প্রথা ভেঙ্গে করোনা মোকাবিলায় মাঠে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক

দুর্যোগ এলে ব্যাংকগুলো সাধারণত অর্থ দিয়ে সহায়তা করে, দীর্ঘদিন ধরে এমনটাই চলে আসছে। তবে এবারে সেই প্রথা ভেঙ্গে সরাসরি নিজেরাই মাঠে নেমেছে বেসরকারি এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাংকটি চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রী দিচ্ছে এবং হাসপাতালে ভেন্টিলেটরও স্থাপন করেছে। 

প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এই ব্যাংক করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বুথ স্থাপন করেছে। করোনা প্রতিরোধে চালাচ্ছে আরও কিছু কার্যক্রম। এজন্য গঠন করেছে আলাদা তহবিল। দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এভাবে মাঠে নেমে বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের চোখ খুলে দিয়েছে নতুন ব্যাংকটি। এমন 'আউট অফ দি বক্স' উদ্যোগ ব্যাংক খাতে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এই উদ্যোগ অনুসরণ করবে বলে আশা করছেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের উদ্যোদ্যেক্তারা।
এসব উদ্যোেগের বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন। রাশিয়া প্রবাসী এ বাংলাদেশী ব্যবসায়ী বলেন,'দেশের এ দুর্যোগে আমরা বসে থাকতে পারি না। ব্যাংক কি শুধু ব্যবসা করার জন্য? এ দুর্যোগে যা প্রয়োজন, আমরা সাধ্যমতো দিয়ে যাচ্ছি। আমরা ছােট ব্যাংক, এজন্য চাহিদামতো সবকিছু করতেও পারছি না। তবে আমাদের চেষ্ঠার কমতি নেই।'
পারভেজ তমাল বলেন, ‌‌'আমরা আশা করি, বড় ব্যাংকগুলো এবং শিল্পপতিরাও এগিয়ে আসবেন। শুধু অর্থ দিয়ে নয়,মাঠে গিয়ে প্রয়োজনমতো সহায়তা করবেন। এভাবেই বড় এ দুর্যোগ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।'
জানা গেছে, কোরোনাভাইরাস মোকাবিলায় মার্চের শুরুতেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা সামগ্রি প্রদান করে ব্যাংকটি। এজন্য প্রথমে প্রধান কার্যালয়সহ সব শাখা ও উপশাখায় মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ড গ্লাভস সরবরাহ করা হয়। পরবর্তীতে এসব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দেওয়া হয়।
মার্চের শেষের দিকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি ভার্চুয়াল হেলথ ডেস্ক চালু করে এনআরবিসি ব্যাংক। এ ছাড়া ব্যাংকটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১১টি ক্লিনিকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। হেলথ ডেস্কগুলো থেকে ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মাচারী ও গ্রাহকদের পাশাপাশি যে কেউ সেবা ও চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শ নিতে পারেন। দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ ১৬৪১৩ ও ০৯৬১২৩১৬৪১৩ নম্বরে ফোন করে বিনা খরচে সেবা নিতে পারেন।
সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ব্যাংকটি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে পিপিইসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকসহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, পিরোজপুর, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, রাজশাহী ও রংপুরেরর করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিবেদিত হাসপাতালসমূহে নিয়োজিত ৭ হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দিয়েছে ব্যাংকটি। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত সাংবাদিক, পুলিশ ও জরুরী সেবার কর্মীদের আরও ১ হাজার পিপিই প্রদান করেছে।
সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি করোনাভাইরাস আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনআরবিসি ব্যাংক ২টি অত্যাধুনিক সিপিএপি মেশিন বা ভেন্টিলেটর বসিয়েছে বলে জানা গেছে।
করোনা রোগী সনাক্তে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে ৫০টি নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন করছে ব্যাংকটি। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের বেশকিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যাম্পল সংগ্রহ বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি তহবিল গঠন করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।এতে তাদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক দিনের বেতন, পরিচালনা পর্ষদের নিজস্ব অর্থায়ন, ব্যাংকের সিএসআর ফান্ডের ১ কোটি টাকা এবং কিছু বিত্তবান গ্রাহকের অনুদান রয়েছে।
ব্যাকটির চেয়ারম্যান জানান, এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। যতদিন প্রয়োজন, নতুন উদ্যোগ নিয়ে মাঠে থাকবে এনআরবিসির কর্মীরা।