লতিফুর রহমানের জন্য শোকগাথা

এক ফ্রেমে দেশের শতবর্ষের পুরোনো মেট্রো চেম্বারের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সঙ্গে  লতিফুর রহমান (ডান থেকে দ্বিতীয়)।  ছবি: মেট্রো চেম্বারের সৌজন্যে
এক ফ্রেমে দেশের শতবর্ষের পুরোনো মেট্রো চেম্বারের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের সঙ্গে লতিফুর রহমান (ডান থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: মেট্রো চেম্বারের সৌজন্যে

সততা ও নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করেও যে সফল ব্যবসায়ী হওয়া যায়, তার বড় উদাহরণ ছিলেন লতিফুর রহমান। ব্যবসায় নৈতিকতার জন্য পেয়েছেন অসলো বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২। সততার সঙ্গে ব্যবসা করে নিজে সফল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের। তিন দফায় সাতবার শতবর্ষের পুরোনো মেট্রো চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) হয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন ও কাছ থেকে দেখেছেন এমন ব্যবসায়ীরা তুলে ধরলেন তাঁর কীর্তির কথা।

নিজেকে নয়, প্রতিষ্ঠানকে বড় করতে চাইতেন
তপন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস 

তপন চৌধুরী
তপন চৌধুরী

জীবনে কোনো দিন নৈতিকতার সঙ্গে আপস করেননি লতিফুর রহমান। এ জন্য তাঁকে অনেক ভোগান্তিও সহ্য করতে হয়েছে। কোনো বিশেষ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্রুত উন্নতি বা সাফল্য অর্জনের পথে কখনো হাঁটেননি। এ দেশে অনেকে অনেকভাবে রাতারাতি বড় ব্যবসায়ী হওয়ার চেষ্টা করেন। নীতি, নৈতিকতা বাদ দিয়ে মানুষ ঠকিয়ে নানা সুযোগ কাজে লাগান বিত্ত–বৈভব গড়তে। কিন্তু লতিফুর রহমান ছিলেন ঠিক উল্টো। নিজে স্বচ্ছ মানুষ ছিলেন, তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোতেও স্বচ্ছতার চর্চা নিশ্চিত করেছেন। তাঁর যাঁরা ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁদেরও তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করার কথা বলতেন। পারিবারিকভাবে আমরা তাঁর সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আমরা যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছি, তাঁরা জানি, তিনি মানুষ ও ব্যবসায়ী হিসেবে কতটা ব্যতিক্রম ছিলেন। ছিলেন প্রচারবিমুখও।

লতিফুর রহমানের আরেকটি দর্শন ছিল সবার কাছে শিক্ষণীয়। তিনি নিজেকে বড় করার চেয়ে প্রতিষ্ঠানকে বড় করে তোলার প্রতি ছিলেন বেশি আগ্রহী। এ কারণে কখনো নিজে পাদপ্রদীপে থাকতে চাইতেন না। আড়ালে থেকে প্রতিষ্ঠানকে বড় করেছেন। এর ফলে আমরা দেখলাম, তাঁর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিশাল সুনামের সঙ্গে বড় হতে থাকল। শেষ পর্যন্ত সেসব প্রতিষ্ঠানই তাঁকে বড় করে তুলেছে। আমি মনে করি, আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাঁর কাছ থেকে ব্যবসার নৈতিকতা, সততা, মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে পারে। আর যাঁরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠানকে বড় করার শিক্ষাটি নিতে পারেন। লতিফুর রহমানের চলে যাওয়া দেশের বড় ক্ষতি।

যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্যই তিনি আদর্শ 
এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই

এ কে আজাদ
এ কে আজাদ

লতিফুর রহমান নামটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে দেশের অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন ক্ষণজন্মা শিল্পপতির অবয়ব। আজ আমরা তাঁকে হারালাম। মনটা খুব খারাপ। তাঁর মৃত্যুতে শুধু ব্যবসায়ী সমাজের নয়, দেশেরও অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান তো তিনি ছিলেনই, কিন্তু কী ছিলেন না! দেশের ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি ছিলেন। ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। জীবনভর তিনি ব্যবসায়ী সমাজকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। কখনো পদে থেকে, কখনোবা পদে না থেকেই।

