বন্ধ থাকা পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খুলেছে

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বন্ধ থাকা পোশাক ও বস্ত্র কারখানা আজ রোববার সীমিত পরিসরে খুলতে শুরু করেছে। অন্যদিকে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নিষেধ করলেও দূর দূরান্ত থেকে শ্রমিকেরা গত দুই দিন ধরে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই আবার শিল্পাঞ্চলে ফিরছে।

কয়েকজন পোশাকশিল্প মালিক জানান, কারখানাগুলো করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কারখানার বাইরে শ্রমিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে কিছু কারখানা দুই শিফটে (পালা) কারখানা চালানোর উদ্যোগ নিলেও বাধার শিকার হচ্ছেন।

সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর বন্ধ থাকা পোশাক কারখানা খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়। গতকাল শনিবার বিকেএমইএ তাদের সব সদস্য কারখানাকে স্যাম্পল, নিটিং ও ডাইয়িং সেকশন রোববার থেকে চালু করার নির্দেশনা দেয়। অন্যদিকে বিজিএমইএ ঢাকা মহানগরীর ২১৩টি কারখানা চালু করার নির্দেশনা দিয়েছিল। আগামী মঙ্গলবার থেকে পর্যায়ক্রমে অন্য এলাকার কারখানা ধাপে ধাপে খোলার কথা বলেছিলেন সংগঠনটির নেতারা। তবে আজ রোববার সকাল থেকে ঢাকা মহানগরী ছাড়াও অন্যান্য এলাকার পোশাক কারখানা উৎপাদন শুরু করে। শ্রমিকেরাও কাজে যোগ দেন।

শিল্পপুলিশ জানায়, ঢাকা মহানগরী ছাড়া সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিজিএমইএর সদস্য ৪৮০ পোশাক কারখানা চালু হয়েছে। এসব এলাকায় বিকেএমইএর ১২১টি পোশাক কারখানা ও বিটিএমএর সদস্য ৫৮টি বস্ত্রকল খুলেছে। বেপজার অধীনে থাকা ইপিজেডগুলোতে ৩৬৪ কারখানার মধ্য চালু হয়েছে ১৯৮টি। তার মধ্যে অনেকগুলো পোশাক কারখানাও রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা রয়েছে ৭ হাজার ৬০২টি। তার মধ্যে আজ রোববার চালু ছিল ১ হাজার ৪২৭টি। বন্ধ ছিল ৬ হাজার ১৭৫টি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএর একজন নেতা জানান, ঢাকা মহানগরীতে সংগঠনটির সদস্য ২১৩ কারখানা চালু করার নির্দেশণা দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষপর্যন্ত প্রায় ২৫টি কারখানা আজ রোববার উৎপাদন করেছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি আরশাদ জামাল প্রথম আলোকে বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিকদের আপতত না আনতে এবং কাউকে ছাঁটাই না করতে প্রত্যেক সদস্যকে বলা হয়েছে। বিষয়টি জোরালোভাবে তদারকি করায় গতবারের মতো বিপর্যয় হয়নি। তিনি বলেন, যেসব কারখানা চালু করেছে তারা বিজিএমইএ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সীমিত পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে সব কারখানা খুলবে।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, 'দূর-দূরান্ত থেকে শ্রমিকদের না ফিরতে সংগঠন থেকে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। সীমিত পরিসরে উৎপাদনের জন্য আপতত বাইরের শ্রমিকের প্রয়োজন নাই। তারপরও শ্রমিকেরা কেন গ্রাম থেকে আসছে বোধ্যগম নয়।'

জানতে চাইলে শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বড় কারখানাগুলো শ্রমিকদের হাত ধোঁয়া, জীবানুনাশক স্প্রে করা ও শারীরিক দূরত্ব মানতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তবে ছোট-মাঝারি কারখানাগুলো সে রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কারখানাগুলো স্বাস্থ্য বিধি মানছে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদারকি দল গঠন করা প্রয়োজন। তবে কোনো অবস্থাতেই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) এবং শিল্প পুলিশকে সেই দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। কারণ তাদের সেই সক্ষমতা নেই।