অধিকাংশ ফ্যাশন হাউস পুঁজির সংকটে পড়েছে

করোনার কারণে সারা বিশ্বেই ছোট-বড় সব ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কল্পনাতীত কঠিন পরিস্থিতির মুখে। এই মহামারির প্রথম আঘাত পড়েছে ভ্রমণ-পর্যটন ও হোটেল-রেস্তোরাঁ; পোশাক-ফ্যাশন; রপ্তানিমুখী পণ্য, রড-সিমেন্টের কারবারসহ নির্মাণ খাতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে এসব খাত। ইতিমধ্যে কিছু কার্যক্রম চালু হলেও তা গতি পায়নি। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে এবং পরেও মানুষের চাহিদায় পরিবর্তন অনিবার্য। তাঁরা কেনাকাটা ও খরচে অনেক সংযত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। থাকবে নানামুখী চ্যালেঞ্জও। তাই ব্যবসায়িক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘ সময় লাগবে। জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদে ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন। করোনার ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটাতে এরই মধ্যে সরকার লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ব্যবসায়ীরা চান সেই প্রণোদনার সঠিক বাস্তবায়ন, যাতে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও ক্ষতিগ্রস্তরা এ সুবিধা পান। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। কথা বলেছেন মাসুদ মিলাদ, রাজীব আহমেদ, শুভংকর কর্মকার, সানাউল্লাহ সাকিব ও মাকসুদা আজীজ
শাহীন আহম্মেদ
সভাপতি
ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাশন উদ্যোগ)

করোনাভাইরাসের কারণে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এক টাকাও বিক্রি হয়নি। ঈদ সামনে রেখেও বিক্রির যে দুরবস্থা, তাতে অনেক ছোট–মাঝারি ফ্যাশন হাউস কর্মীদের বেতন-ভাতা পুরোটা দিতে পারবে না। গত ১০ মে ঢাকায় সড়কের পাশে যেসব ফ্যাশন হাউস আছে, সেগুলো খুলেছে। তবে বসুন্ধরা, যমুনা, রাপা প্লাজার মতো বিপণিবিতানে যেসব প্রতিষ্ঠানের একটি বা দুটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে, তাদের কেউই একটিও খুলতে পারেনি। আবার ঢাকার বাইরে অনেক এলাকায় বিক্রয়কেন্দ্র খোলেনি। সামগ্রিকভাবে বললে, অধিকাংশ দোকানই খোলেনি।

এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাড়তি অর্থ খরচ করে বিক্রয়কেন্দ্র খুললেও প্রথম তিন-চার দিন কোনো বিক্রি ছিল না। তবে এখন কিছুটা বিক্রি হচ্ছে। তবে তা–ও স্বাভাবিক সময়ে যে বিক্রি হয়, তার চেয়ে কম, কারও কারও অবশ্য একটু বেশি হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান খুলেছে, তাদের ঈদে বিক্রি লক্ষ্যমাত্রার ৫ শতাংশের বেশি হবে না। তাতে করে অধিকাংশ ফ্যাশন হাউস ভয়াবহ পুঁজির সংকটে পড়বে। কারণ, বৈশাখ ও ঈদকে কেন্দ্র করে তাঁরা নিজেদের সমস্ত সঞ্চয়ের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও ধারকর্জ নিয়ে বিনিয়োগ করেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে কিছু ঈদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। তবে অধিকাংশ ফ্যাশন হাউসের অনলাইনে বিক্রির প্রস্তুতি ছিল না। তা ছাড়া আগে থেকে যেসব বড় প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ক্রেতাগোষ্ঠী রয়েছে, তারাই অনলাইনে ভালো বিক্রি করতে পারছে। অন্যরা ফেসবুকে বিক্রির চেষ্টা করছে। কিন্তু আমাদের দেশের ক্রেতাদের বড় অংশই অনলাইনে পোশাক কিনতে ভরসা পান না। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবাই অনুধাবন করতে পেরেছেন, ভবিষ্যতে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে অনলাইনেও জোর দিতে হবে।

করোনার কারণে ব্যবসার এমন করুণ পরিস্থিতি হবে, সেটি কখনোই কল্পনা করিনি। করোনার কারণে যেটি হলো, সেটি অবিশ্বাস্য। ফ্যাশন হাউসগুলোর হাতে কখনোই জমা অর্থ থাকে না। কারণ, প্রায় প্রতিটি হাউসেরই একাধিক বিক্রয়কেন্দ্র থাকে। একটা না একটা বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পয়সা আসবে, এমনটা আশা করেন তাঁরা। কিন্তু করোনায় সব বন্ধ হয়ে গেছে।

বিদেশি পোশাক ও মাত্রাতিরিক্ত দোকান ভাড়ার কারণে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো এমনিতেই চাপে ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই চাপ আরও বেড়েছে। করোনা–পরবর্তী সময়ে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবে। মানুষ অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা কমিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে পোশাকের চাহিদা হ্রাস পেতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমেও পরিবর্তন আনতে হবে। তবে এটিও সত্য, নানামুখী চ্যালেঞ্জের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানই করোনা–পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে না।

পরপর দুটি বড় উৎসবে বেচাবিক্রি প্রত্যাশার ধারে কাছে না হওয়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই চাপে পড়েছে। পুঁজির সংকট প্রকট হয়েছে। যদিও সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে একেক ব্যাংক একেক ধরনের কথা বলছে। কয়েকটি ব্যাংক অবশ্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে মনে হচ্ছে, ঈদের আগে ঋণ পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য জামানতবিহীন ঋণ দরকার। সেটির জন্য ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে। আশা করছি, ছোটরাও ঋণ পাবে।