লতিফুর রহমান ট্রান্সকম গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। ছিলেন নীতিমান ব্যবসায়ী। ব্যবসার প্রয়োজনে কখনো অনৈতিক সুবিধা তিনি যেমন নেননি, দেনওনি। আর তাই একজন সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে মিলেছে তাঁর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ২০১২ সালে তিনি যখন ‘বিজনেস ফর পিস অ্যাওয়ার্ড’ পান, গর্বে বুকটা ভরে গিয়েছিল।

আইসিসিতে থাকার সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে নিরলস কাজ করে গেছেন লতিফুর রহমান। দেশের ব্যবসায়ীরা যাতে স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ পান, সে জন্যও সব সময় সোচ্চার ছিলেন তিনি।

লতিফুর রহমানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। পরিবারের একজন মুরব্বির মতোই তিনি ছায়া দিয়ে গেছেন আমাকে। শিল্পপতির জন্য লতিফুর রহমান একজন আদর্শ।

নিভৃতে কাজ করতে পছন্দ করতেন তিনি 
নিহাদ কবীর, সভাপতি, মেট্রো চেম্বার

নিহাদ কবীর
নিহাদ কবীর

লতিফুর রহমানের (আমার কাছে শামীম মামা) প্রয়াণে বাংলাদেশ ব্যবসায় জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারাল। মেট্রো চেম্বার হারাল একজন প্রাজ্ঞ সভাপতিকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি হারিয়েছি একজন নিকটাত্মীয় ও মেন্টরকে। বহু দশকের পরিশ্রম ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি ট্রান্সকম গ্রুপকে এ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। তাঁর তৈরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মেট্রো চেম্বারের সভাপতি হিসেবে তিনি সততা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করার নীতি প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। এ জন্য তিনি নিজে ও তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠান দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি সব সময় তরুণদের সামনে এগিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। বাংলাদেশের ব্যবসাজগতের যা কিছু ভালো, পৃথিবীর সামনে দ্ব্যর্থহীনভাবে তা তুলে ধরেছেন। তাঁর অনুকরণীয় সামাজিক দায়িত্ববোধ ও কার্যক্রম জনসমক্ষে ততটা পরিচিত নয়। কারণ, তিনি নিভৃতে কাজ করতেই পছন্দ করতেন। 

ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত স্নেহময়, সজ্জন মানুষটি ব্যবসায়িক বা পেশাগত কর্মকাণ্ডের সময় সবার সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার করতেন। তারপরও তাঁর ক্ষুরধার বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার ব্যবহার দৃশ্যমান হয়ে উঠত। কন্যা ও দৌহিত্রকে হারানোর পরও তিনি অপরিমিত ধৈর্যের পরিচয় দেন। লতিফুর রহমান ও আমার মা লায়লা কবীর, দুজনেরই জন্ম জলপাইগুড়ির একই বংশের দুটি ধারায়। দুজনেই মেট্রো চেম্বারের সাবেক সভাপতি। দুজনেরই দেশপ্রেম অতুলনীয়। তাঁদের স্নেহের ছোঁয়া ও উপদেশ আমাকে মেট্রো চেম্বারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। আমি যেবার প্রথম মেট্রো চেম্বারের কমিটির সদস্য হলাম, শামীম মামা তখন সভাপতি। আজ তিনি চলে গেলেন। আর মেট্রো চেম্বারের সভাপতি হিসেবে তাঁর স্মৃতিচারণা করা আমার জন্য ভীষণ কষ্টের। শুধু মেট্রো চেম্বারে নয়, সারা দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় তাঁর অভাব গভীরভাবে অনুভব করবে। 

