সিরামিকের ১১

সিরামিক খাতে মোট কোম্পানি ৬৬টি। এর মধ্যে কেউ শুরুর দিকে শুরু করে এখনো সেরার তালিকায়। কেউ নতুন এসেই বাজার হিস্যার একটা বড় অংশ দখল করেছে। কেউ কেউ আবার সেরা মানের পণ্য তৈরি করে নজর দিচ্ছে উচ্চ আয়ের মানুষের বাজারে। এমন ১১টি কোম্পানি নিয়ে এই আয়োজন।

মুন্নু দেখিয়েছে রপ্তানির পথ

মুন্নু সিরামিক দেশের সিরামিকের তৈজসপত্র রপ্তানির পথ দেখানো প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালেই রপ্তানি শুরু করে। সর্বশেষ হিসাবে, মোট তৈজসপত্র রপ্তানির চার ভাগের এক ভাগের মতো করে মুন্নু সিরামিক। বর্তমানে তারা ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে রপ্তানি করছে। দেশের বাজারেও মুন্নু সুপরিচিত ব্র্যান্ড। 

মুন্নু সিরামিক দেশের পুরোনো ও সেরা মানের তৈজসপত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। দেশে দুটি কোম্পানির বোন চায়না (পশুর হাড়ের) তৈজসপত্র তৈরির কারখানা রয়েছে, যার একটি মুন্নুর। 

মুন্নু সিরামিক প্রতিষ্ঠা করেন প্রয়াত হারুনুর রশিদ খান মুন্নু। তাঁর বড় মেয়ে আফরোজা খান এখন মুন্নু গ্রুপের চেয়ারম্যান। তাঁদের সিরামিক ছাড়াও বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে। 

মানিকগঞ্জে প্রায় ৪৫ একর জমিতে মুন্নু সিরামিকের কারখানা। জাপান ও জার্মানির যন্ত্রপাতিতে সেখানে সিরামিকের তৈজসপত্র তৈরি হয়। এর উৎপাদন ক্ষমতা মাসে ২০ লাখ পিস। মুন্নু সিরামিকের অন্তত ৬টি বৈশ্বিক সংস্থার মানসনদ রয়েছে। এটি পুঁজিবাজারেও নিবন্ধিত। 

মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, গ্যাস–সংকট কেটে যাওয়া ও কিছু আর্থিক জটিলতা কাটিয়ে মুন্নু সিরামিক এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করেছে। এখন সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩০টি দেশে যায় মুন্নুর সিরামিকের পণ্য। 

তৈজসপত্রে হিস্যায় বড় শাইনপুকুর

শাইনপুকুর সিরামিক দেশের সুপরিচিত ব্র্যান্ড। স্থানীয় ও রপ্তানি বাজারের হিস্যায় তারা সবার চেয়ে বড়। সর্বশেষ হিসাবে, স্থানীয় বাজারে শাইনপুকুরের হিস্যা ১৮ শতাংশ। রপ্তানিতেও শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান।

শাইনপুকুর সিরামিক বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। এর চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান। ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এখন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। 

শাইনপুকুর সিরামিক ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৯ সালে। ওই বছরই তারা রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে ৩০টির মতো দেশে তাদের সিরামিকের তৈজসপত্র রপ্তানি হয়। অনেকবার তারা রপ্তানিতে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি পদক পেয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয়। 

শাইনপুকুরের কারখানা গাজীপুরের কাশিমপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে। জমির পরিমাণ প্রায় ২৫ একর। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরের শাইনপুকুর ৮৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। দেশের বাজারে বিক্রি করেছে ৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৫৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেশি। 

শাইনপুকুরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, প্রতিষ্ঠানটিতে ২ হাজার ৯৭৬ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছে ফার

ফার সিরামিক দেশের সিরামিক তৈজসপত্রের বাজারে হিস্যায় তৃতীয়। তারা সুপরিচিত ব্র্যান্ড। রপ্তানিতেও ভালো করছে ফার।

ফার সিরামিকের কারখানা যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালে। এটি প্রতিষ্ঠা করেন ইফতেখার উদ্দিন, যিনি এর আগেও দুটি কারখানা করেছিলেন। একটি ১৯৮৮ সালে, বান থাই সিরামিক। অন্যটি ১৯৯২ সালের দিকে, ফুওয়াং সিরামিক। এটি ছিল কোরীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ। পরে তিনি নিজস্ব উদ্যোগে ফার সিরামিক প্রতিষ্ঠান করেন। 

