ব্যাংকের আমানত কমে যাওয়ায়...

ব্যাংকে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশের সীমায় আনার ঘোষণার পর এবার ডাকঘরে আমানতের সুদহার কমাল সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ–সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গতকাল থেকেই নতুন এই সুদহার কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ডাকঘরে সঞ্চয়ে নিট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

ডাকঘরে আমানতের সুদ কমা নিয়ে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের মধ্যে অনেকেই এখানের মুনাফা দিয়ে সংসার চালান। তাঁদের আয় অনেকটাই কমে যাবে।’

সুধাংশু শেখর ভদ্র আরও বলেন, ব্যাংকের আমানত কমে গেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত আমানত ব্যাংকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই। সরকার ব্যাংকে আমানতের হার এক অঙ্কে আনতে বলেছে, এখন যদি ডাকঘরে আমানতের সুদহার দুই অঙ্কের ঘরে থাকে, তাহলে তো আর ব্যাংকে বিনিয়োগ হবে না।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ প্রসঙ্গে বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার এবং ব্যাংক আমানতের সুদহার-এই দুইয়ের পার্থক্য সব সময় আলোচিত বিষয়। তবে ব্যাংকের আমানত বাড়ানোর জন্য ব্যাংকের সুদহার এবং ডাকঘরে আমানতের সুদহারের মধ্যে সমন্বয় আনার এমন সিদ্ধান্তের আগে পুনর্বিবেচনা করা যেত।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন গোষ্ঠীকে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে, অন্যদিকে এই সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত-এটি বিপরীতমুখী অবস্থান। এর চেয়ে বরং যেটা করা যেত সেটা হলো, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন এবং টিআইএন ও ন্যাশনাল আইডি কার্ডের যে বাধ্যবাধকতা সম্প্রতি করা হয়েছে, তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডাকঘরে রাখা আমানতের ওপর এখন থেকে এক বছর মেয়াদে সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। দুই বছর মেয়াদের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ, আগে যা ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদির সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ, যা এত দিন ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। আমানতকারী চাইলে ৬ মাস অন্তর মুনাফা উত্তোলন করতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথম বছরে ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ ও তৃতীয় বছরে ৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন গ্রাহক, আগে যা ছিল যথাক্রমে প্রথম বছরে ৯ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে সাড়ে ৯ শতাংশ আর তৃতীয় বছরে ১০ শতাংশ।

কিছুদিন ধরেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে উৎসে কর বাড়ালেও এখনো ডাকঘরে আমানত ছাড়া অন্যান্য সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমায়নি সরকার। অবশ্য ব্যাংকগুলোর স্থায়ী আমানতের ক্ষেত্রেও সুদের ওপর উৎসে করের হার ১০ শতাংশ। যাঁদের টিআইএন আছে তাঁদের জন্য এটা প্রযোজ্য। আর যাঁদের টিআইএন নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে সেটা ১৫ শতাংশ। এসব শর্তে সরকারের সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে এক-তৃতীয়াংশের কিছু কম।

অন্যদিকে সরকারের নয়–ছয় নীতি বাস্তবায়নে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ শতাংশের বেশি সুদে আমানত গ্রহণ করবে না কোনো ব্যাংক। মেয়াদি স্কিম ছাড়া সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। তবে যেসব আমানতের মেয়াদ শেষ হবে, সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।