মাথার ওপর থেকে ছায়াটি সরে গেল 
মো. ফজলুল হক, সাবেক সভাপতি, বিকেএমইএ

মো. ফজলুল হক
মো. ফজলুল হক

লতিফুর রহমানের মৃত্যু আমাকে এলোমেলো করে দিল। একটা অনলাইন বৈঠকে ছিলাম। ঠিক তখনই খবরটা শুনলাম। বৈঠকটি আর করতে পারলাম না। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এমন একজন নিপাট ভদ্রলোক, শুধু ব্যবসায়ী সমাজ নয়, গোটা সমাজেই কম আছে। সারা দিন কেবলই মনে হচ্ছিল, মাথার ওপর থেকে ছায়াটি সরে গেল।

লতিফুর রহমানের কথাবার্তা ও আচার-আচরণের পরিশীলতা সারা জীবনই আমাকে ভাবিয়েছে। কীভাবে পারেন তিনি! তিনি যখন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) নেতৃত্বে ছিলেন, দেখেছি, কত সহজভাবে মানুষকে আপন করে নিতেন। কখনো তাঁকে রাগ করতে দেখিনি। বয়সে আমি তাঁর অনেক ছোট। কিন্তু আমাকে তাঁর মনের ভেতরের কোথাও যেন একটু জায়গা দিয়েছিলেন। এত স্নেহ করতেন যে মাঝে মাঝে বিব্রতই হতাম।

তাঁর একটা বিষয় আমাকে খুব মুগ্ধ করত। আমি যখন বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি হলাম, কারও সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় বলতেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ছেলেটি এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমাকে খুবই উৎসাহ দিতেন। আইসিসির একটা সম্মেলনে আমরা একবার অস্ট্রেলিয়ার সিডনি গেলাম। এক সপ্তাহ ছিলাম। অনেক আড্ডা হয়েছে। মানুষ বলে না যে ভ্রমণে গেলে মানুষ চেনা যায়। ওই সময় কাছ থেকে তাঁকে দেখেছি, একজন মানুষ কতটা অনুকরণীয় হতে পারেন। তাঁর চলে যাওয়া ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য তো বটেই, জাতির জন্যও অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর ন্যায়পরায়ণতা, নীতিনিষ্ঠতা ও আদর্শ অনুসরণ করে দেশের ব্যবসায়ীরা আরও এগিয়ে যাবেন, এটাই আমার চাওয়া।

মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করেননি
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার

সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর

লতিফুর রহমানের যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে সেটি হলো, মানুষের সঙ্গে তাঁর অসাধারণ ব্যবহার। তিনি মানুষের সঙ্গে কখনো কোনো ভেদাভেদ করতেন না। সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। আমরা কখনো তাঁকে আগে সালাম দিতে পারতাম না। তিনিই আগে সালাম দিয়ে বলতেন, নাসিম কেমন আছ।

ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি (লতিফুর রহমান) আমাদের জন্য বাতিঘর, আদর্শ। বাংলাদেশে নিষ্ঠার সঙ্গে, আদর্শের সঙ্গে, মূল্যবোধের সঙ্গে ব্যবসা করেও যে সফলহওয়া যায়, বড় হওয়া যায়, তিনি সেই অসম্ভব কাজটি করে দেখিয়েছেন। তিনি যেটাতে বিশ্বাস করতেন, সেটা থেকে কখনো নড়তেন না। এই অনড় অবস্থানের কারণে তিনি জীবনে অনেক ধাক্কা খেয়েছেন। কিন্তু মূল্যবোধের জায়গা থেকে একটুও সরেননি। এটা নতুন প্রজন্মের জন্য একটা উদাহরণ। 

লতিফুর রহমানের বড় ধাঁচে চিন্তা করা ও দূরদর্শিতার গুণ ছিল। তিনি আগে থেকেই অনেক কিছু ভাবতে পারতেন, দেখতে পারতেন, সেটা আমরা অনেকেই পারি না। যদি একটা গুণের কথা জানতে চাওয়া হয়, আমি বলব লতিফুর রহমানের নিষ্ঠা ও মূল্যবোধের সঙ্গে আপস না করার নীতি।যত আঘাত আসুক, বাধা আসুক, তিনি এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতেন না। এটা আমাদের জন্য বড় শিক্ষার বিষয়।

