ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ

করোনার কোপে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন অবরুদ্ধ অবস্থা চলছে। মানুষের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে প্রবাসী আয়, পণ্য রপ্তানি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে বিপদে আছে দেশ। পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এমন ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে সরকার বড় আকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ায় বেসরকারি খাতের নেতা, উদ্যোক্তা ও শীর্ষ নির্বাহীরা সন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, করোনার প্রভাব কাটাতে মানুষের জীবন-জীবিকা, ছোট ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এসএমই খাত এবং কৃষি ও শিল্পের উৎপাদনশীলতায় জোর দিতে হবে। তাঁদের আশা, সম্মিলিত উদ্যোগে কয়েক মাসের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য আবার স্বাভাবিক হবে, অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।
রূপালী চৌধুরী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ;
সভাপতি, এফআইসিসিআই

আমাদের ব্যবসা মূলত নির্মাণ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এই খাতে ইতিমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ কত, তা বলা যাবে না। তবে রং বিক্রির দোকানগুলো গত ২৫ মার্চ থেকে বন্ধ আছে। আমাদের পরিবেশক, পেইন্টার (রংমিস্ত্রী)—সবাই বিপদে আছেন। তাঁদের জীবিকা নেই, কর্মসংস্থান নেই। আমরা একটি ক্রান্তিকালের মধ্যে আছি।

 সরকার অবশ্য এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। এসব প্যাকেজে বড় উদ্যোক্তারা বেশি সুবিধা পাবেন। প্রণোদনার অর্থ পেতে তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। তবে ছোট ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়া কঠিন হবে। তাঁদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা উচিত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মীর বেতন ও পরিচালনা খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের আয়ের একটি অংশ জমা রাখার মতো সক্ষমতা থাকে না। তাঁদের কোনো রিটেইন আর্নিংস নেই। প্রতিদিনের বিক্রির ওপর তাঁদের জীবিকা নির্ভরশীল। 

করোনার পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটা এখনো সঠিকভাবে বলার সময় আসেনি। তবে এখন জীবনের দিকে তাকাতে হবে; শুধু অর্থনীতির দিকে তাকালে হবে না। অবশ্য অর্থনীতির এমন অবনমন এর আগে বিশ্ব দেখেনি। অর্থনীতির এই পরিস্থিতিতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ কমানোর দিকেই মনোযোগী হচ্ছে। বার্জার পেইন্টসের কথা আমি বলতে পারি। যেমন, আমরা কোনো কর্মী ছাঁটাই করব না। বেতন আগের মতো রেখেই কীভাবে টিকিয়ে রাখা যায়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে। 

আমরা (বার্জার পেইন্টস) নিজস্ব পন্থায় কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। যেমন, এই পর্যন্ত ১৫ হাজার পেইন্টারকে (রংমিস্ত্রী) তাঁদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গড়ে তাঁরা ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন। এই পেইন্টারেরা আমাদের অংশীজন। এই বিপদের সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব।

 করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ফরেন চেম্বারের পক্ষ থেকে আগামী বাজেটের জন্য কিছু সুপারিশ করেছি। যেমন, লাভ-ক্ষতি নির্বিশেষে যে ন্যূনতম কর দেওয়া হয়, তা যেন প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে এ বছর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন নয়, বরং টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ।

 বিশ্ব অর্থনীতি যে মন্দার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু ইউরোপেই চার কোটি লোক বেকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও একই অবস্থা হতে পারে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক আছেন, যাঁরা ছোটখাটো কাজ করেন, তাঁরা বেকার হয়ে যেতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্বমন্দার কারণে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে।