আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পথচলা

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর ফলে পাহাড়েও পৌঁছে গেছে ব্যাংক সেবা। খাগড়াছড়িতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটে ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন গ্রাহক। সম্প্রতি শহরের মহাজনপাড়া এলাকায়।  ছবি: নীরব চৌধুরী
এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর ফলে পাহাড়েও পৌঁছে গেছে ব্যাংক সেবা। খাগড়াছড়িতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটে ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন গ্রাহক। সম্প্রতি শহরের মহাজনপাড়া এলাকায়। ছবি: নীরব চৌধুরী
>

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি এ দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। সেই নীতিমালার আলোকে প্রথমবারের মতো এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংক এশিয়া। পরীক্ষামূলকভাবে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে চালু করা এ কার্যক্রম সফলতার মুখ দেখে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে দেশের ১৯টি ব্যাংক এ সেবা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। দেশজুড়ে চালু হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার আউটলেট। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নানা দিক নিয়ে আজকের অর্থ-বাণিজ্যের বিশেষ আয়োজন

বাংলাদেশ এগোচ্ছে। সমানতালে উন্নত হচ্ছে আর্থিক সেবাদান প্রক্রিয়াও। গত এক দশকে এ দেশের ব্যাংক খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এরপরও দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী রয়ে গেছে ব্যাংকিং সেবার বাইরে। ফলে তারা উন্নয়নস্রোতের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতেই আমরা ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করি। এর আগে ২০১২ সালে আমরা সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ প্রকল্পের সঙ্গে ব্যাংকিং সহযোগী হিসেবে যুক্ত হই। এ প্রকল্পে বিনা মূল্যে একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যার প্রদান করি, যাতে উপকারভোগী জনগোষ্ঠী অনলাইনে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সেবা পেতে পারেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ যাতে হাতের কাছে, স্বল্প খরচে ও গুণগত মানের প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা পান। আমাদের স্বপ্ন ছিল দেশের প্রতিটি মানুষের একটি করে ব্যাংক হিসাব থাকবে। আমরা সে পথেই সফলতার সঙ্গে এগোচ্ছি। আজ আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার পথচলার ষষ্ঠ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

মাত্র ৬ বছরে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। সব মিলিয়ে সারা দেশে এখন ১০ হাজারেরও বেশি এজেন্ট বুথ স্থাপিত হয়েছে। ২১টি ব্যাংক এ সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় এসেছে কয়েক লাখ মানুষ, যাদের অধিকাংশই দেশের পিছিয়ে থাকা গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও নারী।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও নিরাপদ করতে আমরা এর সঙ্গে যুক্ত করেছি বেশ কিছু উদ্ভাবনী। যার মধ্যে রয়েছে ২৫৯ ধরনের লেনদেনে বায়োমেট্রিকের ব্যবহার, কৃষকের ঋণসেবায় এ-কার্ড, দ্রুত ঋণ প্রদানে ওকাস সফটওয়্যার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক সেবায় মাইক্রো মার্চেন্ট মডেল, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সেবাদানে ইউডিসি ও ডাকঘর অন্তর্ভুক্তি, আর্থিক সেবা সম্প্রসারণে পার্টনারশিপ মডেল এবং পোশাক কারখানার অভ্যন্তরে ডিজিটাল বুথ স্থাপন।

ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম এখন দেশের প্রতিটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত। দেশজুড়ে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষ এর সুফল ভোগ করছে। এদের ৮২ শতাংশই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং ৬০ শতাংশ নারী। আমাদের এ বিশেষায়িত ব্যাংকিং চ্যানেলে সাধারণ মানুষের ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি জমা হয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা
তৈরি করেছি ‘অবিরাম’ নামের একটি পণ্য। দেশব্যাপী মাইক্রো-মার্চেন্টেরা এ সেবা সহায়তার মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

মো. আরফান আলী, এমডি, ব্যাংক এশিয়া
মো. আরফান আলী, এমডি, ব্যাংক এশিয়া

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দ্রুত সম্প্রসারণে ব্যক্তি, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সারা দেশে সাড়ে ৮ হাজার ডিজিটাল ডাকঘর রয়েছে। আমরা ৬৫টিরও বেশি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছি এ সেবাকে দ্রুত এগিয়ে নিতে।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত প্রকল্পের উপকারভোগী, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমরা এ চ্যানেল ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছি। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে এজেন্ট আউটলেট হিসেবে ব্যবহার করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, যুব ভাতা, উপবৃত্তিসহ সরকারের নানা আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি। গ্রাহকেরা এখানে সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ, রেমিট্যান্সের টাকা উত্তোলন, পাসপোর্ট ফি জমা এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারছেন অতি সহজে।

আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি গ্রামে ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। আমি বিশ্বাস করি ব্যক্তির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক ও শক্তিশালী প্রভাব ফেলবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অগ্রদূত হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: এমডি, ব্যাংক এশিয়া