সরকারি ব্যাংকের জন্য নির্দেশনা: প্যানেল আইনজীবী হবেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের

অর্থ মন্ত্রণালয়
অর্থ মন্ত্রণালয়

কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনেক প্যানেল আইনজীবীর কাজেই সন্তুষ্ট নন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাঁর নজরে এসেছে অনেক আইনজীবী ২০ থেকে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের আইনজীবী হিসেবেও কাজ করছেন। রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হওয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে তাঁদের অনেকে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে পারছেন না। ফলে একদিকে মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না, অন্যদিকে সরকারি গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে ৮ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে নিজের এ অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন তিনি।

আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। মন্ত্রণালয় বলেছে,
এখন থেকে প্যানেল আইনজীবীদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির লোক হতে হবে। পাশাপাশি থাকতে হবে তাঁদের পেশাগত দক্ষতা। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে সম্মতি দেওয়ার পর গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ২০টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে আইনজীবী নিয়োগে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ নির্দেশনা গতকাল থেকেই কার্যকর।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মামলা একটি সাধারণ বিষয়। আবার ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও রয়েছে এসব সরকারি ব্যাংক ও সংস্থার মামলা। এসব মামলা পরিচালনা করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে আইনজীবীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে, তাঁদের বলা হয় প্যানেল আইনজীবী। আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র নিয়েই এ নিয়োগ দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজারের মতো মামলা রয়েছে, যেগুলোতে আটকে আছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। তবে পুরো ব্যাংকিং খাতে মামলায় আটকা ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৫৬ জন প্যানেল আইনজীবী ও ১০ জন বিশেষজ্ঞ আইনজীবী রয়েছেন।

 আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আরও বলেছে, প্যানেল আইনজীবী নিয়োগে এ বিভাগের আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও দপ্তরের জন্য একটি করে কমিটি করতে হবে। কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন প্রতিনিধি থাকবেন। আইনজীবীরা নিয়োগ পাবেন দুই বছরের জন্য। নিয়োগ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো আইনজীবীদের কাজ মূল্যায়নের জন্য কিছু সূচক নির্ধারণ করে দেবে।

কেন এই চিঠি—জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের স্বার্থেই নতুন নির্দেশনা।’ এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।

তবে অ্যাটর্নি জেনারেল যে বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন, সেটাই আসেনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনায়। অ্যাটর্নি জেনারেলের চিঠিতে বলা হয়েছিল, কোনো আইনজীবী যাতে দুই থেকে তিনটির বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্যানেল আইনজীবী হতে না পারেন, সে ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন।

অ্যাটর্নি জেনারেলের চিঠিতে আরও বলা হয়, সহকারী, ডেপুটি, অতিরিক্ত থেকে শুরু করে অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সরকারি কৌঁসুলিদের সহযোগিতা করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার্থে মামলা করার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু আইনজীবীদের অধিকাংশই ২০ থেকে ২৫টি বা তারও বেশি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাচ্ছেন এবং সংশ্লিষ্ট আইন শাখাগুলোতে যোগাযোগ করে তাঁরা দীর্ঘদিন পদগুলো দখল করে আসছেন। আবার সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্যানেল আইনজীবী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তাঁরা সরকারি মামলা পরিচালনা করছেন কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বার বা বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোতে ভিন্ন রাজনীতি করছেন। এতে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনায় দুই থেকে তিনটির বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্যানেল আইনজীবী হতে না পারার বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার প্রধান চাওয়াই ছিল এটা, অথচ এটাই নেই। আমি চাইব এটা অন্তর্ভুক্ত হোক।’ একজন আইনজীবী কোন কোন সরকারি দপ্তরে কাজ করছেন, তার ঘোষণাও থাকতে হবে বলে মনে করেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন নির্দেশনা না দেখে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অল্প টাকায় আইনজীবী নিয়োগ দিলে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ কোনো দিনই হাসিল হবে না। এ ব্যাপারেও নির্দেশনায় কিছু থাকা উচিত।