ব্যাংকে বড় লোকের টাকা রাখার খরচ বাড়তে পারে

>যা যা পরিবর্তন হতে পারে
* আমদানিতে শিল্প পণ্যে ৩% ও বাণিজ্যিক পণ্যে ৫% আগাম ভ্যাট 
* অতি ধনিদের টাকায় আবগারি শুল্ক বাড়তে পারে
* টার্নওভার কর ১ শতাংশ কমতে পারে

আগামী ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু বড় পরিবর্তন আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনের আওতায় আমদানি পর্যায়ে যে নতুন আগাম কর (আগাম ভ্যাট) চালু করা হয়েছে, সেখানে পরিবর্তন হবে। এখন কিছু পণ্য বাদে ঢালাওভাবে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর আদায় করা হয়।

আগামী বাজেটে ভ্যাটের আগাম করে দুটি হার করা হতে পারে। শিল্প খাতের কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্যের জন্য ৩ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক পণ্যের জন্য ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপের প্রস্তাব থাকতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দায়িত্বশীল সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। আগাম করে পরিবর্তন করা হলে উদ্যোক্তারা বেশি সুবিধা পাবেন। তাতে আমদানি খরচ কমবে।

এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে আবগারি শুল্ক, টার্নওভার কর, সিগারেটের মূল্যস্তর বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর দেশজ উৎপাদনে ভ্যাট ছাড়সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বড় লোকের তথা ধনীদের ব্যাংকে টাকা রাখার খরচ বাড়তে পারে। বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে নির্দিষ্ট সীমার বেশি টাকা থাকলেই বিভিন্ন হারে আবগরি শুল্ক আরোপ করা হয়। বছরে একবারের জন্য হলেও ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি থাকলেই আবগারি শুল্ক দিতে হয়। সর্বোচ্চ শ্রেণিতে আবগারি শুল্কের পরিবর্তন আসতে পারে। ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবে থাকলে বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়। এই অতিধনী শ্রেণির আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার কম থাকলে আবগারি শুল্ক দিতে হয় না।
এক লাখ টাকার বেশি কিন্তু ৫ লাখ টাকার কম থাকলে ১৫০ টাকা; ৫ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১০ লাখ টাকার কম হলে ৫০০ টাকা; ১০ লাখ টাকার বেশি কিন্তু ১ কোটি টাকার কম হলে ২ হাজার টাকা; ১ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ৫ কোটি টাকার কম থাকলে সাড়ে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। আবগারি শুল্ক বছরে একবার দিতে হয়, ব্যাংক এই টাকা কেটে রেখে সরকারি কোষগারে জমা দেয়।

এর বাইরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য ভ্যাটে বেশ বড় ছাড় আসছে। বর্তমানে বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম হলে কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। ৫০ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত বার্ষিক লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানকে ৪ শতাংশ টার্নওভার কর দিতে হয়। এই টার্নওভার কর ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

এদিকে তামাক জাতীয় পণ্যকে নিরুৎসাহিত করতে এবারও উদ্যোগ থাকছে। সিগারেটের নিম্ন ও নিম্নমধ্যম মূল্যস্তরে পরিবর্তন আসতে পারে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এই দুটি মূল্যস্তর ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
আটা, চিনি এমন নিত্যপণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া আছে। এই অব্যাহতি আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া গ্যাস উৎপাদন করে সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট মওকুফের অংশ কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। ভ্যাট আরোপের ক্ষেত্রে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য বাড়তে পারে।

বাজেট সম্পর্কে এনবিআর ভ্যাট বিভাগের সদস্য জামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বাজেট ব্যবসাবান্ধব হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সহজ হয়, ব্যবসায়ীদের ওপর যাতে চাপ কম পড়ে, এমন পরিবর্তন বেশি থাকবে বাজেটে।

এ ছাড়া আগাম নেওয়া ভ্যাটের টাকা সমন্বয় করার পদ্ধতি সহজ করার দিকনির্দেশনা থাকবে নতুন বাজেটে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পর্যায়ে যে ভ্যাট দেন তা সহজেই সমন্বয় বা ফেরত পান, সেই ব্যবস্থা আরও সহজ করা হবে।

করোনার সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর স্থানীয় উৎপাদকদের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে এক বছরের জন্য ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে।


এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে কিছু আওতায় বাড়ানো হতে পারে। বেশ কিছু নতুন খাত আসতে পারে।

গত বাজেটে বেচাকেনার হিসাব রাখার জন্য কেনা দামে ব্যবসায়ীদের ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ইএফডি আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আগামী জুলাই মাস থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সীমিত পরিসরে ইএফডি মেশিন দেওয়ার ঘোষণা থাকবে বাজেটে। ইতিমধ্যে ইএফডি মেশিনের প্রথম চালান এনবিআরের হাতে এসে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে ভ্যাটে। এই খাতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা আদায় করার লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আয়করে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং শুল্ক খাতে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকার লক্ষ্য দেওয়া হবে।