মজুরি ও বেতন থেকে বেশি কর নেওয়া অযৌক্তিক

বিল গেটস
বিল গেটস

বছরের শেষ নোটে এবার আমি কাজের ফিরিস্তি দেব না, বরং অসমতা নিয়ে দু কথা বলব। বিশেষ করে এমন একটি বিষয়ের অবতারণা আমি করব, যে বিষয়টি ২০১৯ সালে আমাদের আলোচনার তালিকায় সামনের সারিতে ছিল এবং ২০২০ সালে তা আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠবে। বিষয়টি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করব্যবস্থা। ছুটির সময় আলোচনার জন্য এটি আলোচনার খুব আনন্দজনক বিষয় নয়, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন এ নিয়ে অনেক বড় বড় বিতর্ক হচ্ছে।

যেসব বিষয়ে আমি কাজ করি, অর্থাৎ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, লোকে সাধারণত তা নিয়েই আমাকে জিজ্ঞাসা করে থাকে। তা সত্ত্বেও কর নিয়ে মানুষ আমাকে কম প্রশ্ন করে না। বুঝতে পারি, এ নিয়ে কেন এত প্রশ্ন ওঠে। স্বাভাবিকভাবে এসব বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতেই আমার বসবাস। 

কথা হলো, উচ্চ হারের করের পক্ষে কথা বললে সব সময় সমর্থন পাওয়া যায় না। তবে অনেক মার্কিন নাগরিক যে এ নিয়ে কথা বলছেন, তা-ও অনেক বড় ব্যাপার। আর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে যতটা পারা যায়, ততটাই পরিষ্কার আমি থাকতে চাই। 

আমি বুঝি, বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য মার্কিন সরকারের যত রাজস্ব দরকার, ততটা জোগাড় করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। এটা বাস্তবতা, মূল্যায়ন নয়। মার্কিন সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২০ শতাংশ রাজস্ব হিসেবে আহরণ করলেও খরচ করে ২৪ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়, খরচের বহর আগামী দিনে আরও বাড়বে। 

অন্যদিকে সম্পদের ব্যবধান আরও বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আয় করা মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে কম আয় করা মানুষের ব্যবধান গত ৫০ বছরে অনেক বেড়েছে। আর আমি যে কাজ করি, তার তুলনায় সামঞ্জস্যহীনভাবে আমি অনেক বেশি উপার্জন করি। খুব কম মানুষই বেশি কিছু অর্জন করতে পারে। অনেক মানুষই উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কোনোমতে জীবন ধারণ করেন। 

এসব কারণে আমি এমন ধরনের করব্যবস্থার পক্ষে, যেখানে আপনার যত বেশি টাকা থাকবে, আপনাকে তত বেশি কর দিতে হবে। তাই বলব, বর্তমানে ধনীরা যত টাকা কর দেন, তাঁদের এর চেয়ে আরও বেশি কর দেওয়া উচিত। এই ধনীদের মধ্যে অবশ্যই আমি ও মেলিন্ডা অন্তর্ভুক্ত। 

করব্যবস্থার ব্যাপারে আমি বিশেষজ্ঞ না হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করব্যবস্থাকে আরও ন্যায্য করার জন্য আমি কিছু কথা বলতে চাই। ব্যাপারটা হলো, রাজস্বের ভার আমাদের ক্রমবর্ধমান হারে পুঁজির ঘাড়ে চাপানো উচিত। অর্থাৎ ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বাড়িয়ে শ্রম করের সমান করতে হবে।

মার্কিন সরকার এখন শ্রম রাজস্বের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। দেশটির রাজস্বের তিন-চতুর্থাংশ আসে মজুরি ও বেতনের কর থেকে। অধিকাংশ মানুষের আয়ের উৎস হচ্ছে মজুরি ও বেতন, এই আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ করারোপ করা হয়ে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে ধনী মানুষের আয়ের সামান্য অংশ আসে বেতন থেকে, তাঁদের সিংহভাগ আয় বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে। যেমন স্টক বা রিয়েল এস্টেট থেকে প্রাপ্ত আয়, এই আয় যদি কেউ এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখেন, তাহলেই কেবল তাতে ২০ শতাংশ করারোপ করা হচ্ছে। 

ব্যাপারটা হলো, এই ব্যবস্থা যে ন্যায়পরায়ণ নয়, এটি তার সবচেয়ে নির্জলা দৃষ্টান্ত। আজ আমরা যেভাবে কাজের চেয়ে সম্পদকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, সেটা ঠিক নয়। অন্তত আমি এর যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না। 

বিল গেটসের ব্লগ গেটসনোটস থেকে নেওয়া। অনুবাদ প্রতীক বর্ধন