রাজশাহীর 'হাঁরঘে কালাই'

রাজশাহীর সেই অভিজাত রুটির দোকান। ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহীর সেই অভিজাত রুটির দোকান। ছবি: প্রথম আলো

‘হাঁরঘে কালাই’। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষার একটি বাক্য। এর অর্থ ‘আমাদের কালাই’। অথচ এটিই রাজশাহী শহরের একটি দোকানের নাম। ভাষাও যে ব্যবসা প্রসারের একটি মাধ্যম হতে পারে, এই দোকানঘরটির নামই তা বলে দিচ্ছে। কারণ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কালাই চাষ হয়ে থাকে। আমের পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কালাইয়ের জন্যও প্রসিদ্ধ। আবার সেখানকার কালাইও দেশসেরা। এই কালাইয়ের সুনামকে কাজে লাগিয়ে ভালো ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে রাজশাহী শহরে একটি দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাঁরঘে কালাই’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই দোকানে কালাইয়ের রুটি বিক্রি হয়।

রাজশাহী শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁতেও পাওয়া যায় কালাইয়ের রুটি। সব মিলিয়ে শহরে এখন এই রুটির প্রায় শ খানেক দোকান রয়েছে। এসব দোকানে কালাইয়ের রুটির সঙ্গে থাকে বেগুনভর্তা, মরিচভর্তা, হাঁসের মাংস, গরুর মাংসসহ মুখরোচক আরও অনেক উপকরণ। হাঁরঘে কালাই রাজশাহী নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদের পাশের একটি অভিজাত রুটির দোকান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে তেহজীব মুর্শেদ ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করা তাঁর এক আত্মীয় মামুন-অর-রশিদ মিলে এই দোকান করেছেন। তেহজীব মুর্শেদ রাজশাহী বেতারের একজন সংগীত প্রযোজক, শিল্পী ও গীতিকার। এ রকম ব্যবসাসফল নাম রাখার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একটি সৃজনশীল নাম খুঁজতে খুঁজতে তাঁর মনে এই নামটি এসে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাষা সারা দেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। তাই কালাইয়ের রুটির দোকানের নাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাষায় করলে খদ্দরকে আলাদা করে বলে দিতে হবে না যে কালাইয়ের রুটির দোকান। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁরাই এই শহরে উৎকৃষ্ট মানের কালাইয়ের রুটি সরবরাহ করে থাকেন। তাঁরা খোদ চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থেকে আটা নিয়ে এসে রুটি তৈরি করেন।

১০-১৫ বছর আগে ফুটপাতের দোকানগুলোতে কালাইয়ের রুটি বিক্রি শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই রুটির জনপ্রিয়তা দেখে রাজশাহীর অভিজাত দোকানগুলোতে নানরুটির পাশাপাশি কালাইয়ের রুটির প্রচলন শুরু হয়েছে। দেখতে দেখতে খাবারের দোকানকেন্দ্রিক অর্থনীতির একটা বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে কালাইয়ের রুটি।

সম্প্রতি রাজশাহীতে বাইরে থেকে কোনো অতিথি এলেই তাঁকে কালাইয়ের রুটি দিয়ে আপ্যায়ন করার একটা চল শুরু হয়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসেছিলেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। সঙ্গে ছিলেন নিউইয়র্কপ্রবাসী সাংবাদিক শেলী জামান খান। তাঁদের সবাইকে নিয়ে রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার হাঁরঘে কালাইয়ে আড্ডায় বসেছিলেন। সেখানেই কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। আসাদুজ্জামান জানান, বাইরে থেকে কেউ শহরে এলেই বলেন, এখানে নাকি কালাইয়ের রুটি পাওয়া যায়। তাই অতিথিদের নিয়ে এসেছিলেন। শেলী জামান বললেন, তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। বরাবরই তাঁর রুটি পছন্দ। তবে এই রুটিটা ছিল ব্যতিক্রমী। গরম গরম চুলা থেকে তুলে দিচ্ছেন। উজান বলেন, তাঁরা আবার আসবেন। রাজশাহীতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও কালাইয়ের রুটি খেয়েছিলেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে তাঁর ছবিও ছাপা হয়েছিল।