জাহাজভাঙায় শীর্ষে আবারও বাংলাদেশ

২০১৮ সালেও জাহাজভাঙায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
২০১৮ সালেও জাহাজভাঙায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ফাইল ছবি
>আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের তথ্য: গত বছর সারা বিশ্বে যত পুরোনো জাহাজ বিক্রি হয়েছে, তার ৬৫ শতাংশই কিনেছে বাংলাদেশ ও ভারত।

২০১৯ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জাহাজ ভাঙা হয়েছে বাংলাদেশে। সীতাকুণ্ডের উপকূলে জাহাজভাঙা কারখানায় এসব জাহাজ ভাঙা হয়। বেলজিয়ামভিত্তিক সংস্থা ‘এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম’ প্রকাশিত তালিকায় জাহাজভাঙায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। গত মঙ্গলবার এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সংস্থাটি বলছে, গত বছর বিশ্বে ৬৭৪টি সমুদ্রগামী পুরোনো জাহাজ বিক্রি হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা কিনেছেন ২৩৬টি জাহাজ। গত বছর বিশ্বে যত জাহাজ বিক্রি হয়, তার ৬৫ শতাংশই কিনেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের কারখানা মালিকেরা।

জাতিসংঘের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সংস্থা ‘আঙ্কটাডের’ গত বছর শেষে প্রকাশিত ‘রিভিউ অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট ২০১৯’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৮ সালেও জাহাজভাঙায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। সে বছর বিশ্বে যত জাহাজ ভাঙা হয়েছে, তার ৪৭ দশমিক ২ শতাংশই বাংলাদেশে ভাঙা হয়েছিল। ভারতকে টপকে এই অবস্থান নেয় বাংলাদেশ।

জাপান শিপ বিল্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের জাহাজভাঙার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাহাজভাঙা শিল্পে একসময় নেতৃত্বে ছিল তাইওয়ান। নব্বইয়ের দশকে তাইওয়ানের পাশাপাশি চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া শীর্ষ স্থানে উঠে আসে। এর পরের দুই দশকে ভারত ও চীনের অবস্থান ছিল শীর্ষে। এভাবে বিভিন্ন দেশ এই খাত থেকে সরে আসে। পুরোনো জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে এখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। গত দুই বছর বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে ভারতকেও।

বিশ্বের অনেক দেশ জাহাজভাঙা থেকে সরে আসার মূল কারণ হলো পরিবেশদূষণ। সেসব দেশে ইস্পাতপণ্য তৈরির জন্য প্রাথমিক কাঁচামাল পুরোনো লোহার টুকরা বা মৌলিক কাঁচামাল আকরিকের ওপর নির্ভরশীল। তবে বাংলাদেশে রড তৈরির কারখানাগুলোতে এখনো কাঁচামালের একটা অংশ জোগান দেয় জাহাজভাঙা কারখানা। তাতেই শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে এই খাতটি। শীর্ষ স্থানে উঠে আসার পাশাপাশি দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে বলে এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ২৪ জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা যান।

জাহাজভাঙা খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ এখন জাহাজভাঙার কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশে রড তৈরির কাঁচামাল হিসেবে যেমন জাহাজভাঙা কারখানার কাঁচামাল সরবরাহ হয়, তেমনি পুরোনো জাহাজ থেকে পাওয়া নানা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে। চাহিদা বাড়ছে বলেই আমদানিও বাড়ছে। 

রড তৈরির কাঁচামালের দ্বিতীয় উৎস

ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তারা জানান, দুই দশক আগে জাহাজভাঙা খাত থেকেই ৭০ শতাংশের বেশি কাঁচামালের জোগান হতো। তখন অবশ্য সনাতন পদ্ধতির কারখানা থেকে রড উৎপাদিত হতো বেশি। তবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রড উৎপাদনের কারখানা বাড়তে থাকায় জাহাজভাঙা শিল্পের অবদানও কমতে থাকে। এখন ইস্পাত খাতের বড় কোম্পানিগুলো কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি পুরোনো লোহার টুকরা আমদানি করে। এরপর তা গলিয়ে প্রথমে বিলেট তৈরি করে। পরে বিলেট থেকে রড উৎপাদন করা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যে দেখা যায়, গত বছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টন পুরোনো লোহার টুকরা আমদানি হয়েছে। একই সময়ে জাহাজভাঙা কারখানায় ভাঙার জন্য আনা জাহাজ থেকে পাওয়া যায় ২৫ লাখ ৬৯ হাজার টন লোহা। এ হিসেবে রডের কাঁচামালের সরবরাহ ছিল ৭৩ লাখ ২৬ হাজার টন, অর্থাৎ আমদানি পর্যায়ে জাহাজভাঙা কারখানা থেকে আসছে ৩৫ শতাংশ কাঁচামাল। এর বাইরে স্থানীয় উৎস থেকে কয়েক লাখ টন কাঁচামাল সরবরাহ হয়।

জানতে চাইলে ইস্পাত খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে রড তৈরির কাঁচামালের প্রায় ৩০ শতাংশ এখনো জাহাজভাঙা কারখানাগুলো জোগান দেয়। চাহিদার বাকি কাঁচামাল উদ্যোক্তারা সরাসরি পুরোনো লোহার টুকরা হিসেবে আমদানি করে পূরণ করে থাকেন।