করোনার মধ্যে চলছে ৯৮ পোশাক ও বস্ত্র কারখানা

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনার ৯৮ পোশাক ও বস্ত্রকল আজ সোমবার উৎপাদন চালিয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ৭৮টি, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ১৩টি ও বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৭টি।

শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে জানান। তিনি বলেন, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ৭ হাজার ৬০২টি শিল্প কারখানার মধ্যে ৫২২টি সোমবার উৎপাদন চালিয়েছে। বন্ধ ছিল ৭ হাজার ৮০টি শিল্প কারখানা।

করোনা মোকাবিলায় গত ৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ যৌথ বিবৃতিতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়। তখন বলা হয়, যেসব কারখানার জরুরি রপ্তানি ক্রয়াদেশ রয়েছে ও যারা করোনা মোকাবিলার জন্য সুরক্ষা পোশাক বা পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি বানাতে তারা কারখানা খোলা রাখতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িক সংগঠন (বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এবং শিল্প পুলিশকে অবহিত করতে হবে। পরবর্তীতে সরকার ঘোষিত ছুটি বৃদ্ধি করা হলে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। তবে তখন থেকে প্রায় প্রতিদিনই শতাধিক পোশাক কারখানা খোলা ছিল।

শিল্প পুলিশের হিসাবে, সাভার-আশুলিয়ায় ১৭টি, গাজীপুরে ৩৫টি, চট্টগ্রামে ৩৫টি, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ১৩টি পোশাক কারখানা সোমবার উৎপাদনকাজ চালিয়েছে। এ ছাড়া সাভার-আশুলিয়ায় ৩টি, গাজীপুরে ২টি এবং নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ২টি বস্ত্রকল উৎপাদন চালিয়েছে। অথচ করোনা সংক্রমণ রোধে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বর্তমানে লকডাউন অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় করেন। সে সময় গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার বলেন, অনেক পোশাক কারখানা মালিক পিপিই বানানোর জন্য শ্রমিকদের ডেকে এনে অন্য পণ্য তৈরি করাচ্ছে। কোনোরকম স্বাস্থ্যবিধি না মানছে না কারখানাগুলো। শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, 'করোনা মোকাবিলায় আমরা প্রথম থেকে সদস্য কারখানাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা চালাতে নির্দেশ দিয়েছি।'

এদিকে ৩২০টি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা সোমবার পর্যন্ত শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করেনি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১৭১টি, বিকেএমইএর ১১৪টি ও বিটিএমএর সদস্য ৩৫টি কারখানা। মজুরির দাবিতে সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ১৪টি কারখানা শ্রমিকেরা সোমবার বিক্ষোভ করেছেন। সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে।

শিল্প পুলিশ এমন তথ্যই জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, সাভার-আশুলিয়ার দোকাটি অ্যাপারেল, গ্রিন স্টিজ ভেলি, প্রিতম অ্যাম্বোয়ডারি, নার্গিস সোয়েটার, ফাতিহা সোয়েটার ও আর এস সোয়েটারের শ্রমিকেরা সোমবার মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া গাজীপুরের আবিদ অ্যপারেল, স্বপন ওয়াশিং, ইউনিক অ্যাপারেল, স্পেক্ট্রা সোয়েটার, যমুনা নিট, নারায়ণগঞ্জের অন্তিম নিটিং ডাইয়িং অ্যান্ড ফিনিশিং এবং ময়মনসিংহের কনসিস্ট অ্যপারেলের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন।

মজুরি পরিশোধের বিষয়ে বিজিএমইএ বলেছে, তাদের সদস্য কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৬২১টি। তার মধ্যে সরাসরি রপ্তানি করে ২ হাজার ২৭৪টি। সোমবার পর্যন্ত ২ হাজার ১৫৩টি কারখানা মজুরি পরিশোধ করেছে। আর ১২১ কারখানার মজুরি পরিশোধের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাতে ৯৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ কারখানা ইতিমধ্যে শ্রমিকের মজুরি দিয়েছে। সরাসরি রপ্তানিকারক কারখানার ৯৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ শ্রমিক মজুরি পেয়েছেন।

সরাসরি রপ্তানি করে না, বিজিএমইএর এমন সদস্য কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৭টি। সংগঠনটি বলেছে, কারখানাগুলো রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ইন্টার বন্ডের মাধ্যমে সাবকন্ট্রাকটিং বা ঠিকায় কাজ করে। রপ্তানিকারক যখন নিজের কারখানায় মজুরি পরিশোধ করে তখন সাবকন্ট্রাকটিং প্রতিষ্ঠানেও কোনো সমস্যা হয় না।