কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে

>করোনার কারণে বিশ্ব আজ বলতে গেলে অবরুদ্ধ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা, স্থবির অর্থনীতির চাকা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবহন-যোগাযাগ বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যায় না, যেতে পারেও না। এমনকি পাশের বাড়ি কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও আসা-যাওয়া নিষেধ। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে মানবজীবন। তবে এটিই শেষ কথা নয়। করোনার এই পরিস্থিতি থেকে একদিন মুক্তি পাবে পৃথিবী। তখন কেমন হবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চালচিত্র? অর্থনীতির বিশ্বখ্যাত বিশ্লেষক শুনিয়েছেন আশার কথা, ভয়াবহ এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে চিরতরে বদলে দেবে। স্থায়ী পরিবর্তন ঘটবে রাজনীতিরও। অভিমতগুলো নিয়েছে ফরেন পলিসি ডটকম।
ঈশ্বর প্রসাদ
ঈশ্বর প্রসাদ

করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের নিয়ম নিজেরাই ভেঙে ফেলছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সম্পদ কিনে আর্থিক বাজারকে সহায়তা করছে এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারল্য হিসেবে ডলার দিচ্ছে।

অন্যদিকে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোকে সমর্থন দিতে তারা সবই করবে। একই সঙ্গে তারা সরকারি ও করপোরেট বন্ড কিনছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তো সরাসরি সরকারি ব্যয়ের টাকা জোগাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মতো উদীয়মান কিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে। সব ঝুঁকিকে তারা রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব প্রণোদনা রাজনৈতিকভাবে জটিল প্রমাণিত হয়েছে। এসব বাস্তবায়ন করা ঝামেলাপূর্ণ, এমনকি কোথায় সবচেয়ে বেশি জরুরি, সেটা নির্ধারণ করাও কখনো কঠিন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সাধারণত সতর্ক ও রক্ষণশীল হয়। কিন্তু তারাও এই সময় দেখিয়েছে, কীভাবে সাহস, সৃজনশীলতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হয়। এমনকি এই সময়ে রাজনৈতিক নেতারা যখন আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দ্বিধায় সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানের জন্য তো বটেই, বলা যায়, আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংকটের বিপক্ষে প্রথম সারির যোদ্ধা হয়ে উঠবে। নতুন এই ভূমিকার জন্য তারা হয়তো ভবিষ্যতে আক্ষেপ করবে, যে ভার ও প্রত্যাশা তাদের ওপর চাপল, তা তো নিতান্ত অল্প নয়।

ঈশ্বর প্রসাদ: কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্যনীতির অধ্যাপক।