শুরু থেকেই ফার রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করছে। তাদের কারখানায় জার্মানি ও ইতালির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রিন্টিংয়ে ব্যবহার করে জাপানের প্রযুক্তি।

ফারের কারখানা গাজীপুরে। ফার ইউরো ফাইন পোর্সেলিন, ফার ফাইন আইভরি ও ফার হাই অ্যালুমিনা পোর্সেলিন তাদের পণ্যের কয়েকটি ধরন। ফারের বাজার মূলত মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম আয়ের মানুষ। 

ইফতেখার উদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী ও তিন ছেলে মিলে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। ছেলেদের একজন ফারের পরিচালক ইরফান উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে বেশ ভালো চাহিদা আছে। ব্যবসাও মোটামুটি ভালো। আমরা কারখানা সম্প্রসারণে যাচ্ছি। আগামী জুন নাগাদ আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ শতাংশ বাড়বে।’ 

সেরার তালিকায় আকিজ সিরামিক

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আকিজ সিরামিক। ময়মনসিংহের ত্রিশালে তাদের কারখানা উৎপাদন শুরু করে ২০১২ সালে। ইতিমধ্যে বাজার হিস্যা ও গুণগত মানের দিক দিয়ে আকিজ সিরামিক সেরার তালিকায় চলে এসেছে।

আকিজ প্রথমে টাইলস উৎপাদন শুরু করে। পরে রোসা ব্র্যান্ডের স্যানিটারিওয়্যার বাজারে নিয়ে আসে। টাইলসে শুরুতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল দৈনিক ২০ হাজার বর্গমিটার। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইউরোপীয় প্রযুক্তিতে তারা উৎপাদন ক্ষমতা আরও প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটার বাড়িয়েছে। আকিজ সিরামিকে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ হাজার মানুষের।

আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সেখ আকিজ উদ্দিন। পাট, খাদ্যপণ্য, সিমেন্ট, ইস্পাত, বস্ত্র, প্লাস্টিক, চাসহ বিভিন্ন খাতে তাদের ব্যবসা রয়েছে। সিরামিক খাতেও তাদের অবস্থান সুদৃঢ়।

আকিজ বলছে, তাদের সিরামিক পণ্যের ব্যবসা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ব্র্যান্ডের পরিচিতি ও বিক্রির দিক দিয়ে তারাই সেরা। নতুন চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা নতুন নতুন পণ্য ও ব্র্যান্ড নিয়ে আসছে।

আকিজ আরও জানিয়েছে, তারা নিজের রোসা ব্র্যান্ডের স্যানিটারিওয়্যার মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানি করে। অবশ্য এখন তাদের লক্ষ্য স্থানীয় বাজারে প্রবৃদ্ধি ও নিজেদের অবস্থান ধরে রাখা। ভবিষ্যতে তারা রপ্তানিতে আরও নজর দেবে।

দুই দশক ধরে ব্যবসা করছে আরএকে

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত আরএকে সিরামিকস বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২০০০ সালের ১২ নভেম্বর।

বর্তমানে টাইলসের পাশাপাশি বাথরুম ফিটিংস ও স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করে আরএকে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের কারখানায় বিশ্বখ্যাত এসএসিএমআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। 

আরএকের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা টাইলসে ১ কোটি ১৬ লাখ বর্গমিটার ও স্যানিটারি ওয়্যারে ১৪ লাখ পিস। সব মিলিয়ে আড়াই হাজার নকশার সিরামিক ও পরিসিলিন টাইলস তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। ৩০ ধরনের স্যানিটারি ওয়্যার পণ্য আছে তাদের। শতাধিক ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে পণ্য সরবরাহ করে থাকে তারা। 

আরএকে তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, তারা সব সময় উৎপাদন সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করে। ২০১৬ সালেই তাদের টাইলস উৎপাদন সক্ষমতার ৬৮ শতাংশ এবং স্যানিটারি ওয়্যারের সক্ষমতার শতভাগ ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয় আরএকে সিরামিকস।

