ভারতীয় রুপির নোটে কেন ১৭ ভাষা

আকারের দিক থেকে কিংবা দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক নোটের মধ্যে অনেকটা মিল পাওয়া যায়। মিল থাকে নোটের মূল্যমানেও। যেমন ১০ টাকা, ১০ রুপি, ১০ ডলার, ১০ দিরহাম ইত্যাদি। যদিও নোটগুলোতে ব্যবহার করা ছবি, সংকেত কিংবা উপস্থাপনায় থাকে নানা বৈচিত্র্য। সাধারণত একটি বা দুটি ভাষায় নোটের মূল্যমানের কথা উল্লেখ করা থাকে।

ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের ব্যাংক নোটের মূল্যমান শুধু একটি ভাষায় উল্লেখ করা থাকে, আর তা হলো নিউম্যারিক (একই রকম)। ইংরেজিই সেসব দেশের প্রধান ভাষা। আবার কোনো কোনো দেশের ব্যাংক নোটে দুটি ভাষায় মূল্যমানের উল্লেখ দেখা যায়। যেমন আমাদের টাকা। মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার সঙ্গে রয়েছে ইংরেজি। তেমনি আমিরাতি দিরহামে আরবি ভাষার সঙ্গে রয়েছে ইংরেজি। মালয়েশিয়ার রিংগিতে মালয় ভাষার সঙ্গে রয়েছে ইংরেজি। যদিও মালয় ভাষায় কোনো ফন্ট নেই, তাই ইংরেজিতে তা প্রকাশ করে দেশটি।

ব্যাংক নোটে এক বা দুটি ভাষা তো স্বাভাবিকই। কিন্তু এক ব্যাংক নোটেই মূল্যমান যদি ১৭ ভাষায় উল্লেখ করা হয়, সেটা অবাক করার মতোই ব্যাপার। আমাদের প্রতিবেশী ভারতের রুপিতেই ব্যাংক নোটগুলোতে ১৭ ভাষায় মূল্যমান উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া’র ওয়েবসাইট বলছে, দেশটির ব্যাংক নোটগুলোতে মূল্যমান উল্লেখ করতে নোটের গায়ে ১৫ ভাষায় লেখা একটি প্যানেল থাকে। এর বাইরে রাষ্ট্রভাষা হিন্দি ও আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতে আলাদা করে মূল্যমান উল্লেখ করা হয়।

প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের মানুষের মুখে শতাধিক ভাষা শোনা যায়। যদিও দেশটির সংবিধানে ২২টি তফসিলি ভাষা (শিডিউলড ল্যাঙ্গুয়েজেজ) উল্লেখ রয়েছে। হিন্দি ও ইংরেজি দেশটির অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। ব্যাংক নোটে তফসিলি ২২টি ভাষার মধ্যে ১৫টি ভাষা মূল্যমান উল্লেখ করা হয়। সেগুলো ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম অনুযায়ী লেখা হয়। সেগুলো হলো অসমিয়া, বাংলা, গুজরাটি, কন্নড়, কাশ্মীরি, কঙ্কানি, মালয়ালম, মারাঠি, নেপালি, ওডিশা, পাঞ্জাবি, সংস্কৃত, তামিল, তেলেগু ও উর্দু।

২০১৮ সালের জুনে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ভারতের আদমশুমারি নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ৪৪ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হিন্দি। এরপরেই রয়েছে বাংলা ভাষা (৮.৩%)। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে মারাঠি (৭.০৯%), তেলেগু (৬.৯৩%)। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে গুজরাটি (৪.৭৪%) এবং সপ্তম স্থানে উর্দু (৪.৩৪%) ভাষা।

ব্যাংক নোটে ১৭ ভাষায় মূল্যমান উল্লেখ করার ক্ষেত্রে কোন ভাষার মানুষ কত বেশি, সেটিই মূলত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুনে দ্য ইকোনমিক টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তফসিলি ২২টি ভাষা হলো ভারতের মোট জনসংখ্যার ৯৬ দশমিক ৭১ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা। অর্থাৎ বাকি ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ মানুষ ভিন্ন মাতৃভাষায় কথা বলে। মূলত, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। গুরুত্ব পেয়েছে মুদ্রার মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।