সুদ পরিশোধেই ৬৪ হাজার কোটি টাকা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ঋণের সুদ পরিশোধেই ব্যয় হতে পারে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সরকারি কর্মচারীদের জন্য আগামী অর্থবছরে যে বেতন-ভাতা খরচ হবে, এ অর্থ তার প্রায় সমান। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ঋণের সুদের টাকায় দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।

দেশি-বিদেশি উৎস থেকে সরকার যে ঋণ নেবে, তার সুদ পরিশোধে এ অর্থ ব্যয় হবে। চলতি অর্থবছরে ঋণের সুদ বাবদ ৫৭ হাজার ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে সুদের টাকা কিছুটা বাড়িয়ে করা হয় ৫৭ হাজার ৬৬৩ কোটি। আগের অর্থবছরে এ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৫১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।

সূত্রগুলো জানায়, আগামী অর্থবছরে ঋণ পরিশোধের ৯০ শতাংশই বরাদ্দ থাকছে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে। বাকিটা বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয়ের জন্য। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ, ব্যাংকের মেয়াদি ঋণের সুদ, সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল বা জিপিএফের সুদ, চলতি ঋণ এবং জীবনবিমা ও অন্যান্য ঋণের সুদ পরিশোধের বিষয়গুলো রয়েছে।

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, এ ব্যয় অত্যন্ত বেশি। কারণও আছে। সুদের হার খুব বেশি। পুরো নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনা ছাড়া এ অবস্থা থেকে সরকারের আপাতত কোনো মুক্তি দেখা যাচ্ছে না।

বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে এত বেশি টাকা বরাদ্দ রাখার কারণে সরকারের অনেক অগ্রাধিকার খাত ভালো বরাদ্দ পাচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাঁদের মতে, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও সে অনুযায়ী আয় বাড়ছে না। এ কারণে বাজেট বাস্তবায়নে ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। সংগত কারণেই বাড়ছে ঋণের সুদ ব্যয়ও। অর্থ বিভাগের বাজেট তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বেড়েছে প্রায় শতভাগ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ এবং ভর্তুকিতেই ব্যয় হয়ে যায় রাজস্ব বাজেটের ৮০ শতাংশ। যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণেই এই খেসারত দিতে হচ্ছে।

মোস্তাফিজুর রহমানের পরামর্শ হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণ বেশি নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এতে সুদ ব্যয় কমবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদান বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ কমিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা করা হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তবে তাঁরা স্বীকার করেন যে নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূর করতেই ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে সঞ্চয়পত্র কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ফলও পাওয়া যাচ্ছে।

সুদ বরাদ্দ বেড়ে যাওয়ার পেছনে যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ব্যয় ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার দরকার। না হলে সরকারকে আগামী দিনে আরও ব্যয় বাড়াতে হতে পারে।