আবুল খায়েরের স্টেলার সাফল্য

সিরামিক খাতে বিনিয়োগ রয়েছে সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপেরও। তারা উৎপাদন করে স্যানিটারি ওয়্যার, যার ব্র্যান্ড নাম স্টেলা। আবুল খায়ের ইতালির প্রযুক্তিতে নিজেদের কারখানা করেছে।

আবুল খায়েরের নজর একটু উচ্চ আয়ের মানুষের বাজারে। এ দেশে যাঁরা সাধ্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য কিনতে চান, তাঁদের জন্যই স্টেলা সিরামিকের স্যানিটারি ওয়্যার তৈরি করে বলে তাদের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে। 

স্টেলা জানায়, তাদের কারখানা গাজীপুরের কালীগঞ্জে। ২০১১ সালে তাদের কারখানা যাত্রা শুরু করে। ইতিমধ্যে বাজারের একটি বড় হিস্যা দখল করেছে তারা। 

আবুল খায়ের দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর একটি। তাদের ইস্পাত, সিমেন্ট, তামাক, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা রয়েছে। সিরামিক খাতে ব্যবসায় নেমে তারা ইতালীয় নকশায় পণ্য উৎপাদন শুরু করে। এখন সিরামিক খাতেও তারা বড় কোম্পানির তালিকায় এসেছে। কারখানায় তারা সিরামিক পণ্য উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত কাঁচামাল ব্যবহার করে। যাতে নিখুঁত ও উচ্চ গুণগতমানের পণ্য উৎপাদিত হয়। স্টেলা নানা নকশা ও রঙের বেসিন, কমোড, প্যান ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে। 

নতুন এসে ভালো করছে ডিবিএল

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের সফল শিল্পগোষ্ঠী ডিবিএল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডিবিএল সিরামিক ২০১৭ সালের এপ্রিলে তাদের পণ্য বাজারজাত শুরু করেছে।

গাজীপুরের মাওনায় ৩০ একর জমির ওপর ডিবিএল সিরামিকের কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা দৈনিক ৪৫ হাজার বর্গফুট টাইলস। এতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ডিবিএল গ্রুপ। ইতিমধ্যে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো টেকনিক্যাল পোর্সেলিন ও সুগার কোটেড টাইলস নিয়ে এসেছে। টেকনিক্যাল পোরসেলিন টাইলস ভারী যন্ত্রপাতি চলে এমন যেকোনো কিছুর ভার নিতে সক্ষম। ফলে এই টাইলস হাসপাতাল, কারখানা, অফিস কিংবা এয়ারপোর্টে ব্যবহার করা যায়। আর সুগার কোটেড টাইলস দেখতে চিনির দানার মতো, যা বাথরুমে পিচ্ছিল ফ্লোরে ব্যবহার উপযোগী। 

ঢাকার বাংলামোটরের হাতিরপুলে ডিবিএল সিরামিক এক্সক্লুসিভ ডিসপ্লে সেন্টার করেছে। সেখানে ক্রেতারা সব ধরনের টাইলসের মধ্য থেকে পছন্দের টাইলস বেছে নিতে পারেন। ডিবিএল সিরামিক ইউরোপীয় ব্র্যান্ড বিগ স্ল্যাব টাইলস জিগাসার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় পণ্য নিয়ে আসছে। নতুন নতুন পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে বছর তিনেকের মধ্যেই বাজারে শক্ত জায়গা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে টাইলস রপ্তানির পরিকল্পনা করছে ডিবিএল। 

আরও দুটি ইউনিট করছে শেলটেক

আবাসন খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান শেলটেক। তিন দশকের যাত্রায় অন্য অনেক খাতের ব্যবসায় নিজেদের যুক্ত করেছে তারা। যার সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে টাইলস। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভোলায় তাদের কারখানার একটি ইউনিটে মেঝে (ফ্লোর) ও দেয়ালের (ওয়াল) টাইলস উৎপাদন শুরু হয়। সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টাইলস উৎপাদনের জন্য ইউরোপীয় প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি সংযোজন করেছে শেলটেক।

বর্তমানে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ১ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট। আগামী অক্টোবরে তাদের বাকি দুইটি ইউনিটের যন্ত্রপাতি সংযোজন শেষ হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে দুই ইউনিট। তখন শেলটেকের টাইলসের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ৪ লাখ ৭৫ হাজার বর্গফুট। ৯৬ ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে টাইলস সরবরাহ করছে শেলটেক। বর্তমানে বেসিক টাইলস করলেও ভবিষ্যতে ভ্যালু অ্যাডেড টাইলস উৎপাদন করব তারা।

