তেলের উৎপাদন কমাতে ঐতিহাসিক সমঝোতা

দৈনিক ৯৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট। ছবি: রয়টার্স
দৈনিক ৯৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট। ছবি: রয়টার্স

নানা আলোচনা-জল্পনার পর অবশেষে ওপেক প্লাস ও অন্য তেল উৎপাদক মিত্রদেশগুলো উৎপাদন কমানোর এক ঐতিহাসিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। দৈনিক ৯৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের এই জোট, যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।


গতকাল রোববার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বিষয়ে তারা সম্মত হয়। সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভাশেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা আবার প্রমাণ করেছি, ওপেক প্লাস জীবিত আছে।’


৯ এপ্রিল রাশিয়াসহ তেল উৎপাদক ও মিত্রদের সমন্বয়ে গঠিত ওপেক প্লাস এই সমঝোতার জন্য পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। তবে তাতে বাদ সাধে মেক্সিকো। ওপেক এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা না দিলেও প্রতিটি দেশই এতে সম্মতি দিয়েছে।


টুইটবার্তায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কুয়েতের জ্বালানিমন্ত্রী খালেদ আলী মোহাম্মদ বিন ফাদেল।


টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘ওপেক প্লাসের সঙ্গে বড় চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি খাতের কয়েক লাখ কর্মসংস্থান বাঁচবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানকে ধন্যবাদ জানাই। আমি মাত্র ওভাল অফিস থেকে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি সবার জন্যই ভালো চুক্তি।’


সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওপেক প্লাস দেশগুলো প্রতিদিন ৯৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে। ব্রাজিল ও কানাডা কমাবে আরও ৩৭ লাখ ব্যারেল। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ওই সব দেশে তেল উৎপাদন এমনিতেই অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু জি-২০-এর অন্য দেশগুলো এখন কী পরিমাণ তেল উৎপাদন কমাবে, তা জানানো হয়নি।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা কমে গেছে ব্যাপকভাবে। মার্চের শেষে ১৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে তেলের দাম।


জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে গত ৫ মার্চ থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বৈঠকে বসে ওপেক ও নন-ওপেক দেশগুলো। এতে সিদ্ধান্ত হয়, তেলের দাম বাড়াতে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন দিনে ১৫ লাখ ব্যারেল কমাবে তারা, যা বিশ্বের মোট সরবরাহের প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।


ওপেক আশা করছিল, রাশিয়া প্রতিদিন ৫ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমাতে সম্মত হবে। তবে এতে সম্মতি জানায়নি ওপেকের মিত্রজোট ওপেক প্লাসের নেতৃত্বে থাকা রাশিয়া। এ কারণে নতুন চুক্তি হওয়ার বিষয়টি ভেস্তে যায়। এর প্রভাবে ব্যাপক দরপতন হয় তেলের দামের। এর মধ্যে আবার তেলের দাম কমায় সৌদি আরামকো। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত এই কোম্পানি তেলের দাম তাদের মূল গ্রেড থেকে ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমায়। ফলে শুরু হয় সৌদি আরব ও রাশিয়ার মধ্যে তেলের ‘মূল্য–যুদ্ধ’।

এরপর গত বুধবার জ্বালানি তেলের উৎপাদন কমাতে রাজি হয় ওপেক ও তার মিত্ররা। দাম বাড়ানোর লক্ষ্যে মে ও জুন মাসে দিনে এক কোটি ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাতে রাজি হয় এ জোট। ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এটি চলবে। পরে ১০ এপ্রিল সৌদি আরবের নেতৃত্বে জি–২০ দেশগুলোর জ্বালানিমন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরে মেক্সিকোর বাধায় বিষয়টি ভেস্তে যায়।