পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে

>করোনার কারণে বিশ্ব আজ বলতে গেলে অবরুদ্ধ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ভেঙে পড়েছে সরবরাহ ব্যবস্থা, স্থবির অর্থনীতির চাকা। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে পরিবহন-যোগাযাগ বন্ধ। এক দেশের মানুষ অন্য দেশে যায় না, যেতে পারেও না। এমনকি পাশের বাড়ি কিংবা পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও আসা-যাওয়া নিষেধ। সব মিলিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় বিশ্বজুড়ে থমকে গেছে মানবজীবন। তবে এটিই শেষ কথা নয়। করোনার এই পরিস্থিতি থেকে একদিন মুক্তি পাবে পৃথিবী। তখন কেমন হবে বৈশ্বিক অর্থনীতির চালচিত্র? অর্থনীতির বিশ্বখ্যাত বিশ্লেষক শুনিয়েছেন আশার কথা, ভয়াবহ এই মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে চিরতরে বদলে দেবে। স্থায়ী পরিবর্তন ঘটবে রাজনীতিরও। অভিমতগুলো নিয়েছে ফরেন পলিসি ডটকম।
অ্যাডাম পোসেন
অ্যাডাম পোসেন

এই মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিদ্যমান চারটি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। মানুষের শরীরে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে যেমন অনেক কঠিন রোগ সারানো যায়, তেমনি অর্থনীতিতেও বড় ধরনের শল্যচিকিৎসা চালানো হলে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু সেই পদক্ষেপ না থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এই পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, ক্রমবর্ধমান স্থবিরতা, অর্থাৎ উৎপাদনশীলতার নিম্ন প্রবৃদ্ধি, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ হ্রাস ও প্রায় মূল্যহ্রাসের পরিস্থিতি। মানুষ যত দিন ঝুঁকি নেবে না, তত দিন এই বাস্তবতা আরও ঘনীভূত হবে। মহামারির পর মানুষ সঞ্চয়ের হার বাড়িয়ে দিলেও এমনটি হবে। কারণ, এতে দীর্ঘ মেয়াদে চাহিদা ও উদ্ভাবন মার খাবে।

দ্বিতীয়ত, সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর সঙ্গে অন্যান্য দেশের ব্যবধান আরও বাড়বে।

তৃতীয়ত, অংশত নিরাপদ ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর দৃশ্যমান ঝুঁকির জন্য পৃথিবী মার্কিন ডলারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং আর্থিক খাত ও বাণিজ্যিক উভয় খাতেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগের জন্য আর অতটা আকর্ষণীয় থাকবে না তা ঠিক, তবে তখনো বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় তার আকর্ষণ বেশি হবে। এতে বিদ্যমান অসন্তোষ আরও বাড়বে।

শেষত, অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের তোড়ে অনেক দেশ নিজেদের অন্যান্য দেশ থেকে বিযুক্ত করে ফেলবে। এতে যে আবার পূর্ণাঙ্গভাবে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জিত হবে, তা–ও নয়, এমনকি তার কাছাকাছি কিছুও অর্জিত হবে না। কিন্তু এতে প্রথমোক্ত দুটি প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। আর তৃতীয় ধারার ক্ষেত্রে বঞ্চনাবোধ বাড়বে।

অ্যাডাম পোসেন: পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের প্রেসিডেন্ট