করোনায় কদর হারাল রসুন

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনার শুরুতে চার মাস আগে পাইকারি বাজারে চীনা রসুনের দর উঠেছিল কেজিপ্রতি ১৮০ টাকা। এরপর রসুনের বাজার কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেও দাম শতকের ওপরেই ছিল। তবে এবার তা তলানিতে নামছে। পাইকারি বাজারে প্রতিদিনই দরপতন হচ্ছে মসলাজাতীয় এই পণ্যের।

 আমদানিকারকেরা বলছেন, রসুনের দাম কমার বড় কারণ করোনার প্রভাব। করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে রেস্তোরাঁ ও পর্যটন এলাকাগুলো কার্যত বন্ধ। তাই পাউডার, আচারের মতো পণ্য তৈরি এবং রান্নায় রসুনের ব্যবহারও কমে গেছে বিশ্বজুড়ে। চাহিদা কমে যাওয়ায় রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ রসুনের দামও পড়ছে।

 চীন এখন রসুন রপ্তানি করছে টনপ্রতি ৫৬০ ডলারে। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি দাম পড়ে ৪৮ টাকা। এবারের বাজেটে রসুনের অগ্রিম আয়কর কমানো হয়েছে। তারও প্রভাব পড়েছে দামে। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত সোমবার প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৭৫ টাকা। এই দাম যে আরও কমবে, তারও পূর্বাভাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 এদিকে পাইকারি দাম কমলেও তার দ্রুত প্রভাব দেখা যাচ্ছে না খুচরা বাজারে। খুচরায় এখনো চীনা রসুন কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১১০ টাকায়, যা পাইকারির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবির) হিসাবে, এক মাসের ব্যবধানে খুচরায় রসুনের দাম কমেছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

 মসলাজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে চীনের রসুনের চাহিদা কমে গেছে। আবার চীনে ফলনও ভালো হয়েছে। তাতে চীনে রসুনের রপ্তানিমূল্য কমছে। দেশে রসুনের প্রায় পুরোটাই যেহেতু চীন থেকেই আমদানি হয়, সে জন্য এখানেও দাম পড়ে গেছে।

 রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, রসুন আমদানির ৯৭ শতাংশই আসে চীন থেকে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই তা আমদানি হয়। এবার রসুন আমদানি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। চলতি ২০১৯–২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই–মে) বন্দর দিয়ে রসুন আমদানি হয়েছে প্রায় ৮১ হাজার টন। গত ২০১৮–১৯ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ২০ হাজার টন বা ৩২ শতাংশ বেশি। চীন ছাড়া ভারত থেকে বছরে দেড় হাজার টনের মতো রসুন আমদানি হয়।

 রসুন আমদানি বেড়েছে, দামও কম। এতে আগামী আগস্টে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রসুনের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার শঙ্কা নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এবার ঈদুল আজহায় আগের মতো চাহিদা থাকবে না বলেও ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।

>

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত সোমবার প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৭৫ টাকা।

 চট্টগ্রামে রসুনের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, চার মাস আগে দেশি ফলন বাজারে এসেছে। আমদানিও বেড়েছে। করোনায় চাহিদা অনেক কম। সব মিলিয়ে রসুনের বাজার পড়তির দিকে। বিশ্ববাজার পড়তির দিকে থাকায় সামনে দেশের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো শঙ্কা দেখি না।

 দেশের রসুনের বাজার বলতে গেলে চীনের ওপর নির্ভরশীল। তাই বাজারে দেশি রসুনের খুব একটা দেখা মেলে না। এরপরও সরকারি হিসাবে দেশি রসুনের উৎপাদন অনেক বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, গত অর্থবছর দেশে রসুন উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৬৬ হাজার টন। তবে কৃষি বিভাগের হিসাবে, দেশে রসুনের উৎপাদনের পরিমাণ আরও বেশি। গত অর্থবছর ৬ লাখ ১৩ হাজার টন রসুন উৎপাদন হয় বলে কৃষি বিভাগের তথ্যে দেখানো হয়। অর্থাৎ, আমদানির চেয়ে ৭ থেকে ৯ গুণ রসুন দেশে উৎপাদিত হয়।

 দেশি রসুনের ঝাঁজ বেশি। মানও ভালো। কিন্তু ছোট কোয়ার কারণে তা ব্যবহারের উপযোগী করতে সময় লাগে বেশি। এতে শহরে ঘরে ও রেস্তোরাঁয় চীন থেকে আমদানি করা বড় কোয়া রসুনের ব্যবহার বেশি হয়। আমদানির চেয়ে দেশে ৭ থেকে ৯ গুণ উৎপাদনের তথ্য সরকারি হিসাবে থাকলেও দিন শেষে রসুনের দাম নির্ভর করে চীনা রসুনের ওপর।

 মসলাজাতীয় এই পণ্যের বাজারের আকারও ছোট নয়। কাস্টমের হিসাবে, ১১ মাসে যে পরিমাণ রসুন আমদানি হয়েছে, তার শুল্কায়নমূল্য ছিল ৮০২ কোটি টাকা। খুচরা পর্যায়ে বাজারের আকার প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রসুন আমদানিকারকের তালিকায় আছেন ১৬৭ জন ব্যবসায়ী।