে শেয়ার বিক্রি হয় একটি, দুইটি, দশটি, এক শটি …এ হিসাবে। অর্থাৎ আপনার টাকায় যতটা কুলোয়, ততটা শেয়ার আপনি কিনতে পারবেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারের হিসাবে শেয়ারবাজারে ১০০ টাকার কমে বিক্রি হচ্ছে ২৯৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার ও ইউনিট। এগুলোর মধ্যে আবার ৩০টি ব্যাংকের শেয়ার। এর মধ্যে ৭টির দাম আবার ১০ টাকার নিচে। ব্যাংকের মধ্যে সর্বনিম্ন দাম আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের, মাত্র ২ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর ব্যাংকের শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে কম দাম ন্যাশনাল ব্যাংকের, ৭ টাকা ৮০ পয়সা। আর এবি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৭ টাকা ৯০ পয়সা।

সেই হিসাবে ১০০ টাকায় আপনি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের প্রায় ৩৬টি, ন্যাশনাল ও এবি ব্যাংকের প্রায় ১৩টি করে শেয়ার কিনতে পারবেন। বাজারে বর্তমানে যে ৭টি ব্যাংকের দাম ১০ টাকার নিচে রয়েছে, ১০০ টাকায় সেসব ব্যাংকের যেকোনোটির ১০টির বেশি শেয়ার কেনা যাবে। 

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৭টিরই দাম এখন ১০ টাকার কম। তাতে আপনি চাইলে এক থালা ভাতের দামের চেয়েও কম দামে শেয়ার কিনতে পারেন। 

বাজার বিশ্লেষকেরা বলে থাকেন, অনেক সময় শেয়ারের দামই বাজারে বিনিয়োগকারী টেনে আনে। বাজারের টানা পতনের কারণে দাম কমতে কমতে অনেক শেয়ারের দাম এমন এক পর্যায়ে নেমে আসে, যখন বিনিয়োগকারীরা সেই দামে আকৃষ্ট হয়ে টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারমুখী হন।

আমাদের শেয়ারবাজারে বর্তমানে ক্যান্ডির চেয়ে কম দামে শেয়ার মিলছে, তারপরও শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। কারণ, সুশাসনের ঘাটতি ও আস্থার সংকট তাঁদের বাজারবিমুখ করে রেখেছে। যার কারণে ১০০ টাকায় ১০টির বেশি শেয়ার কেনার সুযোগকেও কেউ কাজে লাগাচ্ছেন না।