৭৯ শতাংশ ভোক্তা ডিজিটাল উপায়ে পণ্যসেবা কেনেন: মাস্টারকার্ড

ডিজিটাল কমার্স বা প্রযুক্তিভিত্তিক বাণিজ্যকে বেছে নিচ্ছেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভোক্তারা। পুরোনো পদ্ধতিতে কেনাকাটায় ভোক্তার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ৭৯ শতাংশ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৯১ শতাংশ ভোক্তা ডিজিটাল উপায়ে পণ্যসেবা কিনে থাকেন। প্রতি ১০ জনে ৬ জন ভোক্তাই স্থায়ীভাবে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন করতে চান। তাঁরা মনে করেন, করোনার পর পুরোনো পদ্ধতির লেনদেনের জায়গাটি নিয়ে নেবে অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম। সম্প্রতি মাস্টারকার্ডের এক গবেষণা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

২৭ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করে মাস্টারকার্ড। জরিপে দেখা যায়, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ৩০, ভারতে ৪৯, চীনে ৫৫ ও জাপানে ৩৪ শতাংশ মানুষ অনলাইনে কেনাকাটা করার পরিকল্পনার কথা জানান। এ ছাড়া একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৩৮, ভারতে ৬৮, চীনে ৫৭ ও জাপানে ৪০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে তাঁরা আজকাল স্টোর বা দোকানে গিয়ে কেনাকাটার কথা খুব কমই ভাবছেন।

কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লকডাউন জারি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এর প্রভাবে অনেক স্টোর বা দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ সেলসফোর্স শপিং ইনডেক্স অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ডিজিটাল কমার্স বা অনলাইনভিত্তিক কেনাবেচার পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে।

মাস্টারকার্ডের জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ১০ জনে ৬ জনই জানান যে তাঁরা বর্তমান করোনার সময়ে গতানুগতিক ধারা ছেড়ে স্থায়ীভাবে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন করতে চান। প্রায় অর্ধেক ভোক্তা মনে করেন, করোনার পর পুরোনো পদ্ধতির লেনদেনের জায়গাটি নিয়ে নেবে অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৬ শতাংশ ভোক্তাই জানান, তাঁরা সচরাচর নগদবিহীন লেনদেন বা অনলাইনে লেনদেন সম্পাদন করে থাকেন। নগদবিহীন লেনদেনের হার অস্ট্রেলিয়ায় ৫২, ভারতে ৪৯, চীনে ৪৩ এবং জাপানে ৪১ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার ৭১ শতাংশ, ভারতের ৭৭ শতাংশ, চীনের ৭৩ শতাংশ ও জাপানের ৬২ শতাংশ ভোক্তাই এখন বিশ্বাস করেন, নগদবিহীন কেনাকাটা ও লেনদেন প্রতিষ্ঠিত হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
গত এপ্রিলে পরিচালিত এই বৈশ্বিক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৭৯ শতাংশ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৯১ শতাংশ ভোক্তা ডিজিটাল উপায়ে পণ্যসেবা কিনে থাকেন। নিরাপত্তা বিবেচনায় বিশ্বব্যাপী ৭৪ শতাংশ এবং এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ ভোক্তা জানান, তাঁরা করোনার পরও নগদবিহীন, অর্থাৎ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন অব্যাহত রাখতে চান। জরিপে ১৫টি দেশের ৬ হাজার ৭৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মত নিয়েছে মাস্টারকার্ড। দেশগুলো হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, কলম্বিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইতালি, স্পেন, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মাস্টারকার্ডের প্রোডাক্টস অ্যান্ড ইনোভেশন বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সন্দীপ মালহোত্রা বলেন, ‘আমরা এখন ডিজিটাল কমার্স, অর্থাৎ প্রযুক্তিনির্ভর বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়ছি। মানুষ নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে এখন প্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। ফুড ডেলিভারি ও মুদি পণ্য কেনা থেকে শুরু করে টেলিমেডিসিন, কনফারেন্স আয়োজন, ফিটনেস কোর্স, লার্নিং ও বিনোদন—সব পণ্যসেবাই নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ঘরে বসেই পেতে চায় মানুষ। মানুষের এই চাহিদা ও প্রত্যাশা কোভিড-১৯ শেষ হওয়ার পরও অব্যাহত থাকবে এবং তা অনলাইন বা ই-কমার্সের মাধ্যমে সম্পন্ন করার ঝোঁক ও প্রবণতা জোরালো হবে।’
সন্দীপ মালহোত্রা বলেন, ‘বর্তমান সময়টা সবার জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জের। এই সময়ে আমরা পণ্যসেবা উদ্ভাবন ও পরিবর্তন আনয়নে জোর দিয়েছি, যা আমাদের সবার মনোবল শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যৎটা হবে ডিজিটাল অর্থনীতির।’
ভারতে সম্প্রতি মাস্টারকার্ড, অ্যাক্সিস ব্যাংক ও ওয়ার্ল্ড লাইন সফট পিওএস (পয়েন্ট অব সেলস) চালু করেছে। এটি একটি অ্যাপ (অ্যাপ্লিকেশন), যেটির মাধ্যমে স্মার্টফোন পয়েন্ট অব সেলসে (পিওএস) পরিণত হয়। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ী-ভোক্তানির্বিশেষে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে নগদবিহীন লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন।