১০ শতাংশ পোশাক কারখানা এখনো এপ্রিলের মজুরি দেয়নি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

কাল বা পরশু পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরপরও কিছু পোশাক কারখানার মালিক এখনো শ্রমিকের মজুরি ও ঈদ বোনাস দেননি। শ্রমিকনেতাদের দাবি, বর্তমানে চালু থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশ কারখানা এখনো এপ্রিল মাসের মজুরি দেয়নি। আর শিল্প পুলিশ বলছে, ৫০ শতাংশ কারখানা বোনাস দেয়নি। তবে শিল্প পুলিশ এ–ও বলেছে, আজ শনিবার বোনাস দিয়ে বেশির ভাগ কারখানায় ঈদের ছুটি হবে।

পোশাকশ্রমিকদের মজুরি দিতে গত মার্চেই ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে সরকার। যেখান থেকে মাত্র ২ শতাংশ সেবা মাশুলে পোশাকশিল্প মালিকদের ঋণ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এপ্রিলে মজুরি কমিয়ে ৬৫ শতাংশ ও ঈদ বোনাস অর্ধেক পরিশোধ করছেন মালিকেরা। এরপরও মজুরি ও বোনাসের দাবিতে করোনার ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। গতকালও গাজীপুর, সাভার-আশুলিয়া, টঙ্গীর বিভিন্ন কারখানায় মজুরি ও শতভাগ বোনাসের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কারখানা মজুরি দিয়েছে। তবে ৫০ শতাংশ কারখানাও বোনাস দেয়নি। কাল (আজ) শনিবার বোনাস দিয়ে অনেক কারখানা বন্ধ করবে। বর্তমানে বড় সমস্যা বন্ধ থাকা কারখানা। সেগুলোর মালিকপক্ষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৬২১টি। তার মধ্যে সরাসরি রপ্তানিকারক ১ হাজার ৯২৬ কারখানার তথ্য দিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় বিজিএমইএ জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১ হাজার ৮৪৪ কারখানা মজুরি দিয়েছে।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর গণমাধ্যমসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম বলেন, অধিকাংশ কারখানা ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে বোনাস দিয়ে থাকে। তারপর গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪১ কারখানা বোনাস পরিশোধ করেছে। বর্তমানে সচল কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৯২৬। বাকিগুলো বন্ধ।

অন্যদিকে বিকেএমইএর সদস্য ২ হাজার ২৮৩ সদস্যের মধ্যে সরাসরি রপ্তানি করে এমন কারখানার সংখ্যা ৮৩৮। তার মধ্যে ৭১টি কারখানা বন্ধ। বাকি ৭৬৭ কারখানার মধ্যে ৫৯৫টি গত বুধবার পর্যন্ত মজুরি পরিশোধ করেছে। বোনাস দিয়েছে ২০১টি কারখানা।

>

কাল রোববার কিংবা সোমবার ঈদ। তবে বকেয়া মজুরি ও বোনাসের দাবিতে প্রতিদিনই শ্রম অসন্তোষের ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কারস সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, সরাসরি রপ্তানিকারকের বাইরেও বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর অনেক সাবকন্ট্রাকটিং কারখানা সদস্য হিসেবে রয়েছে। কিন্তু বিপদের সময় তাদের দায়দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। ফলে এসব কারখানার শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বেশি সংকটের মধ্যে আছেন।

শ্রমিকনেতা সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, করোনাকালীন বন্ধ থাকা কারখানার শ্রমিকেরা মজুরি-ভাতা পাননি। কারখানাগুলোর মালিকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ পেতে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিজিএমইএর সনদ নিয়েছে ১ হাজার ৩৭৭টি কারখানা। আর বিকেএমইএর সনদ নিয়েছে ৫১৯টি কারখানা।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব কারখানা ঋণের জন্য আবেদন করেছে, তাদের অনেকেই নানা জটিলতার কারণে এখনো মজুরি দিতে পারেনি। আবার ৬০টি কারখানার ঋণ আবেদন বাতিল হয়েছে। তার বাইরে কিছু কারখানার ঋণ আবেদন করার সক্ষমতাও ছিল না। তাই সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত হয়তো ১০-১৫ শতাংশ কারখানা মজুরি ও ভাতা দিতে পারবে না।