প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তো বিজ্ঞানে বিশ্বাসই করেন না: স্টিগলিজ

অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ।
অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ।

তিন মাস আগে বিশ্বের মানুষের মধ্যে একধরনের আশাবাদ ছিল, এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তিন সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে বা বিচ্ছিন্ন থাকলে রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, সবাই এমনটাই ভেবেছিল। কিন্তু তা হয়নি। ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামটা অনেক বড় হয়ে উঠেছে। তবে আমার কাছে সবচেয়ে বড় হতাশার কারণ হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ। তিনি খুবই বাজে আচরণ করেছেন।

ভারতের এনডিটিভির উপস্থাপক প্রণয় রায়ের উপস্থাপনায় ‘টাউনহল’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নোবেল বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ।

জোসেফ স্টিগলিজ বলেন, এ ধরনের জটিল সময়ে নেতৃত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতার আচরণ খুবই হতাশাজনক।

অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে উপস্থাপক প্রণয় রায় স্টিগলিজকে জিজ্ঞাসা করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে এত অগ্রসর দেশ হয়েও এই ভাইরাসে কেন এতটা আক্রান্ত হলো। তারা কি ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি নাকি ব্যাপারটা অস্বীকার করেছে। উত্তরে জোসেফ স্টিগলিজ বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট তো বিজ্ঞানে বিশ্বাসই করেন না। সে জন্য তো বিজ্ঞানচর্চায় বাজেট বরাদ্দ প্রতিবছর ৩০ শতাংশ হারে কমানোর চেষ্টা করছেন তিনি। তাঁর এই আচরণ শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রতি অনৈতিক। দুঃখজনকভাবে রিপাবলিকান পার্টিও তাঁকে সমর্থন করেছে।’ স্টিগলিজ আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় স্বচ্ছতার অভাব আছে। সেটাই সমস্যার উৎস।

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো কী করতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে জোসেফ স্টিগলিজ বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে এই উদয়মান দেশগুলোকে সহায়তা করা উচিত। আমি আশা করি, এই বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য গড়ে উঠবে। জি–২০ ভুক্ত দেশগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে যত ধরনের উপায় হাতে আছে, সবগুলো দিয়েই উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে। এ ছাড়া মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সুদসহ আসল পরিশোধ স্থগিত রাখতে হবে।

সুদ স্থগিত নাকি এই সময়ের জন্য মওকুফ করতে হবে, এই প্রসঙ্গে স্টিগলিজ বলেন, ‘এই সময় কোনো ধরনের সুদ আরোপ না করার পক্ষাপাতী আমি। ধরা যাক এই সময়টা এক বছর। অর্থাৎ এখন আপনার ঘাড়ে যত সুদ আছে, এক বছর পর ঠিক তা–ই থাকবে। সচ্ছল ব্যাংক ও বন্ডধারকেরা এটা অনায়াসেই করতে পারেন। এতে সুদের ওপর সুদ দেওয়ার বিষয়টি থাকবে না।’
স্টিগলিজ বলেন, ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় বিভিন্ন দেশের সরকার এসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে বিপুল ভর্তুকি দিয়েছে। সময় এসেছে, এই করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সারা বিশ্বকে কিছু সহায়তা করতে পারে।

বিশ্বায়নের প্রসঙ্গে স্টিগলিজ বলেন, মহামারি যত দিন চলবে বা তার অর্থনৈতিক প্রভাব যত দিন অনুভূত হবে, তত দিন কেউই নিরাপদ নয়। এই ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সে জন্য একে অন্যকে সহায়ত করার বিকল্প নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপারটা না বুঝলেও অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক তা বোঝেন বলে মনে করেন জোসেফ স্টিগলিজ।