লকডাউন এলাকায় সরকারি ব্যাংক খোলা থাকবে

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে যেসব এলাকায় লকডাউন বা অবরুদ্ধ করা হয়েছে, ওই জেলা ও উপজেলার সরকারি ব্যাংক শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ শনিবার নির্দেশনা দিয়ে কাল রোববার সকাল থেকে এসব শাখা খোলা রাখতে বলা হয়েছে। এসব শাখার কর্মকর্তাদের চলাচলের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বাহনের ব্যাবস্থা করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আজ শনিবার সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রুপালী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উনয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এতে আশ্চর্য হয়েছেন অনেক ব্যাংক এমডি ও উর্ধতন কর্মকর্তা। তারা বলছেন, শনিবার নির্দেশনা দিয়ে রোববার থেকে কিভাবে শাখা চালু করা যায়। এত স্বল্প সময়ে বাহনের ব্যাবস্থা কিভাবে করা সম্ভব। কর্মকর্তারাও সবাই নিজ শাখার আশেপাশে থাকেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাস্তব অবস্থা বিবেচনা না করেই এসব নির্দেশনা জারি করেছে। ঝুঁকিতে ফেলছে কর্মকর্তাদের।

নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সরকারি ভাতা, অনুদান ও বাকিং সেবার জন্য লকডাউন এলাকার ব্যাংক শাখা খোলা রাখতে হবে। তবে নির্দিষ্ট শাখা লকডাউন হলে তা এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে। এসব শাখায় সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে।

কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য ব্যাংককে বাহনের ব্যাবস্থা করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর আগে গত সপ্তাহে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ে ব্যাংক লেনদেনের সময় আবারও কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি যেসব এলাকা লকডাউন বা অবরুদ্ধ করা হয়েছে, ওই এলাকার ব্যাংক শাখা বন্ধ রাখতে বলে। হঠাৎ করে আজ সরকারি ব্যাংকগুলোতে লকডাউন এলাকাটি শাখা খোলা রাখতে বলে হয়েছে।

ফলে সীমিত আকারের ব্যাংকিং সেবার আওতায় যেসব ব্যাংক শাখা খোলা রয়েছে, সেগুলোতে আগামী রোববার থেকে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। তবে লকডাউন শাখার লেনদেন চলবে দুপুর ১ তা পর্যন্ত।

প্রয়োজন হলে ব্যাংকগুলো তাদের বৈদেশিক লেনদেন শাখা (এডি) আরও এক ঘন্টা খোলা রাখতে পারবে। আর আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা ২টা পর্যন্ত।

শাখাগুলোতে বিশ্বস্বাস্থ সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে ব্যাংকগুলোতে লেগে থাকছে উপচে পড়া ভিড়। বেতন ভাতা অননুদানের টাকা উত্তোলনের জন্য সরকারি ব্যাংক ও টাকা তোলার জন্য বেসরকারী ব্যাংকে বেশি ভিড় হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও আতঙ্কিত ব্যাংক কর্মকর্তারা। অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও যাতায়াত ব্যবস্থা করেনি, আবার ঝুঁকি ভাতাও দিচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে সেবা অব্যাহত রাখায় আলাদা স্বীকৃতিও চান কোন কোন ব্যাংক কর্মকর্তা।

সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর সীমিত আকারে ব্যাংক সেবা চালু রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টাকা জমা ও উত্তোলনের পাশাপাশি শুধু জরুরি বৈদেশিক লেনদেন চালুর কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২৫ মার্চ জানায়, ডিডি ও পে অর্ডার সেবা চালুর কথা। এরপর ২ এপ্রিল লেনদেনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ট্রেজারি চালান জমা ও ক্লিয়ারিং ব্যবস্থার আওতাধীন বিভিন্ন সেবা চালুর ঘোষণা দেয়। এরপর সঞ্চয়পত্র নগদায়ন ও প্রতি মাসের মুনাফা তোলা, বৈদেশিক লেনদেন শাখাসমূহের সেবা দুপুর ২টা পর্যন্ত চালু রাখার নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে করোনা পরিস্থিতি যত খারাপ হচ্ছে, ব্যাংকগুলোর সেবার সংখ্যা যেন ততই বাড়ছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কোন দেশ করোনার কারনে ব্যাংক সেবা বন্ধ করেনি। এটা সম্ভবও না। কারন এমন সঙ্কটে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। পাশাপাশি ভাতা, অনুদান বিতরন এখনো ব্যাংকের মাধ্যমেই হয়।