উদ্যোক্তা হচ্ছেন নারীরাও

সেবা দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন নারীরা।  ছবি: ব্যাংক এশিয়া
সেবা দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন নারীরা। ছবি: ব্যাংক এশিয়া

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হাত ধরে গৃহিণী থেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের আলসিন আরিফা। গত ছয় বছরে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার তিনটি আউটলেট করেছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর পরিচালিত তিনটি আউটলেটে গ্রাহকসংখ্যা ৩ হাজারের বেশি।

আলসিন আরিফা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার প্রথম নারী এজেন্ট। তবে তাঁর শুরুর গল্পটা ততটা মসৃণ ছিল না। গতকাল নিজেই বললেন, ‘প্রথম আমরা যখন গ্রাহকদের কাছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ধারণা নিয়ে গেলাম, তখন তাঁরা বিশ্বাস করতে চাইতেন না। গ্রাহকেরা মনে করতেন, ডেসটিনির মতো আমরাও টাকা নিয়ে চম্পট দেব। ধীরে ধীরে মানুষের ধারণা পাল্টাতে শুরু করে। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়েছে।’

ব্যাংক এশিয়ার প্রস্তাবে সিরাজদিখানের রাজানগরে নিজের বাড়িতে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট করেন আলসিন আরিফা। তখন তিনি বিনিয়োগ করেন ২০ লাখ টাকা। পরের মাসেই চিত্রকুট এলাকায় দ্বিতীয় আউটলেট করেন। সে বছরের আগস্টে মরিচায় করলেন আরেকটি আউটলেট। বর্তমানে তাঁর তিনটি আউটলেটে কাজ করেন ছয়জন কর্মী। সেসব আউটলেটে অর্থ জমা থেকে শুরু করে ঋণ দেওয়া, প্রবাসী আয় উত্তোলনসহ বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায়।

আলসিন আরিফা বলেন, ‘বর্তমানে কেউ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট হলে ছয় মাসের মধ্যে মুনাফা করতে পারেন। তবে আমি শুরুতে তিন বছর নিজের পকেটের টাকায় কর্মীদের বেতন দিয়েছি। তারপর থেকে অল্পবিস্তর মুনাফা হচ্ছে।’

আলসিন আরিফার মতো অনেক নারীকে উদ্যোক্তা বানিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বর্তমানে ১৯টি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা রয়েছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছেন ৩৯ লাখ মানুষ। তাঁদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ, ৩৭ শতাংশ নারী ও ১ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক। সেবাটি সারা দেশে পৌঁছে দিচ্ছেন ৬ হাজার ৫৩১ এজেন্ট।

কুমিল্লার মেঘনায় দুই বছর আগে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) এজেন্ট হয়েছেন মাকসুদা বেগম। পেশায় সাইকোথেরাপিস্ট হলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হয়ে গেছেন তিনি। প্রাথমিকভাবে তাঁকে বিনিয়োগ করতে হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

বর্তমানে মাকসুদা বেগমের আউটলেটে কাজ করেন তিনজন কর্মী। বললেন, ‘অজপাড়াগাঁয়ের মানুষজনের জন্য কোনো রকম ব্যাংকিং সেবা ছিল না। তাই তাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমরা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত করছি।’

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট হয়েছেন রাঙামাটির সুচরিতা চাকমা। ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তার উৎসাহে দুই বছর আগে ডাচ্‌–বাংলার এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্ট হন তিনি। বর্তমানে রাঙামাটি সদর ও কাউখালী উপজেলায় দুটি আউটলেট আছে।

সুচরিতা চাকমা গতকাল বিকেলে বলেন, ‘প্রথমে যখন গ্রাহক করতে বিভিন্ন এলাকায় যেতাম, তখন মানুষ ভাবত ইনস্যুরেন্সের লোক আসছে। তবে তারা যখন দেখল আঙুলের ছাপ দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলছে এবং প্রতিটি লেনদেনের তথ্য মোবাইলে আসছে তারা তখন আশ্বস্ত হলো। বর্তমানে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, রেস্টুরেন্ট, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন।’

সুচরিতা চাকমা বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং লেনদেনের একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। সে জন্য অনেকেই সেবা নিতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। লেনদেন সীমাটি বাড়ানো গেলে আরও অনেক মানুষকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।