রাজস্ব খাত: লক্ষ্য বড়, ঘাটতিও বিশাল

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

প্রতিবারই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়। কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় হয় না। তবে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ৫৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি দেখা গেছে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে। মোটা দাগে, বিদায়ী বছরে এই খাতে কোনো সুখবর আসেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বড় সংস্কার ছিল নতুন ভ্যাট আইন। কিন্তু এই আইনটিও এখন পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ে চমক দেখাতে পারেনি।

অর্থনীতির সূচকগুলো সাধারণত অর্থবছর ধরেই হিসাব করা হয়। পঞ্জিকা বর্ষ ধরে খুব একটা হিসাব করা হয় না। বাংলাদেশের অর্থবছর হলো এক বছরের ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। সেই হিসাবে বিদায়ী ২০১৯ সাল চলতি ও আগের অর্থবছরের ছয় মাস করে পড়েছে। যা-ই হোক, গত জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। তার আগের ছয় মাসে অবশ্য (২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর) আদায় হয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। 

গত জুন মাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ হয়। এর শেষ ছয় মাসে সোয়া ১ লাখ কোটি টাকা আদায় হয়। আর গোটা অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায় হয় ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। এতে ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এমন ঘাটতির মুখে এনবিআরকে চলতি অর্থবছরে সোয়া ৩ লাখ কোটি টাকার
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হয়। এনবিআরের সর্বশেষ হিসাবমতে, জুলাই-অক্টোবর চার মাসে শুল্ক-কর মিলিয়ে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকা, যা ৮৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০ হাজার ২২০ কোটি টাকা কম।

বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় ছাড়া অন্য সব সূচক যেমন, মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্প ও পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি, সার্বিক রপ্তানি, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে দুর্বলতা দেখা গেছে। যে কারণে রাজস্ব আদায় কমেছে। 

পঞ্জিকা বছর ধরলে, ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। প্রতি মাসে গড়ে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় হয়েছে। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়বে। এতে সার্বিকভাবে বাজেট ঘাটতি ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। 

নতুন ভ্যাট আইন

গত এক দশকের মধ্যে অর্থনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত সংস্কার কার্যক্রম হলো নতুন ভ্যাট আইন। এই আইনটি সম্পর্কে আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারের নামে অপসংস্কার হয়েছে। ২০১২ সালের আইনটি এত পরিবর্তন করা হয়েছে যে মূল আইনের অভীষ্ট লক্ষ্য এখন আর পূরণ হবে না। 

নতুন ভ্যাট আইনটির বাস্তবায়ন অনলাইনভিত্তিক করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা পুরোপুরি হয়নি। এতে আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ আগাম কর ফেরত পাওয়ার কোনো কৌশল ঠিক হয়নি। প্রথম চার মাসের ভ্যাট আদায় গতবারের একই সময়ের তুলনায় বাড়েনি বললেই চলে। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে তো ভ্যাট আগের চেয়ে কমেছে।