মুদ্রা থাকলেই বিনিময় করতে হয় না

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতে এখন নগদ মুদ্রায় লেনদেন কমে আসছে। অনেক দেশেই নগদহীন লেনদেনব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। ক্রেডিট কার্ড, ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার ও মুঠোফোনের মাধ্যমে এখন উন্নত দেশে সিংহভাগ লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মুদ্রা হারিয়ে গেছে। মুদ্রা কিন্তু থাকছেই, তা সে যে রূপেই হোক না কেন।

আবার সেই মুদ্রা বা অর্থের কারণে পৃথিবীতে অনেক অনর্থ হয়। অর্থের জন্য মানুষ অপরাধ করে। আবার অনেক ধর্মীয় রীতিতে মুদ্রা শ্রদ্ধার বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খুনের বিনিময়ে যে অর্থ দেওয়া হয়, ইংরেজিতে তা ব্লাড মানি হিসেবে পরিচিত। অনেক দেশের সংস্কৃতিতে কনের জন্য ‘ব্রাইড মানি’ দিতে হয়। আবার অনেক দেশে বরকে যৌতুক দিতে হয়। অর্থ মানুষ, পরিবার ও জাতিকে ক্ষমতা দেয়।

কথা হলো, অর্থ বা মুদ্রার প্রচলন না থাকলে মানুষ কী করত? স্বাভাবিকভাবেই তখন বিনিময় ছাড়া কিছু করার থাকে না। আবার এখনো কিন্তু আমরা মুদ্রা ছাড়া অন্য কিছুর বিনিময়ে কাজ করে থাকি, সেটাও একধরনের বিনিময়ব্যবস্থা। কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে এই বিনিময়প্রথা কীভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে চিন্তার অবকাশ আছে। ব্যাপারটা হলো, নতুন গাড়ির সঙ্গে কেউ যদি কয়েক টুকরা রুটি বিনিময় করতে চায়, তাহলে কী দাঁড়াবে। বিনিময়প্রথায় চাহিদা দুই পক্ষ থেকেই থাকতে হবে। অর্থাৎ এই ব্যবস্থায় এক ব্যক্তির কাছে এমন কিছু থাকতে হবে, যা অপর ব্যক্তির প্রয়োজন এবং তার কাছে আবার এমন কিছু থাকতে হবে, যা সেই ব্যক্তির প্রয়োজন। এই সমীকরণ মেলানো কঠিন।

এখানেই মুদ্রার কেরামতি। মুদ্রা থাকলে আর এত কিছু মেলানোর প্রয়োজন হয় না। শুধু মুদ্রা দিলেই ল্যাটা চুকে যায়। মুদ্রা হস্তান্তরযোগ্য, তা আবার ধরে রাখাই যায়। বিক্রেতা আবার মুদ্রা ধরে রেখে সময়মতো যা খুশি কিনতেও পারেন। অনেকেই আবার বলেন, মুদ্রার বিনিময় ছাড়া আজকের এই জটিল সমাজ-সভ্যতা গড়েই উঠত না। এই মুদ্রার নিরিখে আবার সবকিছুর মূল্য পরিমাপ করা যায়। সব পণ্যের অর্থমূল্য থাকলে আমরা মূল্যের তুলনা করতে পারি।

মুদ্রার যত রূপ

দুই ধরনের মুদ্রার অস্তিত্ব দেখা যায়, একটি হলো পণ্য, আরেকটি সরকারি নোট। পণ্য রূপের আবার সুনির্দিষ্ট মূল্য ছাড়াও অন্তর্নিহিত মূল্য আছে। সোনার কয়েন যখন মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন এটি এই রূপ পরিগ্রহ করে। আর সরকারি নোটের প্রথম অস্তিত্ব দেখা যায় দশম শতকে ইংল্যান্ডে। এটি শুধু বিনিময়ের মাধ্যম। সরকার-নির্ধারিত মূল্য ছাড়া এর অন্য অর্থ নেই।

কাগুজে মুদ্রা প্রাথমিকভাবে সোনার বিপরীতে অর্থ পরিশোধের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তত্ত্বগতভাবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে ডলার ছাড়ে, তা সোনার মূল্যের নিরিখে বিনিময় করা যায়। তবে ১৯৭১ সালের পর থেকে ডলার আর সোনার মূল্যের সাপেক্ষে বিনিময় করা হচ্ছে না। মার্কিন অর্থ বিভাগের জারি করা মূল্যেই এটি বিনিময় হয়। এই মুদ্রার মূল্যমান আবার দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভরশীল, যার নিশ্চয়তা সব সময় দেওয়া যায় না।

মুদ্রা এল যেভাবে

● কুবলাই খান মোঙ্গল সাম্রাজ্যে ১৩ শতকে প্রথম সরকারি নোট প্রবর্তন করেন।

● এর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে রৌপ্যমুদ্রা মুদ্রার একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। নির্দিষ্ট ওজনের বারলি সোনা বা রুপার নির্দিষ্ট মূল্যের সমান।

● খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ সালে গ্রিসের এজিনা দ্বীপে পৃথিবীর প্রথম কয়েন তৈরি করা হয়।

● এরপর ১৩ শতকে মার্কো পোলো চীন থেকে ইউরোপে মুদ্রা নিয়ে যান। ইতালীয় ব্যাংকাররা এটি ব্যবহার করেছেন।

● ১৬৯৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে ব্যাংক অব স্কটল্যান্ড প্রথম মুদ্রা প্রচলন করে।

● ১৯৭১ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মার্কিন ডলারকে সোনায় রূপান্তরের বিধি বাতিল করেন।

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, লন্ডন থেকে ডিকে প্রকাশনের প্রকাশিত দ্য ইকোনমিকস বুক থেকে নেওয়া।