ভালো সূচকটিও ঝুঁকিতে পড়েছে

শেয়ারবাজার
শেয়ারবাজার

দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর মধ্যে এত দিন রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ছাড়া সব কটিই ছিল নেতিবাচক ধারায়। ইতিবাচক থাকা সেই প্রবাসী আয়েও এবার হোঁচট লেগেছে।

যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে, সেগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। ফলে ওই সব দেশে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও পড়েছেন বিপদের মুখে। করোনার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে প্রবাসী আয় ব্যাপক হারে কমার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার, যা জানুয়ারিতে ৫ কোটি ডলার কমে নেমে যায় ১৬৪ কোটি ডলারে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এক লাফে ১৯ কোটি ডলার কমে ১৪৫ কোটি ডলারে আসে। চলতি মার্চের প্রথম ১২ দিনে এসেছে ৮০ কোটি ডলার।

বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা এখনো পুরোপুরি শুরু না হলেও শিগগিরই তেমনটা দেখা যেতে পারে। কারণ, করোনার প্রভাবে শ্রমবাজার আরও সংকুচিত হয়ে যাবে। ঈদের কারণে আগামী দুই মাস অবশ্য রেমিট্যান্স বাড়তে পারে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমছে। এমনিতেই জ্বালানি তেলের দাম কমছে, করোনার কারণে এতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে ওই দেশগুলোতে চাকরির চাহিদা কমবে। এটা বাংলাদেশের বিদেশি শ্রমবাজারে বড় আঘাত হানবে। ফলে প্রবাসী আয়ে বড় ধাক্কা আসবে। তবে দেশে এর প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

 আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে ধাক্কা আসবে, তার জন্য সরকারের দিক থেকে বড় ধরনের হস্তক্ষেপ লাগবে। বাজেটে সহায়তা লাগবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও বড় ভূমিকা নিতে হবে।

>

প্রবাসী আয়ে করোনার হানা
যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে, সেগুলোর অধিকাংশই করোনায় নাকাল

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান।

এর মধ্যে সৌদি আরব করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। মসজিদে নামাজ আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রকে ১৫ দিনের জন্য লকডাউনে বা অবরুদ্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই দেশে ওয়ালমার্টসহ বড় বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ কিংবা কাজের সময়সীমা কমানোর ঘোষণা করেছে। মালয়েশিয়া করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সেখানে গত বুধবার থেকে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার। আর ইতালিতে তো অনেক মানুষ মারা গেছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিকে লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে গেছে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংক। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের অন্য বড় উৎসগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। অনেক দেশে ব্যবসাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। অচল হয়ে পড়েছে দেশগুলো।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে সৌদি আরব থেকে ৩২ কোটি ডলার এসেছিল, গত মাসে তা কমে হয়েছে ৩০ কোটি ডলার। একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে প্রবাসী আয় এসেছে যথাক্রমে ২১ কোটি ও ১৯ কোটি ডলার। মালয়েশিয়া থেকে আয় ১২ কোটি থেকে কমে ১০ কোটি ডলার হয়েছে। এভাবে প্রায় প্রতিটি দেশ থেকেই প্রবাসী আয় আসা কমে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ার এনবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রধান নির্বাহী শেখ আকতার উদ্দীন আহমেদ গত বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার থেকে মালয়েশিয়ার সব রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদেরও কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে টাকা পাঠানো আপাতত বন্ধ। ঠিক কত দিন এমন থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না।’

আর সিঙ্গাপুরের প্রাইম এক্সচেঞ্জ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামিউল্লাহ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুরে চাকরির চাহিদা কমে আসছে। তাই কিছুটা প্রভাব পড়েছে। টাকা সহজে পাঠানো সুবিধার জন্য আমরা শিগগিরই অ্যাপস চালু করব।’ এখন শ্রমিকদের মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সেই অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।