করোনায় অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক আঘাতের আশঙ্কা অর্থমন্ত্রীর

আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি
আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক আঘাতের আশঙ্কা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রভাব অনুভব করতে পারছে বাংলাদেশ। এর ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদশের একার পক্ষে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এ জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের পাশে চান তিনি।

শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষ থেকে আজ বুধবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদর দপ্তরের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি এবং সহযোগিতা নিয়ে অনুষ্ঠিত ভিডিও কনফারেন্সে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ক্রান্তিকাল চলাকালে ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের জন্য বিশ্ব্যাংক ও আইএমএফকে ধন্যবাদ জানান অর্থমন্ত্রী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির নিজ দপ্তর থেকে এ কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ১ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন করেছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর সহায়তার জন্য পাঁচ হাজার কোটি ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে আইএমএফ। যে অর্থের মধ্যে এক হাজার কোটি ডলার পাবে স্বল্প আয়ের দেশগুলো। ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ উভয় সংস্থা থেকেই তাই বড় ধরনের সহযোগিতা আশা করছে।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউনের কারণে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা কমছে। ফলে এ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে আমাদের অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোয়। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) অর্থনীতিকে অনেকটা চাঙা করে রাখে। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্ন যে এই করোনাভাইরাসের কারণে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এতে রেমিট্যান্সের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব আসন্ন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরেছেন। এর মধ্যে রয়েছে তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ৭ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থমন্ত্রী চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার কথা উল্লেখ করে কনফারেন্সে বলেন, এই ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি। দুর্ভাগ্যক্রমে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি জিডিপির ক্ষতি হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আশঙ্কা করছে ক্ষতির পরিমাণ হবে জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনসহ উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় আছি, এমন একটি সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্ব অর্থনীতি করোনাভাইরাসের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন।’