দেশীয় বাজারে শক্ত অবস্থান করার পর রপ্তানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে প্রতিষ্ঠানটির। শেলটেক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আবাসনে মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে শেলটেক। টাইলসেও মানসম্মত পণ্য উৎপাদনে কোনো ছাড় দিতে চাই না আমরা। তাই আমরা কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছি।’

বাজারে অবস্থান শক্ত গ্রেটওয়াল ও চারুর

টাইলসের বাজারে ২০০৬ সাল থেকে আছে গ্রেটওয়াল সিরামিক। গাজীপুরের শ্রীপুরে তাদের ৪ লাখ ৪৮ হাজার বর্গফুটের কারখানায় ইতালি ও স্পেনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

গ্রেটওয়াল সিরামিকের মাসিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার। তাদের কারখানায় কর্মরত আছেন ১ হাজার ১০০ জন। বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্টার সিরামিকসের বাজার হিস্যা ছিল ১৪ শতাংশ। 

গ্রেটওয়ালের মালিকপক্ষ ২০১৭ সালে চারু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ নামে নতুন কারখানা করে হবিগঞ্জের মাধবপুরে। সেখানে ইতালি, তুরস্ক ও চীনের যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। ৪ লাখ বর্গফুটের এই কারখানায় কাজ করেন ১ হাজার ৫০ জন কর্মী। 

ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, চীন, সৌদি আরব, ফিনল্যান্ড থেকে কাঁচামাল আমদানি করে চারু।

উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে মীর

মীর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মীর সিরামিকস ২০০৩ সাল থেকে টাইলসের বাজারে আছে। গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনায় তাদের কারখানার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার টাইলস। তাদের কর্মীসংখ্যা ৯৫০।

নিজেদের কারখানায় ইতালিয়ান যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে মীর। তাদের কাঁচামাল মালয়েশিয়া, ইউক্রেন, স্পেন ও ভারত থেকে আসছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্প্রতি কারখানা সম্প্রসারণ করছে মীর সিরামিকস। তাতে আগামী মাসেই তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হবে দৈনিক ৩৫ হাজার ৩০০ বর্গমিটার। 

তখন মীর সিরামিক বাজারে নিয়ে আসবে কারবিন মেট টাইলস। এই টাইলসের রং দীর্ঘস্থায়ী। বর্তমানে ২৪ ইঞ্চি বাই ২৪ ইঞ্চি টাইলস তৈরি করলেও শিগগিরই ১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১ মিটার প্রস্থের টাইলস উৎপাদনে যাবে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন) কাজী মো. আব্দুল্লাহ ফারুক। 

বর্তমানে মীর সিরামিকের দখলে রয়েছে মেঝে ও দেয়ালের টাইলসের ৮ শতাংশের বাজার। কোরিয়া, ভারত ও কানাডায় রপ্তানির জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে তাদের। 

স্টার সিরামিকস রপ্তানিতে আছে

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে দেড় লাখ বর্গমিটার কারখানায় ২০১৩ সালে বাণিজ্যিকভাবে টাইলস উৎপাদন শুরু করে বাংলাদেশ ও লেবাননের যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানি স্টার সিরামিকস।

২০১৫ সালে স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন শুরু করে তারা। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান। স্টারের কারখানাটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৭৩ লাখ বর্গমিটার টাইলস ও ৫ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন ৬ শতাধিক শ্রমিক। 

স্টার সিরামিকসের দাবি, তারাই প্রথম দেশের বাজারে ২ ফুট বাই ৪ ফুট ও ২ ফুট বাই ৩ ফুটের টাইলস নিয়ে আসে। তা ছাড়া টাইলসে প্রথম ডিজিটাল প্রিন্টিং প্রচলনও করে তারা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারত, ভুটান ও কানাডায় সিরামিক পণ্য রপ্তানি করেছে স্টার সিরামিকস। তাদের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে টাইলস বেশি, তবে অল্প পরিমাণে স্যানিটারি ওয়্যার আছে। 

বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্টার সিরামিকসের বাজার হিস্যা ছিল ১৫ শতাংশ।