ধনীদের কর ছাড় আর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ কেন, প্রশ্ন সিপিডির

২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলে অভিহিত করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি মনে করে, করোনাভাইরাসের শিক্ষা থেকে বাজেটে যে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ দরকার ছিল, তা নেই। বরং বিনিয়োগ, রাজস্ব আদায় ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লক্ষ্যগুলো বাস্তবতা থেকে দূরে।

সিপিডি বাজেটে ধনীদের কেন কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, কেন কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সংস্থাটি হিসাব করে দেখিয়েছে, ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের ক্ষেত্রে সরকার যে ছাড় দিয়েছে, তাতে একজন নিম্নবিত্তের কর কমবে ৫ হাজার টাকা। আর অতিধনীর কমবে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা পর্যন্ত।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। আজ শুক্রবার সকালে বাজেট নিয়ে নিজেদের পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডি। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বাজেট প্রস্তাবে সরকারের দায়বদ্ধতা ও আন্তরিকতা দেখা যায়। কিন্তু উদ্ভাবনের দীপ্তি নেই।'

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) হিসাব মেলানোর জন্য রাজস্ব আদায়ের একটি অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‌‘এ বছর একজন ঋণখেলাপি, একজন করখেলাপিকেও ছাড়া হবে না, কারণ এখন সবাই ত্যাগ স্বীকার করছে—এ ধরনের একটি মনোভাব নিয়ে এগোনো যেত। তার বদলে আমরা দেখলাম কালোটাকায় ছাড় দেওয়ার মতো একটি পদক্ষেপ নেওয়া হলো।’

অনুষ্ঠানে সিডিপির পক্ষে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার। আর এ সুযোগ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। কারণ স্বাধীনতার পরে সব সময় এ সুযোগ দেওয়া হলেও মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে, যার প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা সাদা হয়েছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, যথাযত পদক্ষেপ না নিলে কেউ কালোটাকা সাদা করেন না। যখন ফাঁকি দিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ থাকে, তখন সাদা করার তাগিদ থাকে না।

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার হয়তো তুষ্ট রাখতে চেয়েছে। কাউকে চাপে রাখতে চায়নি। যদিও এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যয় কমানো দরকার ছিল, যেমন বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া।

এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করেছেন। এ ছাড়া করের প্রত্যেক স্ল্যাব বা ধাপে হার ৫ শতাংশ কমানো হয়।

ফাহমিদা খাতুন যে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন তাতে দেখা যায়, এতে দেখা যায়, যার মাসিক করযোগ্য আয় ২৫ হাজার টাকা, তিনি বছর শেষে ৫ হাজার টাকার একটি ছাড় পাবেন। মাসিক ৩৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করযোগ্য আয়ে বছরে কর ১০ হাজার টাকার মতো ছাড় পাওয়া যাবে।

উচ্চ বেতনধারী বা আয় করা করা মানুষের ক্ষেত্রে ছাড় আরও বেশি। সিপিডির হিসাব বলছে, নতুন কাঠামোয় ৫ লাখ টাকা মাসিক করযোগ্য আয়ে বছরে কর ছাড় মিলবে ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। এভাবে ১০ লাখ টাকা আয়ে কর ছাড় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। আর যিনি অতিধনী, যার মাসিক করযোগ্য আয় ৪ কোটি, তিনি বছর শেষে ছাড় পাবেন প্রায় ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘যখন আয় বৈষম্য বাড়ছে, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ যথেষ্ট নয়, তখন ধনীদের কর ছাড়ের যুক্তি কী?’