করোনাভাইরাসের প্রভাবে ৬ দেশ থেকে আদা-রসুন আমদানি

করোনাভাইরাসের কারণে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রভাব পড়লেও সেই দেশ থেকে অন্তত আদা-রসুন ও দারুচিনি আমদানি একেবারে বন্ধ হয়নি। এখনো চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশটি থেকে এই তিনটি পণ্য আসছে। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি চীনা নববর্ষ চান্দ্রবর্ষ উপলক্ষে ছুটির আগে সেখানকার রপ্তানিকারকেরা তাঁদের গুদাম থেকে এসব পণ্য বন্দরে পাঠিয়েছিলেন। সেগুলোই বর্তমানে দেশে আসছে।

এদিকে চীনের পাশাপাশি আরও পাঁচটি দেশ থেকেও আদা-রসুন ও দারুচিনি আমদানি হচ্ছে। ফলে এসব পণ্যের সরবরাহে এখনো বড় সংকট দেখা দেয়নি। চীনের বিকল্প হিসেবে যেসব দেশ থেকে পণ্য তিনটি আমদানি করা হচ্ছে—মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মিসর।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে চীন থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কায় চলতি মাসের শুরুতে পণ্য তিনটির দাম অবশ্য বেড়ে যায়। এর মধ্যে চট্টগ্রামভিত্তিক পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি রসুনের দাম ১৩০ টাকা থেকে বেড়ে ১৭০ টাকায়, আদা ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকায় এবং দারুচিনি ২৯০ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় ওঠে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি রসুন ২১৫ টাকা ও আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উদ্ভিদজাত পণ্য খালাসের আগে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ছাড়পত্র নিতে হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবের পরও চীন থেকে এই তিনটি পণ্যের আমদানি অব্যাহত আছে। চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মিত এসব পণ্য আমদানির পর তা খালাসের জন্য ছাড়পত্র নিয়ে যাচ্ছেন আমদানিকারকেরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়ার পর সবচেয়ে বড় শঙ্কা ছিল বাজারে রসুনের সরবরাহে সংকট দেখা দেয় কি না। কারণ, রসুন আমদানির ৯৭ শতাংশই আসে চীন থেকে। তবে দুটি কারণে আপাতত এই শঙ্কা নেই। প্রথমত, দেশে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টন রসুন আমদানি হয়, সেখানে গত ডিসেম্বরে ১০ হাজার ৫৮২ টন ও জানুয়ারিতে ১১ হাজার ৬৭৭ টন রসুন আমদানি হয়ে গেছে। অর্থাৎ দ্বিগুণের মতো আমদানি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, রসুনের দেশীয় ফলন বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর ও উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যায়, এ মাসের প্রথম ১৫ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২ হাজার ৩০ টন রসুন আমদানি হয়েছে। সবই এসেছে চীন থেকে। এ ছাড়া আমদানির পথে আছে ৮০৭ টন রসুন। রসুন ছাড়াও এ মাসের প্রথম ১৫ দিনে দেশটি থেকে ১ হাজার ১৯০ টন আদা এবং ১৮২ টন দারুচিনি আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, চীনে জাহাজীকরণের ১২ থেকে ২১ দিন পর এসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবমতে, গত ২০১৮-২৯ অর্থবছর দেশে রসুন উৎপাদিত হয় ৪ লাখ ৬৬ হাজার টন। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে ওই সময়ে রসুন আমদানি হয় ৬৬ হাজার ৫০০ টন। দুটো মিলিয়ে গেল অর্থবছরে দেশে রসুনের সরবরাহ ছিল প্রায় ৫ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টন। এর মধ্যে আমদানি করা রসুনের পরিমাণ মোট সরবরাহের মাত্র ১৪ শতাংশ।

বর্তমানে রসুনের মতো চীন থেকে আমদানির পথে আছে আদাবাহী জাহাজ। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছর দেশে আদা উৎপাদিত হয় ৮০ হাজার ২৩৪ টন। আমদানি হয় ১ লাখ ২৮ হাজার টন। সেই হিসাবে আদার সরবরাহ ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৮৪১ টন। আদা আমদানির ৪৫ শতাংশ আসে চীন থেকে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আদা আমদানি হয় মিয়ানমার থেকে। এটি আমদানি হয় টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে। গত অর্থবছরে দেশের মোট আদা আমদানির ৩৫ শতাংশ আসে মিয়ানমার থেকে। এ ছাড়া ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে মোট আমদানির ১০ শতাংশ।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে আদা-রসুনের সংকট নেই। কারণ, দেশি রসুনের ফলন উঠতে শুরু করেছে, আবার চীনের বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার থেকেও আদা-রসুন আমদানি হচ্ছে।

দারুচিনি আমদানিতে চীনের বিকল্প দেশ ভিয়েতনাম। ভিয়েতনাম থেকে ইতিমধ্যে দারুচিনি আমদানি বেড়েছে। এ সম্পর্কে মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খাতুনগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে যেভাবে মসলা পণ্যের সংকট হবে বলে ভাবা হয়েছিল, বাস্তবে তা হয়নি। বাজারে বর্তমানে এই পণ্যের সরবরাহ আছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে চীন থেকে আদা, রসুন ও দারুচিনির পুরোনো চালান জাহাজীকরণ হয়েছে। এরপর কিছুদিন নতুন চালান জাহাজীকরণ হয়নি। তবে এখন আবার তারা রপ্তানি আদেশ নিতে শুরু করেছে। ফলে এ মাসের শেষে সাময়িক সময়ের জন্য আমদানি ব্যাহত হলেও তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে।