চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পর্যটন খাতের সাড়ে ৭ কোটি কর্মী

করোনাভাইরাসের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন খাত। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন খাত। ছবি: রয়টার্স

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী পর্যটন খাতের সাড়ে সাত কোটি কর্মী চাকরি খোয়ানোর ঝুঁকিতে আছে। এ ছাড়া ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি হারাতে পারে পর্যটন খাতের ২ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক পর্যটনবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটি বিগত বছরগুলোর হিসাব তুলে ধরে বলছে, বিশ্ব জিডিপির ১০ দশমিক ৪ শতাংশের জোগান দেয় পর্যটন খাত। কর্মসংস্থান তৈরিতেও বিশ্বজুড়ে সম্ভাবনাময় এ খাতের ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের ১০টি কর্মসংস্থানের ১টি তৈরি হচ্ছে পর্যটন খাতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় অচল খাতটি।

ফেব্রুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকলে দেশে দেশে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে ভ্রমণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ পর্যটন খাতে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। ডব্লিউটিটিসি বলছে, করোনার বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে চাকরি হারানোর ঝুঁকিও বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে চাকরি হারানোর এই ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

ডব্লিউটিটিসি অঞ্চলভিত্তিক পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে, মহামারির সবচেয়ে প্রভাব পড়বে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পর্যটনশিল্পে। এ অঞ্চলের দেশগুলোয় প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ কর্মহীন হতে পারে। ক্ষতি হতে পরে ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর বেশিসংখ্যক মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছে, যথাক্রমে আমেরিকায় প্রায় ১ কোটি ২ লাখ, ইউরোপে প্রায় ১ কোটি ১ লাখ, আফ্রিকায় প্রায় ৪০ লাখ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ১৮ লাখ পর্যটনকর্মী।

সংস্থাটি অঞ্চলভিত্তিক ঝুঁকির সঙ্গে বেশিসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হতে পারে—এমন কিছু দেশের কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। যেমন আমেরিকার মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতেই পর্যটনসংশ্লিষ্ট ৭০ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারে। এ ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতর পর্যটন খাতের বেশিসংখ্যক কর্মী চাকরি হারাতে পারে।

২৫ মার্চ প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডব্লিউটিটিসির সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী গ্লোরিয়া গুয়েভারা বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যটন খাতের সংকট উত্তরণে দেশগুলোকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

করোনার কবলে বাংলাদেশের পর্যটন খাতও বিপর্যস্ত। ১৬ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান জানিয়েছেন, পর্যটন মৌসুমে বাংলাদেশে সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা লেনদেন হয়। কিন্তু পর্যটনের ভরা মৌসুমে করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ায় এবার ক্ষতির মুখে পড়েছে এ খাত। তেমনি ঝুঁকিতে আছে পর্যটন খাতের কর্মীরা।

পর্যটন খাতকে রক্ষায় ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিশেষ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে। সংগঠনটির সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের রিসোর্টগুলোয় প্রত্যক্ষভাবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কর্মী নিয়োজিত। পর্যটনের ভরা মৌসুমে করোনার কারণে তাদের ব্যবসা বন্ধ থাকায় কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়টি ভাবছে।