বগুড়া থেকে রপ্তানি ৬০৭ কোটি টাকা

বগুড়ার হালকা প্রকৌশল শিল্পের সুনাম দেশজুড়ে
বগুড়ার হালকা প্রকৌশল শিল্পের সুনাম দেশজুড়ে

দুই বছরের ব্যবধানে বগুড়া থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানি সাত গুণ বেড়েছে। গত বছর বগুড়া থেকে ভারত ও নেপালে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৬০৭ কোটি ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮ টাকা।

ভারতে রপ্তানিপণ্যের তালিকায় রয়েছে সেচপাম্প, রাইস ব্র্যান অয়েল, পাটজাত সুতা ও পাটের তৈরি ব্যাগ এবং ধানমাড়াই যন্ত্র। নেপালে রপ্তানি হয়েছে ভুট্টা। আর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বগুড়ার শোভা অ্যাডভান্সড টেকনোলজি লিমিটেডের কারখানা থেকে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউসের কাছে ডিজিটাল স্কেল সরবরাহ করে আয় হয়েছে আট কোটি মার্কিন ডলার।

রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেচপাম্প রপ্তানির মধ্য দিয়ে বগুড়ার পণ্যের যাত্রা শুরু হয় বিদেশের বাজারে। বর্তমানে কিছু রপ্তানিকারক বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে সার্টিফিকেট অব অরিজিন নিয়ে পণ্য রপ্তানি করছেন। আবার অনেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার থেকেও সার্টিফিকেট অব অরিজিন নিয়ে পণ্য রপ্তানি করছেন। এখন ভারত, নেপাল ছাড়াও বগুড়ার পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানসহ বিশ্বের অন্যান্য বাজারে।

বগুড়ার বাইরে থেকে সার্টিফিকেট অব অরিজিন নিয়ে রপ্তানিপণ্যের তালিকায় রয়েছে পাটের সুতা ও পাটজাত পণ্য, সৌদি রাজকীয় পোশাক, গার্মেন্টস পণ্য, জালি টুপি, হস্তজাত পণ্য, ট্রান্সফরমার, টিউবওয়েল, নকশিকাঁথা, আলু, মরিচ ও সবজি। 

বগুড়া শিল্প ও মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সমিতি থেকে ১ হাজার ৩৯০টি সার্টিফিকেট অব অরিজিনের মাধ্যমে ভারত ও নেপালের বাজারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় সোয়া সাত কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। এই অঙ্ক আগের দুই বছরের তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ধানের কুঁড়া থেকে তৈরি তেল বা রাইস ব্র্যান অয়েল।

গত বছর ভারতে ৪ কোটি ৫৪ লাখ ২ হাজার ৩৭৬ মার্কিন ডলারের রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি করেছে বগুড়ার শেরপুরের মজুমদার প্রোডাক্টস। এ ছাড়া বগুড়ার তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯০ মার্কিন ডলার, ওয়েস্টার্ন প্রোডাক্ট ৪১ লাখ ৮০ হাজার ১৬০ মার্কিন ডলার এবং কিবরিয়া ট্রেডার্স ৫৪ হাজার মার্কিন ডলারের রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানি করেছে। 

মজুমদার প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চিত্ত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে তাঁরা ভারতে এই তেল রপ্তানি করছেন। বিশ্ববাজারে এই তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তামিম অ্যাগ্রোর এমডি শাহজাহান আলী বলেন, ভারতের বাজারে রাইস ব্র্যান অয়েলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে অ্যান্টি ডাম্পিং ট্যাক্সের কারণে রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।

কিবরিয়া ট্রেডার্স রাইস ব্র্যান অয়েল ছাড়াও গত বছর প্রায় এক হাজার টন ভুট্টা রপ্তানি করেছে নেপালের বাজারে। এর রপ্তানিমূল্য ২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। এ ছাড়া তামিম অ্যাগ্রো প্রায় দুই লাখ ডলারের ভুট্টা রপ্তানি করেছে নেপালে।

ভারতের বাজারে বগুড়া থেকে বছরে রপ্তানি হয়েছে প্রায় দুই কোটি মার্কিন ডলারের পাটের সুতা, সুতলি ও পাটের ব্যাগ। হাসান জুট মিলস, বগুড়া জুট মিলস এবং নর্থবেঙ্গল গোল্ডেন ফাইবার অ্যান্ড ডাইভার্সিটি জুট মিলসের মাধ্যমে পাটজাত এসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০১৮ সালে পাটজাত পণ্যের রপ্তানিমূল্য ছিল দেড় কোটি মার্কিন ডলার।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে নর্থবেঙ্গল গোল্ডেন ফাইবার জুট মিলে তৈরি বিশেষ ধরনের সুতা রপ্তানি হয়েছে ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার ১০ থেকে ১২টি দেশে। 

বগুড়ার ফাউন্ড্রি কারখানায় দেশীয় কারিগরদের তৈরি সেচপাম্প রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বছরে প্রায় ৫০ হাজার সেচপাম্প ছাড়াও অন্যান্য কৃষি যন্ত্রাংশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিটি পাম্পের রপ্তানিমূল্য গড়ে ১৮ মার্কিন ডলার। সেচপাম্প ছাড়াও এর যন্ত্রাংশ, লাইনার এবং টিউবওয়েলও রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। ২০১৯ সালে সেন্টিফিউগাল পাম্প ও যন্ত্রাংশ এবং ধানমাড়াইয়ের যন্ত্র রপ্তানি করেছে রনি ইঞ্জিনিয়ারিং, মাইশা এন্টারপ্রাইজ ও মিলটন ইঞ্জিনিয়ারিং।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং জেলা চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার বাইরের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে বগুড়ার শেরপুর ও কাহালু উপজেলার গ্রামীণ নারীদের তৈরি নানা ধরনের হস্তশিল্প পণ্য। এই পণ্য রপ্তানি হচ্ছে জার্মান, সুইডেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের ১৮টি দেশে। বগুড়ায় তৈরি বিশেষ ধরনের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, কাতার, দুবাইসহ কয়েকটি দেশে। বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কাঁচা মরিচ, আলু ও সবজি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশের বাজারে। 

বগুড়ার শেরপুর, ধুনট উপজেলার শতাধিক গ্রামে নারীদের তৈরি জালি টুপি রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, দুবাই, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বছরে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার টুপি রপ্তানি হচ্ছে বলে বাংলাদেশ জালি টুপি ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে। 

বগুড়া জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর সমিতির মাধ্যমে গত বছর প্রায় সোয়া সাত কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বগুড়া থেকে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। ২০১৮ সালে রপ্তানি হয়েছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ ৪ হাজার ২৬০ মার্কিন ডলারের পণ্য। আর ২০১৭ সালে বিদেশে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। তিন বছরের ব্যবধানে রপ্তানি আয় প্রায় সাত গুণ বেড়েছে।