ছুটির মধ্যে ইন্টারনেটে চাপ, সেবায় বিঘ্ন

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

সাধারণ ছুটির মধ্যে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু গ্রাহকেরা অভিযোগ করছেন, সেবার মান কমেছে। গ্রাহকের প্রথম অভিযোগ, কমেছে ইন্টারনেটের গতি; দ্বিতীয়ত, সমস্যা হলে সমাধান পেতে সময় বেশি লাগছে। কারণ, সমাধান দিতে যে কর্মী পাঠাতে হবে, তাতে ভোগান্তিতে পড়ছে সেবাদানকারীরা। ছুটিতে কর্মীদের একটি অংশ বাড়িতে গিয়ে আর ফিরতে পারছে না। আর যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ, যদিও ইন্টারনেট সরকারের জরুরি সেবার তালিকাভুক্ত। ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যে পরিপত্র জারি হয়েছে, তাতে অন্যান্য সেবার মতো ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিতে সেবাদাতাদের কর্মী ও যানবাহন চলাচল নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন বলে দাবি করছেন সেবাদানকারীরা।

মোবাইল অপারেটররা জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে সেবার মান ঠিক রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। গ্রাহকদের বড় একটি অংশ এখন গ্রামের বাড়িতে, তাই হঠাৎ করে রাজধানী অথবা বড় শহরে চাপ কমে গিয়ে বেড়েছে গ্রামে। এমনিতে ঈদের মতো সাধারণ ছুটিতে অপারেটররা বাড়তি প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। কোম্পানিগুলো সক্ষমতা বাড়ানোর সময় পায়নি।

হংকংভিত্তিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যাল ‌লকডাউনের সময় ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৮ এপ্রিল। এতে দেখা যায়, ২৭ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর–জি) ইন্টারনেট সেবার গড় ডাউনলোড গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৯ মেগাবাইটের বেশি। ৮ মার্চ দেশে করোনা–আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ইন্টারনেটের গতি কমতে থাকে, মার্চের শেষ সপ্তাহে যা নেমেছে ৭ দশমিক ৮ মেগাবাইটে।

মোবাইল অপারেটর রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন ইন্টারনেটের ব্যবহার ২৫ শতাংশের মতো বেশি। কিন্তু কথা বলা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এতে আমাদের সার্বিক রাজস্ব কমেছে ২০ শতাংশের মতো।’

এদিকে ইন্টারনেটের গতি ঠিক রাখতে সাময়িকভাবে সরকারের অব্যবহৃত তরঙ্গ চেয়েছে তিন অপারেটর রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক। এ বিষয়ে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রবির সাহেদ আলম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে তরঙ্গের দাম বরাবরই অপারেটরদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল, তাই আমরা সব সময় তরঙ্গসংকটে ভুগেছি। বাড়তি চাহিদার কারণে বাড়তি তরঙ্গ ছাড়া অন্য কোনোভাবে ইন্টারনেটের গতি ও সেবার মান ঠিক রাখা সম্ভব নয়। অব্যবহৃত তরঙ্গ মূল্য সংযোজন করছে না। এ কারণে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বাড়তি তরঙ্গ বরাদ্দ চেয়ে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি।’ তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জরুরি পরিস্থিতি সামলাতে অপারেটরদের তরঙ্গ বরাদ্দ দিচ্ছে। বিটিআরসিও সেই পদক্ষেপ নিতে পারে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার। তাদের মধ্যে ৯ কোটি ৪২ লাখ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাকিরা অন্যান্য মাধ্যমে।

মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি—৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার। গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মুহাম্মদ হাসান বলেন, তাঁদের ফোর–জিতে গ্রাহকের অভিজ্ঞতা আগের মতোই আছে। থ্রি–জির ক্ষেত্রে কিছু এলাকায় ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ইন্টারনেট যেহেতু জরুরি সেবা, সেহেতু আমরা চাই কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সম্প্রদায় আমাদের লোকদের চলাচল ও প্রবেশ স্বাভাবিক রাখবে, যাতে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেওয়া যায়।’

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবায় দুই ধরনের চিত্র দেখা যাচ্ছে। একদিকে করপোরেট গ্রাহকদের ব্যবহার কমেছে, অন্যদিকে আবাসিক ব্যবহার বেড়েছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, ‘বাসাবাড়িতে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে ৫০ শতাংশের মতো। অন্যদিকে করপোরেট গ্রাহকের ব্যবহার কমেছে ৩০ শতাংশের মতো। করপোরেট গ্রাহকের চাপ কমায় সেই ব্যান্ডউইডথ সাধারণ গ্রাহকদের দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে।’

অবশ্য বিপাকে পড়েছেন ছোট ছোট ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) গ্রাহকেরা। এসব আইএসপির সক্ষমতা কম। তারা বাড়তি চাপ নিতে পারছে না।
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার গ্রাহক রফিকুল ইসলাম বলেন, ইন্টারনেটের গতি খুবই কম। এ নিয়ে অভিযোগ জানালেও সেবাদাতারা সমাধান দিতে পারেনি।

ইন্টারনেট সরবরাহকারী ঢাকা ফাইবার নেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সদানন্দ কুমার সাহা জানান, জনবল কমে যাওয়ার সবাই সমস্যায় ভুগছে। ঢাকা শহরে মাঠপর্যায়ে তাঁদের ২০০ জনের মতো কর্মী কাজ করতেন। তাঁদের ৪০ শতাংশ বাড়ি চলে গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন বিল সংগ্রহ করতে পারছি না। যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও বিল না নিতে অনুরোধ করছে। অথচ আমাদের ব্যান্ডউইডথ কিনতে হচ্ছে।’

সদানন্দ কুমার সাহা চান, সরকারি সংস্থা ব্যান্ডউইডথের দাম পরে নিক। এতে ইন্টারনেট সরবরাহকারীরা বিল তুলে দাম পরিশোধ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এখন বেতন না দিতে পারলে বাকি কর্মীরাও বাড়ি চলে যাবে। এতে বিপর্যয় নেমে আসবে।