বিক্রি হচ্ছে আগোরা, কিনছে মীনা

দেশের প্রথম সুপারশপ আগোরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে তাদের ১৭টি বিপণি বা স্টোর রয়েছে। ঢাকার সীমান্ত স্কয়ারের আগোরা থেকে কেনাকাটা করে বের হচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল বিকেলে।  ছবি: প্রথম আলো
দেশের প্রথম সুপারশপ আগোরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে তাদের ১৭টি বিপণি বা স্টোর রয়েছে। ঢাকার সীমান্ত স্কয়ারের আগোরা থেকে কেনাকাটা করে বের হচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

দেশে প্রথম সুপারশপ হিসেবে যাত্রা শুরু করা আগোরাকে বিক্রি করে দিতে চাইছে এটির উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান রহিমআফরোজ গ্রুপ ও অংশীদার ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনার্স বাংলাদেশ। বিক্রির বিষয়ে তারা জেমকন গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। জেমকন গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে আরেক সুপারশপ মীনাবাজার।

আগোরাকে বিক্রির এই উদ্যোগ প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন রহিমআফরোজের পরিচালক নিয়াজ রহিম। দর-কষাকষির প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনার্সের পরিচালক মোয়াল্লেম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে, না–ও হতে পারে।’

আগোরা ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে। এখন তাদের মোট স্টোর বা বিপণির সংখ্যা ১৭। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি, চট্টগ্রামে ১টি ও সিলেটে ২টি। বাজারে বিক্রির পরিমাণের দিক দিয়ে তারা দ্বিতীয়। রহিমআফরোজ ও ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনার্স কেন আগোরাকে বিক্রি করছে, তা নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ফলে বিক্রির চিন্তা কেন, তা জানা যায়নি।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আগোরা এখন মুনাফায় আছে। সুপারশপগুলোর মধ্যে বাজারে তাদের সুনামও রয়েছে। তবে ব্যবসা সম্প্রসারণের যে পরিকল্পনা তাদের ছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সুপারশপের বাজারে বড় ব্র্যান্ড ছয়টি—স্বপ্ন, আগোরা, মীনাবাজার, প্রিন্স বাজার, সিএসডি ও ডেইলি শপিং। সবচেয়ে বেশি হিস্যা এসিআই লজিস্টিকসের সুপারশপ ব্র্যান্ড স্বপ্নের। স্বপ্ন যাত্রা শুরু করে ২০০৮ সালে। মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর বিষয়ে নজর দিয়ে তারা নিজস্ব ৫৯টি ও ফ্র্যাঞ্চাইজির ভিত্তিতে ৬৭টি মিলিয়ে মোট ১২৬টি স্টোর খুলেছে।

মীনাবাজার ও আগোরা এক হয়ে গেলে তাদের বাজার হিস্যা বেড়ে যাবে। সুপরিচিত শিল্পগোষ্ঠী জেমকন গ্রুপের হাত ধরে মীনাবাজার যাত্রা শুরু করে ২০০২ সালে। ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন মীনাবাজারের বিপণি সংখ্যা ১৮। তারা ৯ হাজারের বেশি পণ্য বিক্রি করে। কর্মী ৭৮০ জন। আগোরার ১৭টি যোগ হলে তাদের বিপণির সংখ্যা এক লাফে ৩৫টিতে উন্নীত হবে।

>

রহিমআফরোজ ও ব্রুমার অ্যান্ড পার্টনার্স আগোরাকে বিক্রি করতে চায়। এ জন্য তারা মীনাবাজারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।

মীনাবাজার আগোরাকে কিনছে কি না, তা জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহীন খানের সঙ্গে। তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অবশ্য খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সার্বিকভাবে সুপারশপ খাতের ব্যবসার পরিস্থিতি ভালো নয়। সরকারি নীতিমালা এ ক্ষেত্রে প্রতিকূল। ফলে কেউ ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। কেউ কেউ লোকসান দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে ভালো ভবিষ্যতের আশায়। কোনো কোনো সুপারশপ লাভের মুখ দেখলেও পরিমাণ খুবই কম। বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন বা মুনাফা নগণ্য।

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ২০১২ সালের পর শুধু দুটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান সুপারশপে বিনিয়োগ করেছে। এর একটি ব্যবসা ভালো না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। অবশ্য একটি বা দুটি বিপণি নিয়ে নতুন অনেকে সুপারশপ খুলছে। তবে সেগুলো সেই অর্থে ব্র্যান্ড বা চেইনস্টোর নয়।

উদ্যোক্তারা আরও বলছেন, দেশে সুপারশপ ব্যবসা সেভাবে লাভজনক না হওয়ার কারণ কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট)। সুপারশপের যে পণ্য ৫ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট দিয়ে কিনতে হয়, পাশের মুদিদোকানে সেই পণ্য পাওয়া যায় ভ্যাট ছাড়া দামে। ফলে অনেক ক্রেতা সুপারশপ থেকে কিনতে আগ্রহী হন না।

অবশ্য ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সাল খারাপ যাওয়ার পর ২০১৯ সালটি বেশ ভালো গেছে সুপারশপের জন্য। একটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বড় সুপারশপগুলো মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো পণ্য বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি।

স্বপ্নের সিইও সাব্বির হাসান বলেন, ‘দেশে খুচরা বিক্রির বাজারের আকার ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ১০ শতাংশও যদি সুপারশপের আওতায় আসে, তাহলে বাজারের আকার দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, যা এখনকার আকারের ছয় গুণ।’ তিনি বলেন, এটা খুবই সম্ভাবনাময় খাত। তবে সরকারের নীতিসহায়তা দরকার। ভ্যাটের বিষয়ে সমান সুযোগ নিশ্চিত করলেই এ খাত আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে।