'তারা বিদেশেই চলে যাক না'

আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি
আ হ ম মুস্তফা কামাল । ফাইল ছবি

যারা দেশের টাকা দেশে রাখতে চান না, তারা একেবারেই বিদেশে চলে যাক না-বাজেট উত্তর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আজ শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তব্যে গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী বলেছেন, অর্থ পাচার প্রমাণিত হলেই ৫০ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। নতুন এই বিধান ফলপ্রসূ হবে। বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আরও বলেছেন, বেশি দাম দেখিয়ে আমদানি, কম দাম দেখিয়ে রপ্তানি এবং ভুয়া বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান কঠোর।

 কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী নিজেদের ওয়েবসাইটেই ঘোষণা দিচ্ছেন বিভিন্ন দেশে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে অন্ধকারে। অর্থ পাচারকারীদের ধরতে সরকার সত্যিই আন্তরিক কিনা-অর্থমন্ত্রীকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি এর জবাব দিতে প্রথমে খোঁজেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকে। তাঁকে না পেয়ে জবাব দেওয়ার দায়িত্ব দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য এম শামসুল আলমকে। শামসুল আলম এ জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অর্থমন্ত্রী পরে গভর্নর ফজলে কবিরকে খুঁজতে থাকেন। গভর্নরকে পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত জবাব দেন তিনি নিজেই।

অর্থমন্ত্রী প্রথমে গভর্নরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'বিদেশে অর্থ চলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মোকদ্দমা হয়নি। আইনটিতে কোনো ত্রুটি থাকলে নতুন আইন করতে হবে।' পরে আবার বলেন, আসলে এ ব্যাপারে যথাযথ আইনই নেই। তবে আগে দেখা যেত পণ্য আসেনি, কিন্তু অর্থ চলে গেছে। এগুলো এখন কমেছে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হলে আরও কমবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, 'কোনো সরকারই চাইবে না অর্থ বিদেশে চলে যাক। এ ধরনের ঘটনা হলে কেউ যদি আমাকে, গভর্নরকে বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে জানান, আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।' অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা চাই দেশের অর্থ দেশেই থাকুক। দেশের অর্থ দেশেই খরচ করুক তারা। যারা দেশে খরচ করতে চান না, তারা একেবারেই বিদেশে চলে যাক না।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, অস্বাভাবিক সময়ে ভিন্নপথের অবস্থান থেকে এবার বাজেট করতে হয়েছে। মানুষকে রক্ষা করাটাকেই এতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার আমরা আগে টাকা খরচ করব, তারপর আয়ের দিকে মনোযোগী হব।তবে যেভাবে সাজিয়েছি, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবো।

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামসুল আলম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকে নিয়ে প্রশ্নোত্তর-নির্ভর এ সংবাদ সম্মেলনটি করেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মানুষকে খাবার দিতে হবে। চাকরি হারাদের চাকরি দিতে হবে। অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা করোনা বেশিদিন প্রলম্বিত হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা যাবে।

স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দসহ মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে দুর্নীতির পাশাপাশি অদক্ষতাও আছে। এ বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর স্বাস্থ্য খাতের অসঙ্গতি ও দুর্বলতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ বন্ধ রাখলে তো আর দুর্নীতি দূর করা যাবে না। দুর্নীতি বন্ধ করা সরকারের কর্তব্য সরকার তা দেখবে। কিন্তু স্বাস্থ্য সেবার প্রসার ঘটাতে বাড়তি বরাদ্দের দরকার। হাত কেটে ফেললেই হাতের রোগ দূর হয় না। রোগ তখন পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়। সরকারকে ধন্যবাদ যে হাত কেটে হাতের রোগ সারাবার পথে যায়নি।

মোবাইল অপারেটরগুলো বাজেট ঘোষণার এক দিনের মাথায় বেশি হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপের মেসেজ দিচ্ছে-এ বিষয়ে জবাব দিতে অথর্মন্ত্রী দায়িত্ব দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে। পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়ে দেন এটা তার বিষয় না।

পরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে কত শতাংশ বাড়ানো হলে সেটা বিবেচনা না করেই এর বিরোধিতা করা। মোবাইল অপারেটররাও এর পেছনে থাকতে পারেন। তিনি বলেন, দেখতে হবে যে কতটুকু বাড়ানো হচ্ছে। সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে কথা বলার খরচ অনেক কম। তাই অপ্রয়োজনীয় কথা বলার প্রবণতা বেড়ে গেছে। যতটুকু বাড়ানো হচ্ছে তা ব্যয়ের সক্ষমতা মানুষের আছে।