শতভাগ মজুরির দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন অব্যাহত

এপ্রিলে কারখানা বন্ধকালে ৬৫ শতাংশ মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও শতভাগের জন্য পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন চলছেই। আশুলিয়া ও গাজীপুরের কমপক্ষে ৫টি কারখানার শ্রমিকেরা আজ সোমবার বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে একটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো আজ সরকারের প্রণোদনার অর্থে কয়েকটি কারখানা গত মাসের মজুরি দিয়েছে। তবে ব্যাংকের প্রক্রিয়াগত জটিলতার মধ্যে চলতি সপ্তাহের মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিকের মজুরি পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে ঈদ বোনাসের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ৮৮২ পোশাক কারখানার মধ্যে ৯৪টি মজুরি পরিশোধ করেছে। এ ছাড়া নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্য ১ হাজার ১০১ কারখানার মধ্যে ২০টি এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর ৩৮৯ সদস্যের মধ্যে ১৪টি মজুরি দিয়েছে। তবে বিজিএমইএর ৬৩, বিকেএমইএর ৪৫ ও বিটিএমএর ১০টি সদস্য কারখানা গত মার্চের মজুরি এখনো দেয়নি।

শিল্প পুলিশ জানায়, শতভাগ মজুরির দাবিতে আশুলিয়ার শারমিন গ্রুপ, স্টারলিং ক্রিয়েশন, ইয়েগি বাংলাদেশ ও মানামি ফ্যাশনে শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। গাজীপুরের কাশিমপুরে ডিবিএল গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিকেরা শতভাগ মজুরির দাবিতে কারখানায় ভাঙচুর চালান। এ ছাড়া বকেয়া মজুরির দাবিতে আশুলিয়া, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন।

গত ২৮ এপ্রিল সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এপ্রিল মাসে কারখানা বন্ধকালীন সময়ে শ্রমিক-কর্মচারীরা মোট মজুরির ৬০ শতাংশ অর্থ পাবেন। আর যে কয় দিন কর্মদিবস ছিল সে কয় দিনের পূর্ণ মজুরি পাবেন তাঁরা। পরদিন কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সেটি চূড়ান্ত করে শ্রম মন্ত্রণালয়। তবে সেই বৈঠক বর্জন করে শতভাগ মজুরি দেওয়ার দাবি করেন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতারা। ৪ মে তাঁদের সঙ্গে সরকার ও মালিকপক্ষ সভা করে। তাতে এপ্রিলের মজুরি ৬৫ শতাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাড়তি ৫ শতাংশ মে মাসের মজুরির সঙ্গে দেবেন মালিকেরা। সভা শেষে রাতে আইবিসির নেতারা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার আইবিসি ও গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিজিএমইএ।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার, মালিক ও শ্রমিক—ত্রিপক্ষীয় সভায় ৬৫ শতাংশ মজুরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। শ্রমিক ভাইবোনদের প্রতি অনুরোধ করব, কারও প্ররোচনায় ধ্বংসাত্মক কাছে লিপ্ত হবেন না। কারণ, তাতে শিল্প ও শ্রমিকদের ক্ষতি। ইন্ধনদাতাদের কোনো ক্ষতি হয় না।

মজুরি দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ব্যাংকের প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেই দেরি হচ্ছে। অধিকাংশ কারখানার মজুরি দিতে ৮-১০ দিন সময় লাগতে পারে।