সরকারের তদারকি দুর্বলতায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়

জাহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি, মহাস্থানহাট আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি
জাহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি, মহাস্থানহাট আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি
>

দেশের অন্যতম সবজির মোকাম বগুড়ার মহাস্থানহাটে দৈনিক ২০০ ট্রাক সবজি বিক্রি হয়। সবজির বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন মহাস্থানহাট আড়ত ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার পারভেজ 

প্রথম আলো: শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর। সরবরাহ বেশি থাকার পরও দাম কমছে না কেন?

জাহিদুল ইসলাম: অক্টোবর থেকে জানুয়ারি—এ চার মাস শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুম। এই সময়ে বগুড়ার মহাস্থানহাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০০ ট্রাক সবজি ও আলুর জোগান যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এবার হাটে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেশ ভালো। তারপরও দাম চড়া। কারণ, গত বছর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’–এর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাতে সবজির খেত নষ্ট হয়। এতে ফলন বিপর্যয় ঘটে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় অধিকাংশ সবজির দাম বেশি।

প্রথম আলো: এবার কৃষকেরা বলছেন, কিছু সবজিতে বিপুল লোকসান দিচ্ছেন?

জাহিদুল ইসলাম: কয়েক বছর ধরেই মুলা চাষ করে লোকসান দিতে হচ্ছে কৃষকদের। এক বিঘা খেতে মুলা চাষে সব মিলিয়ে কৃষকের খরচ হয় গড়ে ১৮ হাজার টাকা। বিঘায় ১৫০ মণ মুলার ফলন হলেও ৮০ টাকা মণ দরে মুলা বিক্রি করে কৃষক হাতে পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। তাতে বিঘাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। এভাবে লোকসান দিতে থাকলে কৃষক সবজি চাষে নিরুৎসাহিত হবেন।

প্রথম আলো: কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা কম দামে সবজি কিনে বেশি লাভ করেন। ঠকছেন কৃষক।

জাহিদুল ইসলাম: সবজির দামের উত্থান-পতনে আড়তদারদের কোনো লাভ নেই। কারণ, এক কেজি কাঁচামালের ওপর নির্দিষ্ট কমিশন বা লাভ রেখে পাইকারি ব্যবসায়ী কিংবা পাইকারি মোকামে সবজি সরবরাহ করা হয়। সবজির দাম বেশি হলে উল্টো পুঁজির সংকটে পড়তে হয়। কারণ, আলুর বাজার ১০ টাকা কেজি থাকলে দুই ট্রাক আলু কিনতে যে পুঁজি লাগত, ২০ টাকা কেজি দরে আলু কিনতে দ্বিগুণ পুঁজির প্রয়োজন হচ্ছে। কেজিপ্রতি কমিশন কিন্তু বাড়েনি। তাই সবজির দাম কম-বেশি হলে তাতে আড়তদারের কোনো লাভ নেই।

প্রথম আলো: হঠাৎ করে মহাস্থানহাটেসবজির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করা হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?

জাহিদুল ইসলাম: সবজির দাম নির্ভর করে বাজারের চাহিদার ওপর। পুঁজির পরিমাণ ও আড়তের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী, প্রতিদিন একজন আড়তদারের নির্দিষ্ট পরিমাণ সবজি কেনার লক্ষ্য থাকে। সকালে যদি ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সবজি কেনা শেষ হয়ে যায়, তাহলে দেখা যায় দুপুরের পর বাজারে সবজির চাহিদা অনেক কমে যায়। ফলে বাজারে দাম কমে যায়। তাতে বাজারে সবজির দামের ওঠানামা করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বাজারে পণ্যের দামের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের জন্য বেশির ভাগ সময় ব্যবসায়ীদের দায়ী করা হয়। মূলত সরকারের তদারকি দুর্বলতার কারণেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়।