তিনি শিক্ষকের মতো ছিলেন 
আবুল কাশেম খান, সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার 

আবুল কাশেম খান
আবুল কাশেম খান

লতিফুর রহমান একজন ভীষণ স্বপ্নদর্শী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি আমাদের ব্যবসায়ী সমাজের সবার কাছে অনুকরণীয় নেতা ছিলেন। আমরা সবাই তাঁর অনুপস্থিতি দারুণভাবে অনুভব করব। ব্যবসা–বাণিজ্য সহজ করার বিষয়ে তিনি সব সময় দিকনির্দেশনা দিতেন। এ ছাড়া মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের বড় ভাইয়ের মতো আগলে রাখতেন। নানা সময়ে পরামর্শ দিতেন।

নতুন প্রজন্মের কাছে লতিফুর রহমান অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। ট্রান্সকম গ্রুপকে তিনি নিজ হাতে এত দূর নিয়ে এসেছেন। নতুন ব্যবসা কীভাবে করতে হয়, তিনি তা জানেন। যখন যে ব্যবসায় নেমেছেন, তাতেই সফল হয়েছেন। নীতিনৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি আমাদের কাছে শিক্ষকের মতো ছিলেন।

অ্যাকুয়াফিনা পানীয় বাজারজাত করার সময় তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি যে প্রকল্পই নেন, তাতে সফল হন কীভাবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখ শেহজাদ (আমার ডাকনাম), আমি প্রথমেই ব্যবসাটি বোঝার চেষ্টা করি। ব্যবসাটি চালু পর্যন্ত আমি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থাকি। চালু হয়ে গেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য পরিচালনাকারীদের হাতে ছেড়ে দিই। সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে তাঁরাই স্বাধীনভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। বোর্ড সভায় আমি মাঝেমধ্যে কিছু দিকনির্দেশনা দিই।’ এভাবেই তিনি ব্যবসা পরিচালনা করেছেন এবং সফল হয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এ দেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। 

নৈতিকতার চর্চা তাঁর থেকে শেখার আছে
আবদুল হালিম চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পূবালী ব্যাংক

আবদুল হালিম চৌধুরী
আবদুল হালিম চৌধুরী

নীতি-নৈতিকতা মেনে চলা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লতিফুর রহমান। তিনি কখনই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন না। নিজের প্রতিষ্ঠান ও দেশ নিয়ে সব সময় ভাবতেন। সেভাবে গড়ে তুলেছেন নিজের প্রতিষ্ঠানগুলো। ওনার হাতে এত প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, কিন্তু কখনো নিজের হাতে পুরো নিয়ন্ত্রণ রাখেননি। সবকিছু পেশাদারদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। এটাকেই বলে করপোরেট কালচার। এর ফলে তিনি চলে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে টিকে থাকবে।

আর নীতি-নৈতিকতা বজায় রেখে ব্যবসা করে কীভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়, তা তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। বেসরকারীকরণের পর পূবালী ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের একজন লতিফুর রহমান। তবে কখনই তিনি ব্যাংকে প্রভাব বিস্তার করেননি। যখন তাদের পক্ষ থেকে ব্যাংকে পরিচালক এসেছে, তার আগেই সব ঋণ শোধ করে দিয়েছেন। তিনি বলতেন, নিজেদের পরিচালক থাকা ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসা করা ঠিক না। এতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। 

তিনি এত বড় ব্যবসায়ী হলেও দেশের বাইরে তাঁর কোনো সম্পদ ছিল না। এমনকি দেশেও নিজের নামে কোনো সম্পদ নেই। বিদেশি কোনো পাসপোর্টও ছিল না তাঁর। তিনি সব সময় দেশের উন্নয়ন নিয়েই ভাবতেন। কীভাবে নৈতিকতার চর্চা করতে হয়, এটা তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে।