সামাজিক দূরত্ব বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ নোবেলজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জির

অভিজিৎ ব্যানার্জি।
অভিজিৎ ব্যানার্জি।

করোনার সংক্রমণ রুখতে বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি, সেখানে বেশি করে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে এই পরামর্শ দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি।

করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘গ্লোবাল অ্যাডভাইজরি বোর্ড’ বা বৈশ্বিক উপদেষ্টা পর্ষদ গঠন করেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। মোট আটজনকে রাখা হয়েছে পর্ষদে। শীর্ষে আছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি। আনন্দবাজার ও হিন্দু বিজনেসলাইন সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলন করেন অভিজিৎ। করোনা মোকাবিলায় সরকারকে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। অভিজিৎ ছাড়াও ওই পরিষদে আছেন পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) আঞ্চলিক প্রধান স্বরূপ সরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির সাবেক কর্ণধার টম ফ্রেডেন, বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ জিষ্ণু দাস, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের সাবেক আইএএস অফিসার তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব জেভিআর প্রসাদ রাও, ইউএনএআইডিএসের কমিউকেশন স্পেশালিস্ট সিদ্ধার্থ দুবে। পর্ষদের আহ্বায়ক চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। এই পর্ষদের সঙ্গে প্রশাসনিক সহযোগিতায় থাকবে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ নজরদারি দল।

ভিডিও সম্মেলনে অভিজি ব্যানার্জির পরামর্শ চান মমতা ব্যানার্জি। অভিজিৎ প্রথমেই বলেন, এই মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে সবার সতর্ক থাকতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে বাজার খোলা আছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের বক্তব্য, বাজারে ঢোকা ও বেরোনোর সময় যাতে সবার হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। স্যানিটাইজ়ারের রাখা গেলে ভালো হয়। কয়েকটি দেশ এই ব্যবস্থা চালু করে উপকৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে সংক্রমণ ঠেকাতে বাধ্যতামূলকভাবে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেন তিনি। বাজারে দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিক্রেতার সামনে ইট রেখে মানুষকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করা উচিত বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

অভিজিৎ ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, যেসব জায়গায় সংক্রমণের আশঙ্কা আছে, সেখানে বেশি করে পরীক্ষা করা দরকার। প্রয়োজনে এই কাজে আশা–কর্মীদের ব্যবহার করা যেতে পারে। হাঁচি-কাশির তথ্য পেলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে। এতে হবে কী, সংক্রমণ ছড়ানোর আগেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। হঠাৎ অনেক জায়গায় অনেকে সংক্রমিত হলে সমস্যা বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন তো আপনাদের অতটা চাপ নেই। তাই এসব ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাজার কমিটিগুলোকে জল-সাবানের ব্যবস্থা করতে বলুন। দরকার হলে মানুষের কাছ থেকে অনুদান নিন।’

অভিজিৎ ব্যানার্জিকে আশ্বস্ত করে মমতা জানান, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছে। আশা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। আজ বুধবার থেকে এসব কাজ শুরু হবে। রাজ্য সরকার যে করোনা ত্রাণ তহবিল গঠন করেছে, তা উল্লেখ করে মমতা জানান, অনেকেই কেন্দ্রের তহবিলে হাজার হাজার কোটি টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অত শিল্পপতি বা ধনী মানুষ নেই। তাই যে যেমন পারছেন, সহযোগিতা করছেন। এসব দিয়েই সব করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।